ডেঙ্গুর হটস্পট মিরপুর ও উত্তরা, মৃত্যু বেশি ঢাকার বাইরে

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কোনো একটি জায়গায় ‘গ্যাপ থেকে যাচ্ছে’ বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2022, 12:19 PM
Updated : 13 Oct 2022, 12:19 PM

রাজধানীর মিরপুর ও উত্তরায় এইডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি; সেইসঙ্গে মুগদা, কেরানীগঞ্জ ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকেও অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে আসছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ঢাকার বাইরেও বেড়েছে মশাবাহিত এ রোগের বিস্তার এবং মৃত্যুও বেশি অন্য জেলায়। একক জেলা হিসেবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে কক্সবাজারে। আর মোট মারা যাওয়াদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি।

এবছর ডেঙ্গুর চার ধরনের মধ্যে দেশে এলাকাভেদে তিনটি ধরন সক্রিয় আছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কোনো একটি জায়গায় ‘গ্যাপ থেকে যাচ্ছে’ বলে মনে করছে অধিদপ্তর।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির।

অধিদপ্তরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৭৬৫ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ৪৯৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ২৬৮ জন।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এটি কমছে না। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

“আমাদের সমস্ত হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার জন্য লোকবল, লজিস্টিকস, জায়গা তৈরি রাখার ওপর জোর দিচ্ছি। সরকারি হাসপাতালে নিয়মিত রোগী ভর্তির পাশাপাশি আবার কত ডেঙ্গু রোগী আসবে তা আমরা জানি না। যে কারণে জায়গা তৈরি রাখছি, কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় ফেরত না যায়।”

একক জেলা হিসেবে কক্সবাজারে ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বছর শুধু এ জেলাতেই ডেঙ্গু ‍নিয়ে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩৬৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

নারী ও ঢাকার বাইরে মৃত্যু বেশি

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং দক্ষিণে মারা গেছেন ৯ জন।

তবে দেশে এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর বেশির ভাগই ঢাকার বাইরের বাসিন্দা। সবশেষ হিসাবে এ রোগে মারা যাওয়া ৭৫ জনের মধ্যে ৪৮ জনই ঢাকা ছাড়া অন্য জেলার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ ডেঙ্গুর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০ বছরের উপরে যাদের বয়স, তাদের আক্রান্তের পরিমাণ বেশি (৬২%)। তবে বয়স্ক রোগীদের মৃত্যু হচ্ছে বেশি। মারা যাওয়াদের এক তৃতীয়াংশের বয়সই চল্লিশের উপরে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাসপাতালে আসার ০-৩ দিনের মধ্যে বেশি মারা যাচ্ছেন। পুরুষের তুলনায় নারীদের মৃত্যু হচ্ছে বেশি। এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া মধ্যে ৪৬ জন নারী ও ২৯ জন পুরুষ রয়েছেন।

দ্বিতীয়বার আক্রান্তরা বেশি ভুগছেন জানিয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল বলেন, “এ বছর আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি যে, রোগীরা হাসপাতালে এসেই শকে চলে যাচ্ছে। ডেঙ্গু রোগটা আমাদের দেশে অনেকদিন ধরে আছে। সবাই কোনো না কোনো স্ট্রেইনে আক্রান্ত হয়েছে।

Also Read: হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ, কষ্টে শিশুরা

Also Read: ডেঙ্গু ফের সারা দেশে ছড়াচ্ছে

Also Read: ডেঙ্গু ঠেকাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে নামছে ভ্রাম্যমাণ আদালত

“দ্বিতীয়বার যখন আক্রান্ত হচ্ছে তখন দেখা যাচ্ছে সে শকে চলে যাচ্ছে। জ্বর কমে যাবার পর কঠিন সময় শুরু হয়, তখন শরীরের তরল ব্যবস্থাপনাটা ঠিকঠাক করতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, “ডেঙ্গুর চারটি ধরন আছে। এর মধ্যে চলতি বছর তিনটি ধরনের সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি, মৃত্যু কিছুটা বেশি হওয়ার পেছনে এই একাধিক ধরনের সক্রিয়তার বিষয়টি কিছুটা দায়ী।”

‘চ্যালেঞ্জ নেই’

ডেঙ্গু সংক্রমণ সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আহমেদুল কবির বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে যে রোগী আছে তা এখনও সামাল দেওয়া যাচ্ছে। পরে রোগী বাড়লে যেন সমস্যা না হয় সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

“সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, বিশেষায়িত হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট, সদর হাসপাতাল সবার সাথে কথা বলেছি। আমাদের কোনো চ্যালেঞ্জ এই মুহূর্তে নেই। যত রোগী আসছে, হাসপাতালগুলো তাদের ভালোভাবে ম্যানেজ করছে।

“আমরা এটি তাদের বলেছি যে, ধরেন যদি কেস বাড়ে আর ডেঙ্গু রোগীর ঝুঁকি যেকোনো সময় আসতে পারে, এটাকে রুটিনভাবে দেখলে চলবে না, দক্ষ লোকবল তৈরি রাখতে হবে, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও তরল জোগাড় করে রাখতে হবে। যদি কারও রক্ত বা প্লাটিলেট লাগে সেই ব্যবস্থা রাখার কথাও বলেছি।”

বেসরকারি হাসপাতালগুলো যেন নিয়ম মেনে রোগী ভর্তি করে এবং রোগীরা যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও জানান অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কোনো একটি জায়গায় গ্যাপ থেকে যাচ্ছে বলে মনে করেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক। তবে তা অধিদপ্তর চিহ্নিত করতে পারছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সরকারি সংস্থা ও সাধারণ মানুষের গৃহস্থালী পর্যায়ে সচেতনার মাঝে সমন্বয়ে গ্যাপ থেকে যাচ্ছে।

“সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। মশার আবাস ধ্বংস করতে পারলে ডেঙ্গুর ক্ষয়ক্ষতিও কমানো যাবে।”

দেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ হাজার ৫১৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ১৬ হাজার ৭৬২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ৭৭৫ জন।

আর চট্টগ্রাম বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন; এর মধ্যে কক্সবাজারেই ১ হাজার ৩৬৮ জন।