“আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, এখনও লইয়ারের ফি শেয়ার করেন বিচারপতি। এখন সিন্ডিকেট হয়ে গেছে; ঢাকাসহ সব নিম্ন আদালতে। সুপ্রিম কোর্টে একই অবস্থা। কোনো পরিবর্তন নেই।”
Published : 04 Sep 2024, 09:46 PM
বিচার বিভাগে দ্রুত সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থান থেকে সরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও ব্নিপি নেতা এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এই অন্তর্বর্তী সরকার সব ক্ষেত্রে সংস্কারের পরিকল্পনা করছে তুলে ধরে খোকন বলেন, “কিন্তু বিচার বিভাগের সংস্কার কিন্তু সে তুলনায় যৎসামান্য। কোনো পরিবর্তন আসেনি, হচ্ছে না। কী কারণে হচ্ছে না, আমরা জানি না। সরকার রহস্যজনক কারণে করছে না।”
বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
গত ৫ অগাস্টের পরে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ‘জনগণের’ তথা ‘আইনজীবীদের অনেক দাবি’ রয়েছে বলে তুলে ধরে খোকন বলেন, “গত সরকার অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল জনগণের ভোটে বা সমর্থনে নয়। প্রত্যেকটি নির্বাচনই বিতর্কিত ছিল, বিনা ভোটে ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা আওয়ামী লীগ-যুবলীগের ‘ছেলেপেলেরা’ ভোটকেন্দ্র দখল করে কিংবা বিনা ভোটে নির্বাচনে জিতেছিল।
সাধারণ মানুষ বিচার বিভাগে এসে আইনের আশ্রয় পায়নি বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “শত শত বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক কর্মী গুম হয়েছে। অনেককে আয়নাঘরে নিয়ে গেছে। বের হয়ে এসেছে ১০-১১ বছর পরে। নিম্ন আদালতে গিয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টে এসেছিল; কোনো বিচার পায়নি।”
বিচার বিভাগ ‘সরকার নিয়ন্ত্রিত’ ছিল বলে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা অকেককে হত্যা করেছে; অনেককে আহত করেছে; এ কারণে মানুষ কোনো বিচার পায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
খোকন বলেন, “আমাদের অর্থনৈতিক খাতেও ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। তারা তাদের সময় যেসব ব্যাংকগুলো দিয়েছিল, আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়েছিল, সবগুলো ব্যাংক খালি হয়ে গিয়েছিল।
“সব কিছুতে তারা দুর্নীতি করেছিল। কিন্তু মানুষ আদালতে আসতে পারে নাই। আদালতও সুয়োমোটো কোনো রুল ইস্যু করে নাই; ইন্টারফেয়ার করে নাই, কারণ বিচার বিভাগ ছিল পুরোপুরি সরকার নিয়ন্ত্রিত। আর বিচার বিভাগকে ব্যবহার করেই সরকার ক্ষমতায় ছিল।”
তৎকালীন অ্যটর্নি জেনারেল ও দুদকের আইনজীবীদের ভূমিকার সমালোচনা করে খোকন বলেন, “তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের সাজা দিতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাজা হয়েছে এবং তার চিকিৎসা করতে দিচ্ছিল না। বারবার চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলাম আমরা আদালতে, কিন্তু আমরা কোনো আদেশ পাইনি। রিজেক্ট করে দিয়েছে। অসুস্থ রোগীরও চিকিৎসা করতে পারি নাই। শুধু বিচার বিভাগের জন্য।
“এমনকি তাদের পছন্দমত কোনো রায় যদি না হত তারা বিচারককে হয়রানি করত।”
অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতি পদত্যাগ করেন, গঠন করা হয় নতুন আপিলেট ডিভিশন। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের বেশিরভাগ সরকারি আইনজীবী পদত্যাগ করায় সেখানেও নতুন নিয়োগ হয়েছে।
এর বাইরে বিচার বিভাগে আইনগত দিক থেকে এখনও কোনো সংস্কারের কথা শোনা যায়নি।
সেই সংস্কার কেন প্রয়োজন, তা ব্যাখ্যা করতে মাহবুব উদ্দিন খোকন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার উদাহরণ টেনে আনেন।
তিনি বলেন, “এস কে সিনহা রায় দিলেন, সাতজন বিচারপতি ছিলেন; আওয়ামী লীগের একজন নেতা বললেন, তিনি পালিয়ে গেছেন। এস কে সিনহাকে ক্যান্সার রোগী বানিয়ে জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
“পরে ব্যাংককে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে নেয় সরকার।এ জন্য বিচার বিভাগে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল যাতে কেউ সরকারের অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ কোনো আদেশ বা রায় না দেয়।”
এই অন্তর্বর্তী সরকার সব ক্ষেত্রে সংস্কারের পরিকল্পনা করছে তুলে ধরে খোকন বলেন, “কিন্তু বিচার বিভাগের সংস্কার কিন্তু সে তুলনায় যৎসামান্য। কোনো পরিবর্তন আসেনি, হচ্ছে না। কী কারণে হচ্ছে না, আমরা জানি না। সরকার রহস্যজনক কারণে করছে না।”
সব ‘সেক্টরের’ আগে বিচার বিভাগের সংস্কার দরকার মত দিয়ে তিনি বলেন, “বিচার বিভাগ যদি শক্তিশালী হয়, দুর্নীতি কমে যাবে। বিচার বিভাগ শক্তিশালী হলে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা থাকবে। বিচার বিভাগ শক্তিশালী থাকলে আর্থিক ব্যবস্থাপনা ভালো থাকবে। বিচার বিভাগ শক্তিশালী হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
“কিন্তু বিচার বিভাগ নিয়ে এ সরকারের কোনো অগ্রগতি নেই। যেমন, সরকার তো বলতে পারে বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় করা হবে। সরকার থেকে কোনো বক্তব্য আসে নাই।”
নিম্ন আদালতকে আইন মন্ত্রণালয় থেকে মুক্ত করার দাবি জানিয়ে খোকন বলেন, “ইন্ডিপেন্ডেন্টলি বিচার করতে হবে, তা করেছে? কিছুই করে নাই। যারা আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করত, কই নিম্ন আদালতে এখনও তো কোনো সংস্কার নেই। ঘুরেফিরে তারাই।
“আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, এখনও লইয়ারের ফি শেয়ার করেন বিচারপতি। এখন সিন্ডিকেট হয়ে গেছে; ঢাকাসহ সব নিম্ন আদালতে। সুপ্রিম কোর্টে একই অবস্থা। কোনো পরিবর্তন নেই।”
জনগণ বিচার বিভাগে সংস্কার আশা করেছিল বলে মন্তব্য করে তিনি অতি দ্রুত এই সংস্কারের কাজ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।