পিকে হালদারের অর্থ পাচার: তদন্ত কর্মকর্তাকে আরও জেরা

পিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2023, 02:47 PM
Updated : 7 June 2023, 02:47 PM

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায় গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাকে এবার জেরা করছেন আসামি সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী।

বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিনকে জেরা শুরু হয়। দিনভর সেটি শেষ না হওয়ায় আগামী ১৪ জুন আবার তারিখ পড়ে।

এদিন সুকুমার ও অনিন্দিতা ছাড়াও হাজির করা হয় আরও দুই আসামি অবন্তিকা বড়াল ও শংখ ব্যাপারীকে।

এ নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা পঞ্চম দিবসের মত জেরার মুখোমুখি হয়েছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম।

মার্চে বা এপ্রিলে আলোচিত এ মামলা শেষ হবে বলে আশাবাদী ছিলেন এই আইনজীবী। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা আরো সাক্ষ্য দেবেন জানানোর কারণে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্কের জন্য দিন রাখা যায়নি। ফলে রায়ও ঘোষণা হয়নি।

দুদকের এ কৌঁসুলি জানান, তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য চলতে পারে আরও কয়েকদিন।

আগের তারিখে সালাউদ্দিনকে জেরা করেন দুই আসামি অবন্তিকা ও শংখ ব্যাপারীর আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১০৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯৯ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা শেষে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে।

আসামিরা নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষী হাজির করতে পারবেন। আবার রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষীদের বক্তব্য খণ্ডন করে লিখিত মৌখিক বক্তব্যও উপস্থাপন করতে পারবেন।

এরপর হবে দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক। সেটি শেষ হলে আসবে রায়ের পর্যায়ে।

মামলাটিতে আসামিদের পক্ষে লড়ছেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী, শাহীনুল ইসলাম অনি।

১০ আসামিই পলাতক

এ মামলায় ১৪ আসামির মধ্যে পিকে হালদারসহ ১০ জন পলাতক রয়েছেন। এদের মধ্যে পিকে গ্রেপ্তার হয়ে পশ্চিমবঙ্গে কারাগারে বন্দি। তিনি সেখানে ধরা পড়ার আগে ধারণা করা হচ্ছিল তিনি কানাডায় আছেন।

পলাতক বাকিরা হলেন: পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।

২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী।

এজাহারে বলা হয়, পি কে হালদার বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজ দখলে রেখেছেন।

ওই অর্থ আড়াল করতে বিদেশে পাচার করেমানি লন্ডারিং আইনেও তিনি অপরাধ করেন বলে মামলায় বলা হয়।

তদন্ত শেষে ১৪ জনের বিরুদ্ধেঅভিযোগপত্র জমা দেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। এরপর শুরু হয় বিচার।

পিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রাপ্তে আছে তার কারণে।

কয়েক বছর আগে তিনি দেশে আসবেন বলে উচ্চ আদালতে একটি আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা। বলেছিলেন, দেশে এসে টাকা ফিরিয়ে দেবেন। তাকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়।

তবে উচ্চ আদালত এই আবেদন ফিরিয়ে দিয়ে দেশে ফেরামাত্র গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়। এরপর আর দেশে ফেরেননি তিনি।