“ফুটব্রিজের সিঁড়িতে এক ব্যক্তি পেছন থেকে চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে আমাকে নিচে ফেলে দেয়,” ভাষ্য শায়লা পারভীন বিথীর।
Published : 21 Sep 2024, 10:59 PM
ঢাকার ধানমন্ডিতে পর্বতারোহী শায়লা পারভীন বিথীর ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনার সিসিটিভি ভিডিওতে সন্দেহভাজন এক যুবককে দেখা গেছে।
ধানমন্ডি মাদার কেয়ার হাসপাতালের সামনের ফুটব্রিজে শনিবার দুপুরের ওই ঘটনার সময় দৌড়ে নামতে দেখা গেছে সেই যুবককে। সেখানকার একটি সিসিটিভির ভিডিও সংগ্রহ করে দেখার পর বলেছেন এক পুলিশ সদস্য।
এ ঘটনায় শায়লা বিথী শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
শেরেবাংলা নগর থানার ওসি মোজাম্মেল হক বলেন, “সিসিটিভি ভিডিওতে সন্দেহভাজন এক যুবককে দেখা গেছে। নিশ্চিত না হলেও তিনিই হামলাকারী হতে পারেন বলে ধারণা করেছেন ভুক্তভোগী। তবে তিনি কোনো মামলা দায়ের করেননি।
“একজন হামলাকারী উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করে গেছেন। জিডিতে ঘটনার সঙ্গে সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।”
ওসি বলেন, “ভুক্তভোগীর স্বামী বিদেশে আছেন, তিনি দেশে আসলে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন। চাইলে পরেও মামলা করতে পারবেন। তবে জিডির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”
ঘটনার বর্ণনায় সাধারণ ডায়েরিতে বিথী বলেছেন, “দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ধানমন্ডি মাদার কেয়ার হাসপাতালের সামনের ফুটব্রিজ পার হয়ে নামার সময় সিঁড়িতে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি পেছন থেকে চুল ধরে টান দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে আমাকে নিচে ফেলে দেয়। মারধর করে জখমও করে। সেসময় চিৎকার করলে সেই ব্যক্তি দৌড়ে চলে যায়।”
বিথীর সঙ্গে থানায় যাওয়া শান্ত শান বলেন, “আমরা সিসিটিভি ভিডিওতে একজনকে দেখেছি। ধারণা করছি, সেই ব্যক্তিই হামলা করেছে। আমরা আপাতত একটি জিডি করেছি। মামলা করব কি না, পরে সিদ্ধান্ত নেব।”
একজন নারীর ওপর এমন হামলার বিষয়ে অধিকারকর্মী খুশি কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ ধানমন্ডিতে, এর আগে কক্সবাজারে ঘটনা ঘটল। হামলাকারীর প্রশ্ন, নারী কেন একা হাঁটবে? তার পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে? যার ইচ্ছা হচ্ছে, কারও ওপর হামলা করছে। এখন পরিস্থিতি কী এমন অবস্থায় পৌঁছাল?”
খুশি কবীর বলেন, “সমাজে এ ধরনের মানুষ আজীবন ছিল। কিন্তু তারা ইচ্ছা করলেই কারও উপর হামলা করতে পারত না। এসব প্রতিরোধে একটা বিধান আছে, এসব করলে জেল হবে সে জানত। কিন্তু এখন কী এমন পরিস্থিতি হল, একের পর এক হামলা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে, পাহাড়ে হামলা হয়েছে, মন্দির-উপাসনালয়ে হামলা হচ্ছে, এগুলো ভালো লক্ষণ না।
“এই সমাজে নারীবিদ্বেষী সবসময়ই ছিল। কিন্তু মন চাইলেই কেউ কারও ওপর হামলা করার সাহস পাবে, এই সাহস ও সুযোগ কীভাবে পাচ্ছে এটাই বড় প্রশ্ন। যার যা ইচ্ছা করতে পারছে, এখন পরিস্থিতি একটা অরাজকতার পর্যায়ে আছে।”
শায়লা বিথী সবশেষ ২০২১ সালের অক্টোবরে হিমালয়ের আইল্যান্ড পর্বতচূড়া জয় করেন। তিনি ২০১৬ সালে ভারতের নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টিনিয়ারিং থেকে পর্বতারোহণের মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন।
প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১৮ সালের মে মাসে তিব্বতের লাকপারি (৭ হাজার ৪৫ মিটার) পর্বতচূড়া জয় করেন। ২০১৯ সালের মে মাসে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে হিমালয়ের দুর্গম তাশি লাপচা (৫ হাজার ৭৫৫ মিটার) গিরিপথ পার হন।
বিথী প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০২১ সালের নভেম্বরে হিমালয়ের বিখ্যাত থ্রি-পাস অতিক্রম করেন। ২০১৫ সালে নেপালের মাউন্ট কেয়াজুরির বেস ক্যাম্প (১৫ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা) ট্রেকিং করেন।
২০১৬ সালের অক্টোবরে সফলভাবে নেপালের মেরা পর্বতের চূড়ায় (৬ হাজার ৪৭৪ মিটার) ওঠেন বিথী। ২০১৭ সালের এপ্রিলে নেপালের থ্রংলা পাস (৫ হাজার ৪১৬ মিটার) অতিক্রম করেন। একই বছরের অক্টোবরে তিনি প্রথম বাংলাদেশি দলের হয়ে মানাসলু সার্কিট (৫ হাজার ১০৬ মিটার) সম্পন্ন করেন।
আরও পড়ুন-