পুলিশের ধারণা, গৃহকর্মী ওই শিশু নির্যাতনের কারণে মারা গেছে।
Published : 28 Feb 2023, 07:34 PM
মেয়েকে ঢাকার এক বাড়িতে কাজে দিয়েছিলেন পঞ্চগড়ের এক ব্যক্তি; হঠাৎ গৃহকর্ত্রীর কাছ থেকে খবর পেলেন, মেয়ে অসুস্থ। বাড়ি থেকে ছুটে এসে ১০ বছরের মেয়েটির মৃত্যুর খবর পেলেন তিনি।
লাশ বাড়িতে নিয়ে যেতে চাপ দিচ্ছিলেন গৃহকর্ত্রী, কিন্তু লাশই পাচ্ছিলেন না ওই ব্যক্তি। একদিন ঘুরে তিনি ৯৯৯ এ খবর দিলে পুলিশ হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে একটি ফ্রিজার ভ্যান থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের পর মেয়ের শরীরে অসংখ্য জখম দেখে শিউরে ওঠেন এই বাবা।
শিশুটির নাম নাদিয়া। তার বাবা নাজিমউদ্দীন মামলা করার পর গৃহকর্ত্রী ফরহাদ বাঁধন মৌকে (৬৯) গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশের ধারণা, নির্যাতনের কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। এবিষয়ে গৃহকর্ত্রীর কোনো বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।
শিশুটির বাবা নাজিমউদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাত বছর আগে বড় মেয়েকে মৌয়ের ওই বাসায় কাজে দিয়েছিলেন তিনি। ওই শিশুটির বয়স এখন ১৪ বছর। বছর দেড়েক আগে ছোট মেয়েকে ওই বাড়িতে দেন।
শিশু দুটিকে কাজের জন্য কোনো বেতন দেওয়া হত না জানিয়ে নাজিমউদ্দীন বলেন, “ম্যাডাম (মৌ) বলছিল, তোর মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিব আর তোর ঘর-বাড়ি করে দেব। কিন্তু গত সাত বছরে ম্যাডাম একটা টাকাও দেয় নাই।”
গত রোববার সকালে মৌয়ের ফোন পান নাজিমউদ্দীন। জানেন যে নাদিয়া অসুস্থ। খবর পেয়েই পঞ্চগড় থেকে রওনা হন তিনি, রোববার রাতে পৌঁছান ঢাকায়। কিন্তু ওই বাসায় গিয়ে তিনি মৌকে পাননি।
নাজিম বলেন, তখন গৃহকর্ত্রী মৌকে ফোন করে জানেন যে নাদিয়া মারা গেছে।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, তখন গৃহকর্ত্রী তাকে তিনি টাকা দিতে চাইছিলেন, নাদিয়ার লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
কিন্তু মেয়েকে না পেয়ে সোমবার ৯৯৯ ফোন করে পুলিশের দ্বারস্থ হন নাজিম। এরপর পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে রাখা একটি ফ্রিজারভ্যান থেকে লাশটি উদ্ধার করে শাহজাহানপুর থানায় নেয়।
থানা প্রাঙ্গণে শিশুটির লাশের বাহ্যিক অবস্থা দেখে প্রতিবেদন (সুরতহাল) তৈরি করেন শাহজাহানপুর থানার এসআই সোহেলি আক্তার। তাতে বলা হয়েছে, শিশুটির মাথার উপরি ভাগে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। কপালের ডান অংশে আঁচড়ের দাগ, বাম কানের পেছনে কাটা দাগ দেখা যায়। ডান গালে কালো লালচে থ্যাতলানো ফোলা জখম, নাক-মুখে লালা ও রক্ত বের হওয়ার আলামত রয়েছে। বুক-পেটের বিভিন্ন অংশে লালচে কালো দাগ রয়েছে। পিঠের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া উঠে গেছে, কাফনের কাপড় পিঠের চামড়ার সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে। দুই কাঁধ ও হাতের বিভিন্ন জায়গায় ফোলা ও চামড়া ওঠানো দাগ রয়েছে। বাম বগলের নিচে ফোস্কা পড়েছে, সেখানে পানি জমে রয়েছে। তলপেট ও নিতম্বেও চামড়া ওঠানো দাগ রয়েছে।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে বলেই প্রাথমিক ধারণা। তার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার রাতেই একটি হত্যা ও লাশ গুমের চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় গৃহকর্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে রিমান্ডে আনা হয়েছে।”
নাদিয়ার বড় বোনও ওই বাড়িতে ছিল, তারও ভাষ্য শুনেছে পুলিশ।
হায়াতুল বলেন, “সেই কিশোরী ও গৃহকর্ত্রীর ভাষ্যে পরস্পরবিরোধিতা পাওয়া যাচ্ছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।”
নাদিয়াকে নিয়ে তার বড় বোন কিছু বলেছে কি না- জানতে চাইলে শিশু দুটির বাবা নাজিম বলেন, “মেয়েটা (বড় বোন) আমার এই নিয়ে কোনো কথাই বলতেছে না। ওর বোনকে কে এমন করে মারল, ও কিছুই বলে না। কোনো কথাই বলতে চায় না। আমরা ওকে রেখেই ছোট মেয়েকে দাফন করতে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।”