আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ভারত থেকে ফেরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “আইন মন্ত্রণালয় যদি বলে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য চিঠি দেন, আমি দেব। পররাষ্ট্র সচিব একটা চিঠি পাঠিয়ে দেবেন।”
Published : 12 Aug 2024, 12:45 AM
দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি বলে তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যে দাবি করেছেন, সেটির বিপরীত বক্তব্য দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গণ আন্দোলনের চাপে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ‘কাগজেকলমে পদত্যাগ’ করেছেন কি না, এমন প্রশ্নে রোববার এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আমি যেটুকু জানি, সেটা আপনাকে বলছি। কাউন্সিলের মিটিংয়ে আমি যেটা জানতে পেরেছি, সেটা হল যে, তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে আছে।
”এটুকু তথ্য কনফার্ম করা হয়েছে। তারপরে বাকিটুকু আমি বলতে পারব না।”
পদত্যাগের কাগজপত্রের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশ্ন করে হয়ত জানতে পারবেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ অনুমোদনের পর তার ফাইনাল কাস্টডিয়ান হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।”
‘হত্যাকাণ্ডের’ বিচারের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরানোর পদক্ষেপের বিষয়ে এক প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, “এটা আমার বিষয় না। আইন মন্ত্রণালয় যদি বলে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য চিঠি দেন, আমি দেব। পররাষ্ট্র সচিব একটা চিঠি পাঠিয়ে দেবেন।”
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়। জেলায় জেলায় সহিংসতায় মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রায় তিনশ মানুষের প্রাণ যায়।
এরইমধ্যে ৫ অগাস্ট আন্দোলনকারীদের ঢাকামুখী লংমার্চের মধ্যে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর আসে। সেদিন বিকালে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিকদের বলেন, পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথমে হেলিকপ্টর ও পরে সামরিক বিমানে চড়ে আগরতলা হয়ে সেদিন রাতেই দিল্লি পৌঁছান বাংলাদেশের টানা ১৫ বছরের প্রধানমন্ত্রী। এখনও তিনি সেখানেই আছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পর রোববার নিজের প্রথম ব্রিফিংয়ে সূচনা বক্তব্যে তৌহিদ হোসেন বলেন, “পাশ্ববর্তী দেশে (অন্তর্বর্তী) সরকারকে যেভাবে চিত্রিত করা হচ্ছে, এটার কোনো মানে নাই।
“এ সরকার একেবারে সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে বদ্ধপরিকর। কারও সাথে আমরা খারাপ সম্পর্ক রাখতে চাই না। আমরা যেমন ভারতের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখব, চীনের সাথেও ভালো রাখব। আমরা এটা করে আসছি, আমরা সেটা মেনটেইন করেছি। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও ভালো সম্পর্ক চাই।”
তিনি বলেন, “আমাদের অন্যান্য অংশীদার যারা আছে, ইউরোপ বলেন বা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বলেন, পূর্বএশিয়া বলেন- আমরা সবার সাথে স্মুথ এবং ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই। এবং এটা আমরা ইনশাআল্লাহ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।”
প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর প্রথম বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেছেন, তাকে উৎখাতের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের মত বিদেশি শক্তির হাত আছে। “সেন্ট মার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিলে আমি ঠিকই ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”
যুক্তরাষ্ট্রকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দেওয়ার বিষয়ে এমন অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, “আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, আমি এই রকম কোনো অঙ্গীকার করি নাই। আর আমার খুব সন্দেহ হয় যে, রাস্তার ছাত্ররা এই অঙ্গীকার করেছে আমেরিকার কাছে। খুবই আনলাইকলি।
”এটা আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি না। আমি শুধু আপনাকে বলতে পারি যে, বর্তমান যে উপদেষ্টা পরিষদ আছে, তারা কিন্তু ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার কেউ চেষ্টা করবে না, এটা আমি বলতে পারি।
”তাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক যেটুকু আছে, তারা এই কাজটা করবে না বলে আমি মনে করি। আমি এক্ষেত্রে ভুল হয়ে যাই কি-না, এটা পরের কথা।”
বিগত সরকারের সময় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সোনালী অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
সেই ‘সোনালী অধ্যায়’ এখনও আছে কি না, এমন প্রশ্নে সাবেক কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমি যেটা মনে করি, দুই সরকারের মধ্যেও আসলে খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। আমরা জানি সেটা। এবং আমি আমার লেখায়, কথায় বিভিন্ন সময় বলেছি, অনেককে বলেছি সেটা।
“এখানে ব্যত্যয় যেটা ছিল, ঠিক মানুষের মাঝে কতটুকু যে সোনালী অধ্যায় চলছিল, মানুষের মনে সম্পর্কের ব্যাপারে, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।”
তিনি বলেন, “আমি চেষ্টা করব, সম্পর্কটাতো শুধু দেশের মধ্যে না, সরকারের মধ্যে না, দুদেশের সার্বিক যে অস্তিত্ব, তার মধ্যে মানুষ খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যেন ভাবে যে ভারত আমাদের খুব ঘনিষ্ট বন্ধু। আমরা এটাই চাই।
“বাংলাদেশের মানুষ যেন ভাবে, ভারত আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ট বন্ধু। আমরা সেদিকে সম্পর্কটাকে নিয়ে যেতে চাই এবং আমরা চাইব ভারত আমাদেরকে সেটাতে সহযোগিতা করুক।”
আমিরাতে থাকা বন্দিদের ফেরানোর উদ্যোগ
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানাতে গিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গ্রেপ্তার ও শাস্তি পাওয়া প্রবাসীকর্মীদের ফেরানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সর্বোচ্চ’ পর্যায় থেকে চেষ্টা চালানোর কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “কিছু কিছু মিশনে কিন্তু মিছিল-সমাবেশ হয়েছে, এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে। তার মধ্যে দুঃখজনকভাবে একটি দেশে ইউএইতে আমাদের কিছু কর্মীকে শুধু আটক নয়, জেলও দেওয়া হয়েছে। সেই বিষয়টা আমরা গভীরভাবে দেখছি, যাতে তারা কোনোভাবেই সাফার না করে, সেটা চেষ্টা করা হচ্ছে।
“আমি আশা করছি যে, আজকে-কালকের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা সাহেব সম্মতি দিয়েছেন যে উনি নিজে কথা বলবেন তাদেরি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে, যাতে করে তারা এই সহায়তাটা পেতে পারেন। তাদেরকে যেন মুক্তি দেওয়া হয়, কোনো রকমের শাস্তি ছাড়া।”
মুক্ত করার পরবর্তীতে সহায়তার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “তারপর বাকিটুকু আমরা হয়ত তাদেরকে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। উনি নিজে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলবেন, চেষ্টা করবেন যাতে তাদেরকে শাস্তির সম্মুখীন হতে না হয়।
“তারা স্থানীয় আইনের হয়ত ব্যত্যয় ঘটিয়েছে, সেজন্য দেশকে হয়ত দোষারোপ করতে পারি না। তাদের আইনে আছে সে অনুযায়ী তারা কাজ করেছেন। কিন্তু তাদের যে একটা সেন্টিমেন্ট, যে কারণে তারা এটার পক্ষে এসেছে, তখন তারা আইনকানুনও হয়ত ভুলে গিয়েছিল। সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, যাতে তাদেরকে মুক্ত করতে পারি।”