বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক 'কৌশলগত অংশীদারত্বে' উন্নীত: প্রধানমন্ত্রী

বুধবার টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2023, 12:24 PM
Updated : 26 April 2023, 12:24 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সফলভাবে ‘কৌশলগত অংশীদারত্বের’ স্তরে উন্নীত হয়েছে।

বাসস জানায়, বুধবার টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওই বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, "প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এবং আমি আজ আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আনন্দিত যে বাংলাদেশ ও জাপান বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সফলভাবে ‘বিস্তৃত অংশীদারত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত করেছে।

“আজ  প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ও আমি ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বর’ ওপর যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দুই দেশের জনগণ এবং আমাদের সরকারের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা আগামী বছরগুলোতে আরও দৃঢ় হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়েছে, তাতে কৃষি, শুল্কায়ন, প্রতিরক্ষা, আইসিটি এবং সাইবার-নিরাপত্তা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল আপগ্রেডিং, মেধাস্বত্ব, শিপ রিসাইক্লিং এবং মেট্রো রেলের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়গুলো ভবিষ্যতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে।

বাসস জানায়, রোহিঙ্গা সঙ্কটের পাশাপাশি মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ (এমআইডিআই), বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি) উদ্যোগ এবং অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতির কারণে স্থানীয় জনগণের জীবন ও জীবিকার ওপর যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

“রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার জন্য আমরা জাপানকে অনুরোধ করেছি।”

চলতি বছরই ঢাকা-নারিতা সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে জানিয়ে শেষ হাসিনা বলেন, এই ঘোষণা দিতে পেরে তিনি ‘খুশি’।

প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে এমআইডিআই ও বিগ-বি উদ্যোগ গ্রহণ এবং বঙ্গোপসাগর ও পাশ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

“আমাদের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন অংশীদার হওয়ায় আমরা জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আগামীতে জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি করার অপেক্ষায় আছি আমরা।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাপান সুন্দর একটি দেশ, আমার হৃদয়ের খুব কাছে। এখানে আসা সব সময়ই আমার জন্য আনন্দের্।

“বিশেষ করে, আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির পর টোকিওতে এই সরকারি সফরে আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।”

শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এবং জাপান সরকারের আতিথেয়তায় তিনি অভিভূত।

“বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে জাপান। যে ক’টি দেশ ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে দ্রুত স্বীকৃতি দিয়েছিল, জাপান তাদের একটি।”

তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক জাপান সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের দীর্ঘ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি রচিত হয়।

শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছালে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ফুমিও কিশিদা। সেখানে লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনার দেওয়া হয় বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

দুই সপ্তাহে তিন দেশ সফরের শুরুতে মঙ্গলবার জাপানে পৌঁছান শেখ হাসিনা; বুধবার তিনি টোকিওর ইম্পেরিয়াল প্যালেসে জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

তার আগে জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি লিগের প্রেসিডেন্ট তারো আসো, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান ও সিইও ইশিগুরো নোরিহিকো, জাইকার প্রেসিডেন্ট তানাকা আকিহিকো, বাংলাদেশ-জাপান কমিটি ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন এর চেয়ারম্যান ফুমিয়া কোকুবু আলাদাভাবে টোকিওর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন আকাসাকা প্যালেসে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

২৭ এপ্রিল টোকিওর একটি হোটেলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) আয়োজিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা।

ওইদিন চার জন জাপানি নাগরিককে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু সম্মাননা’ তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাপান প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।

জাপান সফরের সময় প্রধানমন্ত্রীর আরও কিছু দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি, জেবিক, জেবিপিএফএল, জেবিসিসিইসি’র নেতৃবৃন্দ, জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত শিনজো আবের সহধর্মিণী আকিয়ে আবে এবং জাপানের স্থপতি তাদাও আন্দো সাক্ষাৎ করবেন তার সঙ্গে।

এছাড়া জাপানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

টোকিও থেকে ওয়াশিংটনে গিয়ে ১ মে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।

এরপর সেখান থেকে ৪ মে লন্ডনে গিয়ে রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। সফর শেষে ৯ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।