“হত্যার পর তারা বাংলাদেশে এসেছে। আসার পর তারা হত্যাকাণ্ডের ছবি শেয়ার করেছে কি না, তদন্ত করছি,” বলেন হারুন অর রশীদ।
Published : 11 Jun 2024, 08:48 PM
এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ছবি ঝিনাইদহের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে পাঠানোর যে খবর বেরিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখার কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেছেন, “হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে ভারতের মাটিতে। সেখান থেকে মোটা দাগে যে সকল অপরাধী ছিল, সবাই কিন্তু বাংলাদেশি। হত্যার পর তারা বাংলাদেশে এসেছে। আসার পর তারা হত্যাকাণ্ডের ছবি শেয়ার করেছে কিনা, এটা আমরা তদন্ত করছি।
“এসব ছবি শেয়ার করে তারা কারো কাছ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে কিনা এবং কাদের কাছ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে- এসব কিছুই আমরা তদন্ত করে দেখছি। আপনারা (সাংবাদিকরা) যেগুলো বলছেন, এগুলো আমরাও শুনেছি, তদন্ত করছি।”
ঢাকার মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন হারুন অর রশীদ।
আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে বাবুকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
বাবুসহ এর আগে গ্রেপ্তার চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া, তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও সেলেস্টি রহমানের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ফোনগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ডিবির আবেদনে বলা হয়, আনারকে খুনের পর শিমুল, বাবু, তানভীর ও সেলেস্টি নিজেদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন রকম তথ্য আদান-প্রদান করেছেন। এ ছাড়া আসামিদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এবং মোবাইলে থাকা ছবি, ভিডিওসহ অপহরণ ও খুন-সংক্রান্ত কোনো তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে কি না, সেটি জানা প্রয়োজন।
হারুন অর রশীদ বলেন, “শিমুল ভুঁইয়া ওরফে আমানউল্লাহ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। অন্য দুজনও (তানভীর ও সেলেস্টি) দিয়েছে। সকল তথ্য-উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করে আমরা মনে করেছি যে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগ নেতা বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে এনেছি। তার রিমান্ড চলছে, তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি।”
গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার। তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়। এরপর ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এরপর ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশের পুলিশ শিমুল ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমানকে গ্রেপ্তার করে। তারা ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ‘হোতা’ আখতারুজ্জামান শাহীন নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে পুলিশের ভাষ্য। তার ব্যবহৃত দুটো গাড়ি জব্দের কথাও জানিয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার হারুন।
অন্যদিকে কলকাতার পুলিশ জিহাদ হাওলাদার নামে এক কসাইকে গ্রেপ্তার করেছে। আর শাহীনের সহকারী সিয়াম হোসেন কাঠমান্ডুতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে নেপালের পুলিশ।
সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদে কলকাতার সিআইডি এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বড় ধরনের তথ্য পেয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে। সিয়ামকে নিয়ে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার থানা এলাকার কৃষ্ণমাটিতে বাগজোলা খালে নামে কলকাতার সিআইডি। পরে একটি ঝোপের পাশ থেকে বেশ কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, “মূল যে পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান বাংলাদেশ থেকে দিল্লি, কাঠমান্ডু, দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। যেহেতু তার যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট (নাগরিকত্ব) রয়েছে। তাকে আমরা ধরতে না পারলেও মোটামুটি বাকি আসামিদের সম্পর্কে আমরা তথ্য পেয়েছি, অনেককে আমরা গ্রেপ্তারও করেছি। ভারতেও একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন জিহাদ। আরেকজন (সিয়াম) ছিলেন নেপালে। আমাদের পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবির মাধ্যমে যোগাযোগ করলে কাঠমান্ডুর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। সেই সিয়াম এখন ভারতের পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
“এই মামলার মূল পার্টটা ভারতে। যেহেতু আপনারা জানেন আনারকে হত্যা করে পৈশাচিক কায়দায় গুম করার উদ্দেশে, ঠাণ্ডা মাথায় আনারের শরীরের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়ার যে মূল কাজটি সেটি করেছে সিয়াম। আমরা শুনেছি তারা তাকে নিয়ে কিছু অংশ (দেহাংশ) উদ্ধারও করেছে।”
কলকাতার যে ভবনটিতে আনারকে হত্যা করা হয়, সেই সঞ্জীভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংকে পাওয়া মাংসের টুকরো এবং বাগজোলা খালের পাশে পাওয়া হাড় মানুষের এবং একজন পুরুষের বলে ফরেনসিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে কলকাতার সিআইডি। এখন সেগুলো আনারের কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাইবেন তদন্ত কর্মকর্তা।
ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনসহ স্বজনরা কলকাতায় যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার এমপি আনারের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগে ডিবি আমাদের বলেছিল ভারতে মাংসের টুকরোগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা শেষ হলে তারা আমাদের জানাবে, এরপরে আমরা উনার মেয়েসহ ডিএনএ টেস্টের জন্য কলকাতায় যাব। ডিবি থেকে ফরেনসিক রিপোর্টের বিষয়ে আমাদের এখনও কিছু জানায়নি।”
তবে সংবাদমাধ্যমে আসা খবরের বরাতে আব্দুর রউফ বলেন, “আমরা পত্রিকায় দেখছি যে উদ্ধার করা মাংসের টুকরোগুলোকে তারা মানুষের এবং পুরুষ মানুষের দেহাংশ হিসেবে শনাক্ত করেছে। তারা মূলত সঞ্জীভা গার্ডেন থেকে উদ্ধার করা মাংসের টুকরোগুলোর ফরেনসিক টেস্ট সম্পন্ন করেছে বলে আমরা জেনেছি।
“এখন বাগজোলা খাল থেকে যে হাড়গোড়গুলো উদ্ধার করা হয়েছে সেটির ফরেনসিক টেস্ট সম্পন্ন হলে তারা আমাদের ডাকবে বলে আমরা মনে করছি। তবে এ বিষয়ে অফিসিয়ালি কেউ (ডিবি) কিছু জানায়নি।”
পরিপূর্ণ না জেনে কিছুই বলা উচিৎ না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আনার হত্যাকাণ্ডে ঝিনাইদহের স্থানীয় ‘আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার’ খবরের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “এখনও মামলাটির তদন্ত চলছে। এই অবস্থায় আমি মন্ত্রী বা আমাদের আইজিপি কারোরই পরিপূর্ণ না জেনে কিছু বলা উচিৎ না। তদন্ত পরিপূর্ণ হলে আমরা এটা নিয়ে বলব।”
আনার হত্যার পর চোরালানে সংশ্লিষ্টতার প্রশ্ন উঠেছিল- এক সাংবাদিক এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে কখনোই বলা হয়নি যে চোরাচালানে কোনো রাজনীতিক…। আমরা সবসময় বলে আসছি উনি যেই এলাকার এমপি, সেটা একটা সন্ত্রাসকবলিত এলাকা, সেখানে কী হয়েছে সেটা আমাদের জানতে হবে। আমরা এখন তদন্ত করছি।”