“আমরা সরকারকে জানিয়েছি যাতে অতি দ্রুত একজন চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। তাহলেই গতি ফিরে পাবে ইউজিসি,” বলেন কমিশন সচিব।
Published : 03 Sep 2024, 02:39 PM
শীর্ষ কর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে টালমাটাল দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরসহ অন্য সদস্যরা আসতে পারছেন না অফিসে। তাই জরুরি কাজগুলো অনলাইনেই সারতে হচ্ছে। কমিশনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরসহ বাকি সদস্যেদের পদত্যাগের দাবি করছে বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী সমাজ এবং কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে রোববার বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী সমাজের ব্যানারে বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা কর্মসূচি পালন করেন ইউজিসির সামনে। সেখানে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া ইউজিসির অন্য সদস্যদেরও সরানোর দাবি জানান।
কমিশনের এক নিরাপত্তাকর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শনিবারও অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে দেখেছি আন্দোলন করতে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে গেছে যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দিতে হবে। অন্য সদস্যদেরও ইউজিসিতে আসতে নিষেধ করে গেছে।”
৫ অগাস্টের পর মাত্র দুবার অফিসে এসেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর। ১২ অগাস্টের পর একবারও আসেননি।
ইউজিসিতে একজন চেয়ারম্যান এবং পাঁচজন পূর্ণকালীন সদস্য রয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১১ অগাস্ট চেয়ারম্যান পদ থেকে অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ পদত্যাগ করেন। অবশ্য অসুস্থতাজনিত কারণে গত এক বছর ধরেই তিনি দেশের বাইরে আছেন।
আগে থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করে আসা ইউজিসির পূর্ণকালীন পাঁচ সদস্যের একজন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরকে ২৭ অগাস্ট পুনরায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ইউজিসির বাকি সদস্যরা হলেন– ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ্র চন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো কেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খান এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন।
এর মধ্যে বিশ্বজিৎ চন্দ্র চন্দের চার বছরের মেয়াদ সোমবার শেষ হয়েছে। সরকার পতনের পর বিশ্বজিৎ চন্দ্র চন্দ ও মো. সাজ্জাদ হোসেন আর অফিসে আসেননি। তবে অধ্যাপক হাসিনা খান ও অধ্যাপক জাকির হোসেনকে মাঝেমধ্যে অফিসে আসতে দেখা গেছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর ১২ অগাস্ট শেষবার অফিসে এসেছিলেন। ২৪ অগাস্ট তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর চারদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। এখন তিনি বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার কমিশনের একটি বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। রোববার তার অফিসে আসার কথা থাকলেও আসেননি। সোমবার দুপুরেও কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি মিটিংয়ে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
সোমবার দুপুরে ইউজিসি ভবনে দেখা গেছে অধ্যাপক হাসিনা খান ও অধ্যাপক মো. জাকির হোসেনকে। সচিব মো. ফখরুল ইসলামের সঙ্গে অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সে সময় অধ্যাপক হাসিনা খানের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শেষে বের হতে দেখা যায়। তখন বেশ থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছিল।
অধ্যাপক হাসিনা খানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তার সহকারী আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলেন। অপেক্ষা শেষে অবশ্য সহকারীর মাধ্যমে হাসিনা খান জানান, সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলতে রাজি নন।
ইউজিসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মুহিবুল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুই সংগঠন থেকে শান্তিপূর্ণভাবে হাসিনা ম্যামের কাছে গিয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে ম্যাম যেন আর এখানে না আসেন সেই অনুরোধ করেছি। উনি বাসায় বসেই অফিস করুক।
“উনারা সম্মানিত মানুষ। তাই সম্মানহানি না হোক সেটাই চাই। সেজন্যই বিনয়ের সঙ্গে বলেছি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। গতকাল প্রকৌশলী পেশাজীবীরা এসে হুঁশিয়ার দিয়ে গেছে, যাতে আগের সরকারের দোসর কেউ দায়িত্বে না থাকতে পারে।”
তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর দাবি করেন, তাকে এখনও কেউ পদত্যাগ করতে বলেনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলন, “ডেঙ্গুর চিকিৎসা শেষে এখন আমি রেস্টে আছি। ইউজিসির কাজকর্ম অনলাইনেই করছি। যারা এসব করছে তাদের ব্যাপারে আমার বলার কিছু নাই।”
দাবির মুখে পদত্যাগ করবেন কিনা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “না না, এটা তো আনএক্সপেক্টেড। এটা ইউজিসির ইতিহাসে কখনও ঘটেনি। আমরা তো আবেদন করে ইউজিসিতে আসি নাই। আমি ১৮ তারিখ দায়িত্ব থেকে সরে যেতে চিঠি দিয়েছিলাম। এরপর ২৭ তারিখ আবার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মন্ত্রণালয় আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে যে নতুন দায়িত্ব কাউকে দেওয়ার আগ পর্যন্ত জাস্ট আমাকে রুটিন দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। আর আমি মেম্বার হিসেবে তো আছিই।”
ইউজিসির সচিব মো. ফখরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেহেতু আসছেন না, তাই অফিসের বিভিন্ন কাজে একটু স্থবিরতা আছে, এটা সত্য। তবে অতি জরুরি কাজগুলো ডি-নথি, মানে ইলেকট্রনিক ফাইলিং সিস্টেমের মাধ্যমে করা হচ্ছে। আর যেটা বাসায় নেওয়া দরকার, সেটা বাসায় নিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। তবে অনেক সিদ্ধান্তের ব্যাপার আছে যেগুলো হয়ে উঠছে না। দেশের এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করে ইউজিসি, অথচ এখানে এই অবস্থা চলমান।”
সচিব বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ২৪ তারিখের দিকে চার দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। উনি প্রতিদিন বলেন আসবেন আসবেন, আমরাও অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু আসেন না। আবার উনি যেন না আসেন সেজন্যও বিভিন্ন মহলের বেশ চাপ আছে।
“আমরা সরকারকে জানিয়েছি যাতে অতি দ্রুত একজন চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। তাহলেই গতি ফিরে পাবে ইউজিসি।”