টানা বৃষ্টির মধ্যে রাঙ্গামাটিতে ২৩৫টি জায়গায় পাহাড় ধসের তথ্য দিয়েছেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
Published : 09 Aug 2023, 05:36 PM
কয়েক দিনের টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম বিভাগের বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ৭০ লাখ টাকা, ৭০০ মেট্রিক টন চাল এবং ২১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “টানা পাঁচ দিনের ভারী বর্ষণে পাহাড়ী ঢলের সৃষ্টি হয়েছে। ঢলে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগড়া উপজেলা, কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা, বান্দরবানের রামু উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির কিছু জায়গা প্রবলভাবে প্লাবিত হয়। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।”
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বন্যাদুর্গত এলাকায় সেনা ও নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে এনামুর বলেন, “তারা দুর্গত এলাকার মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে গেছে। সেখানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চলমান আছে। মাঠ প্রশাসন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা উদ্ধার ও মানবিক সহায়তা দিতে কাজ শুরু করছেন।”
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, দুর্যোগ পস্তুতির অংশ হিসেবে গত ৩ জুলাই প্রত্যেক জেলায় আপৎকালীন দুর্যোগ মোকাবেলায় ২০০ টন করে চাল, ১০ লাখ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার মজুত রাখা হয়েছিল।
গত ৭ অগাস্ট চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ১০ লাখ টাকা, ১০০ টন চাল এবং ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে।
বুধবার বন্যাদুর্গত জেলার জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে চকরিয়া, পেকুয়া, লোহাগড়ায় জন্য ১০ লাখ টাকা, ১০০ টন চাল এবং ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়ে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ টাকা, ২১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৭০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছি। সেইসঙ্গে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও পানির বোতল দেওয়া হয়েছে।”
আপাতত নতুন করে আর বন্যার আশঙ্কা নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তার নেতৃত্বে শুক্রবার একটি প্রতিনিধি দল বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যাবে।
বৃষ্টিপাত দেখে পাহাড়ি এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে এনামুর বলেন, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। রাঙ্গামাটিতে ২৩৫টি জায়গায় পাহাড় ধস হয়েছে।
পাহাড় ধসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মা ও এক সন্তান এবং পেকুয়ায় মাটির ঘর ধসে তিনজন মারা গেছেন বলে তথ্য দেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়ার পর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হবে। এরপর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ রাখা হবে, যাতে মাতামুহুরি, সাঙ্গু ও হালদা নদী খনন করা হয়।
৫ জেলায় পানিবন্দি ১১ লাখ মানুষ
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বুধবারের ‘দুর্যোগ সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে’ জানানো হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও ফেনী জেলায় অতিবর্ষণের কারণে জলাবদ্ধতায় অন্তত ১১ লাখ লোক পানিবন্দি রয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ১৪ উপজেলার ১৬২ ইউনিয়ন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়; বেশ কিছু রাস্তাঘাট নিমজ্জিত হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এ জেলায় ২ লাখ ৩ হাজার ৭২টি পরিবারের ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৫০৫ জন এই দুর্যোগে পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
জেলায় ৭৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৭ হাজার ৫১৩ জন মানুষ এবং ৫১৩টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে।
কক্সবাজা্র জেলায় উপদ্রুত উপজেলার সংখ্যা আটটি, পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৫৪,০৫০টি। এ দুর্যোগে জেলায় ২ লাখ ২০ হাজার ২৭০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
কক্সবাজারে ১৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে; ২৮ হাজার ৩৭০ জন মানুষ এবং ৫৭০টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলার ৩৪ ইউনিয়নে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ জেলায় মোট ২০৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং সেখানে সাড়ে ৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
রাঙামাটি জেলায় ৪৬টি ঘর ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এরমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরও রয়েছে। এছাড়া দুটি ব্রিজ-কালভার্ট এবং বিভিন্ন স্থানে পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনটি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
জেলায় ২৩৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে; তাতে আশ্রয় নিয়েছেন ১ হাজার ১৯১ জন। ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা-ঘাট তাৎক্ষণিকভাবে যান চলাচলের উপযোগী করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখা হয়েছে।
ছয় দিনের টানা বৃষ্টিতে ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর বরইয়া এবং উত্তর দরতপুরে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বিজয়পুর, পূর্ব ঘনিয়ামোড়া, দক্ষিণ শ্রীপুর (সদর বাজার) প্লাবিত হয়। প্লাবিত এ এলাকায় প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
এছাড়া পরশুরাম উপজেলায় চিথালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম এলাকায় মুহুরী নদীর আংশিক বাঁধ ভেঙে নোয়াপুর, পশ্চিম অলকা, ধনিকুন্ডা গ্রাম প্লাবিত হয়। প্লাবিত ওই এলাকায় প্রায় ৪০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
জলমগ্ন এ এলাকায় প্রায় ৫০০ হেক্টর ফসলি জমি ও ৩০ হেক্টর সবজি ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ১৯টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।