শিক্ষায় বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দাবি

“পঞ্চম- অষ্টম শ্রেণির যে পরীক্ষা উঠে গেছে, আমরা চাই- সেটা আবার ফিরে না আসুক," কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2024, 05:04 PM
Updated : 28 March 2024, 05:04 PM

আগামী অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা সহস্রাধিক বেসরকারি সংস্থার মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযান।

বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শিক্ষায় ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট: আমাদের প্রত্যাশা' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়।

গত ৮ বছরের বাজেটের চিত্র তুলে ধরে গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “শিক্ষাখাতের বাজেট একই বৃত্তে আটকে আছে৷ যেখান থেকে বের হওয়া প্রয়োজন। এর বাইরে আমরা শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দিতে পারছি না৷ যেটি পাওয়া যাচ্ছে সেটি কম, ব্যবহার করা হচ্ছে আরো কম। বাজেট দিলেই হবে না, ব্যবহারের যে সক্ষমতা সেখানে হাত দিতে হবে৷

“গত অর্থবছরে শিক্ষা খাতের ১১৮টি প্রকল্পে ২৯ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল৷ রিভাইজ বাজেটে সেটা হয়েছে ১৭ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা।" 

চলতি অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বাজেটের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই হার ১২ দশমিক ১ শতাংশ, এর আগের অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ৷ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঘোষিত ইশতেহারের প্রসঙ্গ টেনে মোস্তাফিজুর বলেন, “শিক্ষাখাতে যথাযথ অর্থায়ন করাসহ শিক্ষকদের উপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল সেখানে৷ এগুলোর শতভাগ না পারলেও, ৬০-৮০ ভাগ পালন করা হলেও শিক্ষার নতুন চিত্র আমরা দেখতে পাব৷" 

শিক্ষার্থীদের মাসিক উপবৃত্তি অন্তত ৫০০ টাকা করা, প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য দুপুরে টিফিনের ব্যবস্থা করা, শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবি তিনি তুলে ধরেন।

আলোচনায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশ নেন৷ 

১৫ বছর বয়সে বাল্যবিয়ের শিকার হওয়া হাজারীবাগের কানিজ ফাতিমা বলেন, বাবা দিনমজুর ও মা গৃহকর্মী হওয়ায় সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর বন্ধ হয়ে যায় তার পড়াশোনা৷ পরবর্তীতে ‘নিরাপত্তাজনিত’ কারণে তাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়৷ 

তিনি পড়তেন মিরপুর-১ নম্বরের রাবেয়া প্রি ক্যাডেট অ্যান্ড হাই স্কুলে৷ 

ফাতিমা বলেন, “বাবার আয় কম থাকায় টানাটানির সংসার ছিল। উপবৃত্তিও পেতাম না, পেলে পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারতাম৷ তখন বাড়িতে একা থাকতে হত। এখন নিজের প্রচেষ্টায় আবার পড়াশোনা শুরু করেছি।"

শ্যামলী শিশুপল্লীর তত্ত্ববধায়ক শিরিনা বেগম বলেন, “আমাদের যুবকদের শিক্ষাবৃত্তি চালু করলে ভালো হয়৷ আর সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর তালিকায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে তারা প্রতিষ্ঠানে বড় না হয়ে সমাজভিত্তিক পরিচর্যায় বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।"

উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানান শেরেবাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসাইবা ইসলাম নিশি৷ 

“টাকা খুবই কম৷ খাতা কিনেই শেষ হয়ে যায়। যাবতীয় জিনিসগুলো কিনতে পারি না।" 

এ দাবিকে যৌক্তিক মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীও। 

তিনি বলেন, “সরকারকে সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ সরকারের কাছে এটা পৌঁছানোর চেষ্টা করব।"

শিক্ষাখাতের বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, “শতাংশ হিসেবে দেখলে কম মনে হবে, কিন্তু টাকার অঙ্কে হিসাব করলে আবার বেশি৷ আশা করি, সরকার সামনে বাড়াবেন।"

নির্ধারিত বাজেট কেন খরচ করা যাচ্ছে না, সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

তিনি বলেন, “দক্ষতার অভাবে নাকি অন্যকোনো জায়গায় সমস্যা- সেটা বের করতে হবে৷ সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতার জন্য যদি ফেরত যায়, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। 

“তবে অনেক সময় মামলা ও বিভিন্ন সামাজিক কারণেও অর্থ ব্যয় করা যায় না।"

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক এই সচিব বলেন, নতুন কারিকুলাম নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সবাইকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবহিত করা প্রয়োজন। 

“কেন এই কারিকুলাম করা হয়েছে, সে যুক্তি মানুষকে জানাতে হবে৷ কারণ মানুষ পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে পারে না৷" 

‘বাল্যবিয়ের মূল কারণ সহিংসতা’

দেশের ৪১ শতাংশ নারী বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম৷ এটি বন্ধ করতে না পারলে ছাত্রীদের ঝরে পরা রোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি৷ 

“নারীর প্রতি সহিংসতা এখানে মূল কারণ৷ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতনমুক্ত পরিবেশ দিতে না পারলে, নারীদের শিক্ষার সুযোগ কমে আসবে। এ জায়গায় নজর দিতে হবে।" 

শিক্ষা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধের পরামর্শ 

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। 

তিনি বলেন, “আজকে পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা হবে, কয়েকদিন পরে হবে না। এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা যদি চলতে থাকে- তাহলে তো মানসম্মত শিক্ষা হতে পারে না৷ 

“একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না, বিনামূল্যে শিক্ষা কীভাবে হবে? এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হওয়া উচিত৷ পঞ্চম- অষ্টম শ্রেণির যে পরীক্ষা উঠে গেছে, আমরা চাই- সেটা আবার ফিরে না আসুক।"