জাতির পিতার জন্মদিনে নানা আয়োজন

সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতির জন্মবার্ষিকী বাংলাদেশ উদযাপন করবে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2024, 06:42 PM
Updated : 16 March 2024, 06:42 PM

ছোটবেলাতেই রাজনীতি সচেতন ছিলেন যে খোকা, কালের পরিক্রমায় তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে যোগ হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের নাম। বাঙালির সেই অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ১০৪তম জন্মবার্ষিকী রোববার। 

সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতির জন্মবার্ষিকী বাংলাদেশ উদযাপন করবে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও। 

বঙ্গবন্ধুর জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সাধারণ এক পরিবারে। পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুনের ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় তিনি। গ্রামীণ আবহেই বেড়ে ওঠেন চার বোন এবং দুই ভাইয়ের সান্নিধ্যে। ছোট বেলা থেকেই তার সমাজ ও রাজনীতি সচেতন হওয়ার দৃষ্টান্তের দেখা মেলে। কিশোর বয়সেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিতে শুরু করেন। 

পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে মুক্তির দিশারী হিসেবে জন্ম নেওয়া ‘খোকা’ নামের সেই শিশুটি শিক্ষা, জীবনবোধ, সততা, সাহস ও দূরদর্শীতায় হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেই। 

গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রা। আন্দোলনের পথে জীবনের ১৪টি বছর তার কেটেছে পাকিস্তানের কারাগারে, দুইবার ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু আত্মমর্যাদা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কখনো মাথা নত করেননি, পরাজয় মানেননি। 

দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু তার সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং পরে ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন। একে একে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয়-দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। 

মুক্তির অদম্য স্পৃহায় উদ্বুদ্ধ করে তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার চূড়ান্ত সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন, ঘোষণা করলেন-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ 

তার সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপোষহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে পুরো জাতি। মুক্তিযুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় বাঙালির জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ। 

তবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি খুব বেশিদিন তার সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার কাজ করে যেতে পারেননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের কালরাত্রিতে বিশ্বাসঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। 

বছরঘুরে আবার এসেছে সেই মহানায়কের জন্মবার্ষিকী। দিনটি উদযাপনে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে সরকারি, দলীয় ও অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। 

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। 

জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি উপলক্ষে তারা পৃথক বাণী দিয়েছেন। 

রোববার সকালে হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছাবেন তারা। এরপর প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ অগাস্টে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেবেন তারা। 

এরপর রাষ্ট্রপতিকে বিদায় জানিয়ে সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সের ১ নম্বর গেটে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত শিশু দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির নেওয়া হয়েছে। 

সরকারি বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। 

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি 

জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী ও শিশু দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। 

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে রোববার সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। 

এরপর সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় নেতারা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে দলীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। 

এছাড়া পরদিন সোমবার সকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে দলের পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে সারাদেশে যথাযথ মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্ম বার্ষিকী ও শিশু দিবস উদযাপনের জন্য দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।