এ নিয়ে গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে পাঁচজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
Published : 02 Jul 2024, 10:19 PM
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আরেকজন ১৬৪ ধারায় ‘দায় স্বীকার’ করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার এ মামলার আসামি মোস্তাফিজুর রহমান অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে ’স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দি দেন।
এ নিয়ে কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে জবানবন্দি দিলেন।
এদনি মোস্তাফিজকে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে আসেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। তিনি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
পরে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের খাস কামরায় দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আসামির জবানবন্দি নেওয়া হয়।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকতা এস আই জালাল আহমেদ বলেন,জবানবন্দি রের্কডের পর মোস্তাফিজকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
এর আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে পাতাল কালী মন্দিরে পালিয়ে থাকা মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল আলী সাজি নামে দুজনকে গত ২৬ জুন গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল।
তারা তাদের পরিচয় আড়াল করতে চুল ছোট করে সনাতন ধর্মাবলম্বী সেজে
সেখানকার ওই কালী মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরদিন আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে ডিবি পুলিশ।
শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. আতাউল্লাহ তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন।
এ মামলায় এর আগে সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া, সেলেস্টি রহমান, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তাদের মধ্যে মিন্টু ছাড়া চারজনই দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।
গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার। তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়।
এরপর ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
পরে ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশের পুলিশ শিমুল ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমানকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ‘হোতা’ শাহীন নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কলকাতার পুলিশ জিহাদ হাওলাদার নামে এক কসাইকে গ্রেপ্তার করেছে। আর শাহীনের সহকারী সিয়াম হোসেন কাঠমান্ডুতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে নেপালের পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে সিয়ামের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে নিয়ে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার থানা এলাকার কৃষ্ণমাটিতে বাগজোলা খালে নামে কলকাতার সিআইডি। পরে একটি ঝোপের পাশ থেকে বেশ কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়।
কলকাতার সিআইডি পুলিশের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম লিখেছে, আনারকে খুনের পর নিউ টাউনের বাসা থেকে তার শরীরের টুকরো টুকরো করা মাংস ট্রলি সুটকেসে ভরে বাগজোলা খালে ফেলে দিয়েছিল সিয়াম। সঙ্গে ছিল এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদার। খালে মাংস ফেলে আবার নিউ টাউনের বাসায় ফিরে যান সিয়াম।
এর আগে কলকাতার ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকেও মাংসের টুকরা উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেগুলো ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। পরে জানানো হয়, উদ্ধার করা মাংসের টুকরা ও হাড়গোড় পুরুষ মানুষের।
আরও পড়ুন:
আনার হত্যা হিন্দু পরিচয়ে মন্দিরে থাকছিলেন গ্রেপ্তার দুইজন
আনার হত্যা: ফয়সাল-মুস্তাফিজুর ৬ দিনের রিমান্ডে
আনার হত্যা: বাবুসহ চারজনের মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ
আনার হত্যা: আওয়ামী লীগ নেতা বাবুর 'স্বীকারোক্তিমূলক' জবানবন্দি
এমপি আনার হত্যা: ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগ নেতা বাবু রিমান্ডে