মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরও বেশি আলোচনার ‘পরামর্শের’ প্রসঙ্গে এ কথা বলেন তিনি।
Published : 18 Apr 2024, 10:49 PM
নিকট প্রতিবেশী দেশ হয়েও অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে জড়িত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনায় সম্পৃক্ত না হওয়ার কারণ তুলে ধরলেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার ঢাকার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, এক বন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে আরেক বন্ধুর শত্রু হতে পারে বাংলাদেশ।
‘প্রতিরক্ষা কূটনীতি’ নিয়ে ওই সেমিনারে তিনি বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরও বেশি আলোচনায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ এবং সংঘাত প্রশমনে কিছু করা যায় কি না সে বিষয়ে পরামর্শ ছিল।
“বাস্তবে আমাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং যা করার আমরা তাই করি। তবে আপনারা জানেন মিয়ানমারের কিছু সামরিক নেতার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আপনি যখন সেটা (সম্পৃক্ত হওয়া) করতে যাবেন, তখন আমাদেরকে বিরোধের মধ্যে ফেলে দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
“কেননা সবাই আমাদের বন্ধু। সুতরাং এক বন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে আমরা আরেকজনকে শত্রুভাবাপন্ন করতে পারি না। তাই এই বিশেষ দিকের প্রতি আমাদেরকে নজর দিতে হবে।”
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। কিন্তু এর কিছুদিন পর থেকেই দেশটির পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে এবং জান্তা সরকারের হাত থেকে ধীরে ধীরে ক্ষমতার লাগাম বেরিয়ে যাচ্ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে জান্তা বিরোধীরা দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলে আগে থেকেই সক্রিয় নানা আদিবাসী বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট গঠন করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে।
বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে যাওয়া এ যুদ্ধে তারা বেশ খানিকটা অগ্রসর হয়েছে এবং দেশটির বেশ কয়েকটি সীমান্ত অঞ্চল ও শহরের দখল পেয়েছে। যুদ্ধের কারণে বহু বেসামরিক মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
সংঘাতের জেরে কয়েক দফায় পালিয়ে এসে মিয়ানমার সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৬০ জন সদস্য বর্তমানে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবির হেফাজতে আছেন। তাদেরকে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এর আগে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন; যাদের ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার বিআইআইএসএসের মিলনায়তনে ‘প্রতিরক্ষা কূটনীতি: বাংলাদেশের জন্য কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারের আলোচনায় মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার যে পরামর্শ আসে, সেটির সূত্র ধরে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরলেন সেনাপ্রধান।
এক্ষেত্রে প্রায়োগিক সহযোগিতার বিষয় বিবেচনার পরামর্শ দিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, “একই সময়ে আমাদেরকে প্রায়োগিক সহযোগিতার বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। আমি নিশ্চিত করতে চাই, আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।”
বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান এএফএম গওসোল আযম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবু বকর সিদ্দিক খান বক্তব্য দেন।