কোটা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে আপ্যায়ন করে ছবি প্রকাশের পর ‘জাতির সঙ্গে মশকরা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন হাই কোর্টের বিচারপতি।
Published : 31 Jul 2024, 08:35 PM
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে কোটা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে আপ্যায়ন করে ছবি পোস্টের ঘটনায় হাই কোর্টের উষ্মা প্রকাশের দুই দিনের মাথায় সরিয়ে দেওয়া হল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদকে। তাকে এই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্সের অতিরিক্ত কমিশনার করা হয়েছে।
বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশ- ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই আদেশে হারুনসহ তিন অতিরিক্ত কমিশনারের রদবদল করা হয়।
আদেশে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) খ. মহিদ উদ্দিনকে লজিস্টিকস ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। লজিস্টিকস ফিন্যান্স ও প্রকিউরমেন্টের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত কমিশনার আশরাফুজ্জামানকে পাঠানো হয়েছে গোয়েন্দাতে।
গত রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে ডিবি কার্যালয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর ছবি প্রকাশ করা হয়।
ছবির ক্যাপশনে হারুন লেখেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই ডিবি কার্যালয়ে এনে তাদের সঙ্গে কথা বললাম।”
গত শুক্রবার কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কিছু স্বীকার করা না হলেও রাতে হারুন জানান, নিরাপত্তা দিতে তাদেরকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও একই কথা বলেন।
পরদিন সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং রোববার নুসরাত তাবাসসুমকেও নেওয়া হয় সেখানে।
এই ঘটনার পরদিন সোমবার হাই কোর্টে একটি আবেদনের শুনানির এক পর্যায়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, “কোটাবিরোধী আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে তাদের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছে। মিডিয়ায় দেখা গেছে, তারা কাঁটা চামচ দিয়ে খাবার খাচ্ছেন।”
তখন রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের বেঞ্চ এর সমালোচনা করে।
তখন জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “ডিবি অফিসে যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর খাবার টেবিলে বসাবেন। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না।”
সেদিন গোয়েন্দা কার্যালয়ে হাই কোর্টের এই উষ্মা প্রকাশ সম্পর্কে হারুনের বক্তব্য জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। তবে এ বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করে বলেন, “হাই কোর্টের বক্তব্য জেনে এ বিষয়ে পরে বলতে পারব।”
ডিবি কার্যালয়ে আপ্যায়ন করে এই ছবি প্রকাশের রীতি শুরু হয় ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই। সেদিন বিএনপির একটি কর্মসূচি থেকে দলের স্থানীয় কমিটির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে তুলে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ তোলার পর ডিবি কার্যালয়ে তাকে আপ্যায়নের ছবি প্রকাশ করেন হারুন। তাকে উপহার দিয়ে বিদায়ও জানানো হয়। গয়েশ্বর পরে ‘খাইয়ে দাইয়ে খোঁটা দেওয়ার’ অভিযোগ আনেন।
এরপর টানা এক বছর গোয়েন্দা কার্যালয়ে হারুনের কাছে অভিযোগ নিয়ে যাওয়া অনেককেই তিনি আপ্যায়িত করেছে। সেই আপ্যায়নের ছবির পাশাপাশি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করা হয়।