“যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেন বা এ ধরনের রাজনীতির পেছনে আছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে,” বলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।
Published : 19 Dec 2023, 06:37 PM
হরতালের মধ্যে রাজধানীতে ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।
মঙ্গলবার আগুনে পোড়া আন্তঃনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস দেখে তিনি বলেছেন, “রাজনীতি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, মানুষ মারার জন্য নয়।”
বিএনপির ডাকা হরতালের মধ্যে নেত্রকোণা থেকে এসে ঢাকায় ঢোকার পথে মঙ্গলবার ভোরে অগ্নি নাশকতার শিকার হয় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। এ ঘটনায় পুড়ে যায় ট্রেনটির তিনটি বগি। একটি বগি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মা ও তার শিশু সন্তানসহ চারজনের লাশ।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কমলাপুরে গিয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি পরিদর্শন করে। আগুনে ৪ জনের মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে কমিশন।
কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এ নৃশংস কাজটি কেন করল সেটি বড় প্রশ্ন। এ ধরনের কাজ করা কোনো রাজনীতি নয়।
“রাজনীতি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, মানুষ মারার জন্য নয়। দেশের সম্পদ নষ্ট করার জন্য নয়। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেন বা এ ধরনের রাজনীতির পেছনে আছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।”
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, রেলে নাশকতার একের পর এক ঘটনা মানুষের মনে উদ্বেগ এবং আশঙ্কা তৈরি করেছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
“নিরীহ ব্যক্তিদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা জঘন্য অপরাধ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আহবান জানায় এবং এরকম অপরাধের সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার আহবান জানায়।”
যাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আমরা এর মধ্যে বুঝতে পারছি, কিছু সংখ্যক লোক অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে যাচ্ছে, নাশকতার মাধ্যমে মানুষকে ভয় দেখাতে চেষ্টা করছে। আমি বলব যাত্রীদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। আমাদের সাহস রেখে যানবাহনে চড়তে হবে।
“একই সাথে নিরাপত্তা বাহিনীকে নজরদারির মাধ্যমে যাত্রীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। ট্রেনে যেমন নজরদারি রাখতে হবে তেমনি লাইনগুলো ঠিকঠাক আছে কী না সেদিকেও দেখতে হবে।”
সম্ভব হলে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রেলপথকে নজরদারির আওতায় আনার পরামর্শ দেন কামাল উদ্দিন আহমেদ।
রেলযাত্রীদের সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “আপনাদের সব সময় অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে যে কোথাও কিছু সন্দেহজনক ঘটছে কী না, কেউ কিছু করছে কী না। রেল পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে অবশ্যই বিশেষ সচেতনভাবে নজরদারির মাধ্যমে আমাদের সম্পদ বিনষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
“২০১৩ সালে এ ধরনের কিছু কর্মকাণ্ড ঘটেছিল। তখন আটটা ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছিল। আমরা কঠোরভাবে নজরদারি করে পরে তা বন্ধ করেছিলাম। তখনকার সময় আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রেল লাইনে কিছু দূর পরপর আমরা নজরদারির ব্যবস্থা করেছিলাম। আমার স্মরণ আছে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের ৮ তারিখের পর আর কোন ট্রেন লাইনচ্যুত হয়নি।”
কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সামনে নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে দেশ। কেউ কেউ নাশকতামূলক বা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করতে চায়। তাদের অবশ্যই বাধা দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং মানুষকে এই হত্যাপ্রেচেষ্টা থেকে রক্ষা করতে হবে। মানুষের মনে আস্থা জাগাতে হবে মানুষ যেন শান্তিপূর্ণভাবে যানবাহনগুলো ব্যবহার করতে পারে।”
কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মো. আশরাফুল আলম এবং পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিকসহ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।