সিলেট স্ট্রাইকার্সের সাবেক মালিক সারোয়ার গোলাম চৌধুরী মামলাটি দায়ের করেন।
Published : 30 Sep 2024, 09:02 PM
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) দল সিলেট স্ট্রাইকার্সের মালিকানা ‘জোর করে’ লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ঢাকার পল্লবী থানায়।
রোববার রাতে দলটির সাবেক মালিক সারোয়ার গোলাম চৌধুরী মামলাটি দায়ের করেন বলে জানিয়েছেন পল্লবীর ওসি নজরুল ইসলাম।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- হেলাল বিন ইউসুফ শুভ্র, মো. ইমাম হাসান, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কম্পানির একজন কর্মকর্তা (অজ্ঞাতপরিচয়), কে এম রাসেল ও বাবলু।
এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ওসি নজরুল বলেন, “এটা কোনো রাজনৈতিক মামলা না, এটা একটা ব্যবসায়ীক মামলা। মাশরাফিকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা এই মামলায় আরও ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।”
মামলায় বাদী অভিযোগ করেছেন, মাশরাফির কার্যালয়ে বসে হেলাল বিন ইউসুফ শুভ্র নামের একজন জোর করে তার কাছ থেকে সিলেট স্ট্রাইকার্সের মূল প্রতিষ্ঠান ফিউচার স্পোর্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের মালিকানা কেড়ে নেন।
সে সময় সারোয়ার চৌধুরীর মাথায় রিভলবার ঠেকানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
“রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির অজ্ঞাত এক কর্মকর্তা সারোয়ারকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করেই স্বাক্ষর নিতে শুরু করেন। এ সময় তিনি যেন কারো সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা না বলেন সেই হুমকিও দিয়েছিলেন শুভ্র,” বলা হয়েছে এজাহারে।
সারোয়ার চৌধুরীর অভিযোগ, মাশরাফি ও তার লোকজন মিলে ২০২৩ সালে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার জোরপূর্বক নিয়ে নেন। বিনিময়ে অর্থ পরিশোধ না করে তাকে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি দেন।
এজাহারে বলা হয়, মামলার দুই নম্বর আসামি হেলাল বিন ইউসুফের মাধ্যমে মাশরাফির সঙ্গে সারোয়ারের পরিচয় হয়। মাশরাফি ও হেলালের আহ্বানে বিপিএলে দল কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ও ব্যবসায়ী সারোয়ার।
এরপর ‘ফিউচার স্পোর্টস বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে একটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানির নিবন্ধন করেন সারোয়ার। ৬০ শতাংশ শেয়ার নিয়ে যার চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। বাকি ৪০ শতাংশ শেয়ার নিয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন মামলার তিন নম্বর আসামি ইমাম হাসান, যাকে মাশরাফি নিজের বন্ধু হিসেবে পরিচয় করে দিয়েছেন বলে অভিযোগে জানান সারোয়ার।
২০২২ সালের অক্টোবরে ‘ফিউচার স্পোর্টস বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানি’ বিসিবি থেকে তিন বছরের জন্য সিলেট স্ট্রাইকার্সের স্বত্ব পায়।
২০২৩ সালে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির অধীনে মাশরাফির নেতৃত্বে দারুণ পারফরম্যান্স করে সিলেট। বিপিএলের ইতিহাসে প্রথমবার তারা ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
আসর শেষ না হতেই ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ২০২৩ সালের অগাস্টে সারোয়ারকে মাশরাফির কার্যালয়ে ডেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার শেয়ারগুলো অন্যদের নামে লিখিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেছেন সারোয়ার।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সারোয়ারকে ভয় দেখানোর জন্য ১০ থেকে ১৫ জন যুবক এনে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। পরিবারকে হত্যার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক তার থেকে শেয়ার হস্তান্তর করে নেন। প্রাণভয়ে সে সময় দেশ ছেড়ে চলে যান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নড়াইলে ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলা ও গুলির অভিযোগে এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর মাশরাফি ও তার বাবাসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সদর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব শেখ মোস্তফা আল মুজাহিদুর রহমান পলাশ।
২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো নড়াইল-২ (লোহাগড়া ও সদরের একাংশ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক।
চলতি বছরের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে একই আসনে টানা দ্বিতীয়বার সংসদ সদ্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সবশেষ জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্বও পান।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সময় নীরব থাকা, দলের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের পাশে থাকতে না পারা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে।