ফয়সাল আলীসহ দুজন চুল ছোট করে সনাতন ধর্মাবলম্বী সেজে চট্টগ্রামের একটি কালী মন্দির আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
Published : 03 Jul 2024, 11:59 PM
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা ‘স্বীকার করে’ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের একটি মন্দির থেকে গ্রেপ্তার ফয়সাল আলী সাজি।
ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেন বুধবার বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তার খাসকামরায় ফয়সালের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
ছয় দিনের রিমান্ড শেষে এদিন তাকে আদালতে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান।
আলোচিত এ মামলাটিতে এ নিয়ে ছয়জন ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ দিলেন বলে সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কমর্কর্তাএস আই জালাল আহমেদ জানান।
ফয়সালের একদিন আগে মঙ্গলবার একই বিচারকের কাছে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার ‘স্বীকার করে’ জবানবন্দি দেন গ্রেপ্তার মোস্তাফিজুর রহমান। এ দুজনকে গত ২৬ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে পাতাল কালী মন্দির থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
পুলিশ জানায়, পরিচয় আড়াল করতে চুল ছোট করে সনাতন ধর্মাবলম্বী সেজে তারা মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গ্রেপ্তারের পরদিন দুজনকে ১০ দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করলে আদালত তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে তারা দুজনেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন।
এর আগে আদালতে জবানবন্দি দেওয়া অন্যরা হলেন- সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া, সেলেস্টি রহমান, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু।
এর মধ্যে মিন্টু ছাড়া চারজনই দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
আনার হত্যায় এর বাইরে ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন কসাই জিহাদ হাওলাদার এবং নেপালে ধরা পড়েন সিয়াম। সিয়ামকে পরে ভারতের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান আনোয়ারুল আজীম আনার। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।
হত্যাকাণ্ডের খবরের দিনই তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন শেরেবাংলা নগর থানায় তার বাবাকে খুনের উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার ‘হোতা’ তার বাল্যবন্ধু ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ঝিনাইদহের আখতারুজ্জামান ওরফে শাহীন মিয়া। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল। আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য আখতারুজ্জামানের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ গত ২৪ মে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সংসদ সদস্যকে হত্যার পর শরীরের বিভিন্ন অংশ টুকরো করে হলুদ লাগিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয় বলে গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পেরেছেন। ফলে লাশ উদ্ধার করা কঠিন।
পরে কলকাতার ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে মাংসের টুকরা উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেগুলো ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়।
পুরনো খবর-
আনার হত্যা: ‘হিন্দু পরিচয়ে’ মন্দিরে থাকছিলেন গ্রেপ্তার দুজন
এমপি আনার হত্যা: এবার জবানবন্দিতে মোস্তাফিজুরের ‘স্বীকারোক্তি’
আনার হত্যা: জবানবন্দিতে তানভীরের ‘স্বীকারোক্তি’
আনার হত্যা: ফয়সাল-মুস্তাফিজুর ৬ দিনের রিমান্ডে
আনার হত্যা: বাবুসহ চারজনের মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ
আনার হত্যা: আওয়ামী লীগ নেতা বাবুর 'স্বীকারোক্তিমূলক' জবানবন্দি
এমপি আনার হত্যা: ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগ নেতা বাবু রিমান্ডে