চিকিৎসকরা বলছেন, তারা ভালো আছেন, অস্ত্রোপচার করা চোখে দৃষ্টি ফিরতে কিছুদিন সময় লাগবে।
Published : 23 Apr 2024, 06:50 PM
বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশের দান করা কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে মশিউর রহমান এবং আবু কালাম নামের দুইজনের চোখে।
শিব নারায়ণ দাশ গত শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান। ৭৮ বছর বয়সী জাসদ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার দেহ বিএসএমএমইউতে এবং কর্নিয়া সন্ধানীতে দান করা হয়।
শনিবার তার দান করা দুটি কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয় চাঁদপুরের আবুল কালাম (৩৫) ও রংপুরের মশিউর রহমানের (২১) চোখে।
মশিউর রহমানের চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করেন বিএসএমএমইউর চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাজশ্রী দাস। আর সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে আবুল কালামের চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করেন ডা. শীশ রহমান।
রোববার দুজনের চোখের ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়ার পর ওইদিনই বাড়ি ফিরেছেন আবুল কালাম। আর মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে বাসায় গেছেন মশিউর।
চোখের আলো ফিরে পাওয়া আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১২-১৩ বছর আগে একটি কারখানায় কাজ করার সময় লোহার গুঁড়ো তার চোখে লাগে তার। এতে বাম চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসা করালেও ওই চোখে কিছুই দেখতেন না তিনি।
আবুল কালাম বলেন, “চোখের জন্য নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাইতাম। কর্নিয়ার জন্য সন্ধানীতে আবেদন করে রাখছিলাম। পরে শনিবার চোখে কর্নিয়া লাগায়া দিছেন ডাক্তাররা।
“ব্যান্ডেজ খোলার পর বাড়িতে চলে আসছি। এখনও বাম চোখে তেমন দেখতে পাই না। আর চোখে খুব ব্যথা আছে।”
তবে চিকিৎসক শীশ রহমান বলেছেন কালাম ভালো আছেন।
“ওই পেশেন্ট বাড়িতে চলে গেছেন। তিনি ভালো আছেন। কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করার পরপরই চোখে আলো আসবে বিষয়টি এমন নয়। চোখে আলো ফিরতে কিছুদিন সময় লাগে।”
অন্যদিকে বিএসএমএমইউর চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক রাজশ্রী দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মশিউর রহমান জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তিনি ‘কনজেনিটাল কর্নিয়াল অপাসিটি ডিউ টু পিটারস অ্যানোমালি’তে আক্রান্ত। শনিবার তার ডান চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তিনিও দেখতে পারবেন।
“সে এখন ভালো আছে। কর্নিয়া প্রতিস্থাপন শরীরের অন্যান্য অর্গান প্রতিস্থাপনের মতোই। ফলে সেটা শরীরের সঙ্গে এডজাস্ট হতে কিছুটা সময় লাগবে। সে আস্তে আস্তে দৃষ্টিশক্তি কিছুটা ফিরে পাবে আশা করি,” বলেন এই চিকিৎসক।
সন্ধানী জাতীয় চক্ষু দান সমিতি ও সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংক বাংলাদেশ শিব নারায়ণ দাশের কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের জন্য এই দুই ব্যক্তিকে নির্বাচন করেছে।
সন্ধানীর সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, কর্নিয়ার জন্য সন্ধানীতে অনেক আবেদন জমা পড়ে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তারা কর্নিয়াগ্রহীতা নির্বাচন করেন। সেক্ষেত্রে কিছু বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
“যারা আগে আবেদন করেন তাদের আগে দেওয়া হয়। এছাড়া ওই ব্যক্তির অর্থনৈতিক সক্ষমতা, বয়স বিবেচনায় নেওয়া হয়। যাদের বয়স কম আমরা তাদের আগে কর্নিয়া দিই, কারণ তার পুরো জীবনটা পড়ে রয়েছে। এই দুইজনকেও সবকিছু বিবেচনায় এনে বাছাই করা হয়েছে।”
শিব নারায়ণ দাশের ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার বাবা শ অনেক আগেই মরণোত্তর দেহদান করে যাওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যরা সেই ইচ্ছা বাস্তবায়ন করেছেন।
“দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তার ভালোবাসার প্রতিফলন হিসেবেই তিনি দেহ দান করেছেন। তিনি খুবই বিজ্ঞানমনস্ক একজন মানুষ ছিলেন। সবসময়ই চাইতেন তার দেহ দান করে যাবেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বার্থে। তার ইচ্ছাকে আমরা যথেষ্ট সম্মান করি, তার সেই ইচ্ছার সম্মানেই আমার মা ও আমি বিএসএমএমইউতে দেহটি দান করেছি।”
রোববার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগ শিব নারায়ণ দাশের দেহ বুঝে নেয়। তার দেহ এনাটমি বিভাগে সংরক্ষিত থাকবে, যা চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণায় ব্যবহার হবে।