বিকাল থেকে দর্শনার্থী কম থাকায়, যারা এসেছিলেন তারাও স্বচ্ছন্দে মেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন, কিনেছেন পছন্দের বই।
Published : 16 Feb 2025, 11:40 PM
ভাষা সংগ্রামের চেতনাকে ধারণ করা অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘অন্যপ্রকাশ’ এর প্যাভিলিয়ন সেজেছে কালো রঙে, কাঁটাতারে ঢেকে দেওয়া হয়েছে এর উপরের কিছু অংশ।
‘দ্রোহের’ এই চেতনা ‘একুশ’ থেকেই পেয়েছেন তুলে ধরে অন্যপ্রকাশের স্বত্ত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, “কালো শোক থেকে রক্তলাল শক্তির উত্থান। কাঁটাতারের ব্যারিকেড ভেঙে বর্ণমালারা মুক্তি পেয়েছে।
“আমাদের সেই সংগ্রাম আর সাফল্যের গৌরবগাথা প্রতীকী রূপে মূর্ত হয়েছে অন্যপ্রকাশের প্যাভিলয়ন সজ্জায়।”
“একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ মানে অন্যায়ের প্রতিবাদ। সেই একুশ রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ভাষার অধিকারের দাবিতে। তাই একুশ মানে শোক আর শক্তি। সেই শোক ও শক্তি ভাষা পেয়েছে অন্যপ্রকাশের এবারের প্যাভিলিয়ন সজ্জায়।”
এই ভূখণ্ডের মানুষের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসকে সম্মান জানাতেই এমনভাবে স্টল সাজানোর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে মাজহারুল ইসলাম বলেন, “আমরা প্রতি বছরই একটা থিম ভেবে স্টল সাজাই। গত বছর যেমন রিকশা পেইন্টিংয়ে সেজেছিল অন্যপ্রকাশ।”
অন্যদিকে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির আদলে নিজেদের স্টল বানিয়েছে বিশ্বসাহিত্য সাহিত্য কেন্দ্র।
১৯৯৯ সাল থেকে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালিয়ে আসা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে এই কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে।
ফেব্রুয়ারিতে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালুর আশ্বাস দিলেও সরকারের অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় সেটি চালু হয়নি।
কার্যক্রম থেমে যাওয়া ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির আদলে মেলায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্টল সাজানোকে ‘নীরব প্রতিবাদও’ বলছেন দর্শনার্থীদের কেউ কেউ।
তবে সেটা বলতে চান না বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা। বলছেন, এমন চিন্তা থেকে তারা ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির আদালতে স্টলটি তারা বানাননি।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিপণন কর্মকর্তা সঞ্জয় পাণ্ডে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বইমেলায় আমরা স্টলের জন্য একাধিক ডিজাইন করেছিলাম, সবার মতামতে এই ডিজাইনটা চূড়ান্ত করেছি। এটা কোনো প্রতিবাদের ভাবনা থেকে করা হয়নি।”
রোববার ছিল বইমেলার ১৬তম দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বইমেলা পরিচালনা কমিটি জানায়, মেলায় এদিন নতুন বই এসেছে ১০৪টি।
এর আগে দুই দিন যে জনস্রোত ছিল মেলায়, তা অনেকটাই কম দেখা যায় এদিন। বিকাল থেকে দর্শনার্থী কম থাকায়, যারা এসেছিলেন তারাও স্বচ্ছন্দে মেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিনেছেন পছন্দের বই।
তবে মেলায় অনেকের মুখেই আলোচনায় ছিল ‘স্যানিটারি ন্যাপকিনের’ দোকান বন্ধ করার বিষয়টি। মেলায় আসা রাবিয়া মোবাশিরা নামে একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিনের দোকান থাকলে অনেক মেয়েরই সুবিধা হয়।”
পাশে থেকে মোবাশিরার বন্ধু রাফিয়া বলেন, “মেলায় কিন্তু বিনা মূল্যেই এটা দেওয়া যেতে পারে, সেবার মনোভাব নিয়ে। এটা তো জরুরি পণ্য।”
রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, বইমেলায় বিনা মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ অব্যাহত থাকবে।
আলোচনা, গান, আবৃত্তি
এদিন ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি ও গবেষক সুমন সাজ্জাদ এবং শিশুসাহিত্যিক শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় “জহির রায়হানের সাহিত্যকর্মে ঐতিহাসিক ঘটনার বিচার” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহুল আহমদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মশিউল আলম ও আহমাদ মোস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করেন মাহবুব হাসান।
সাংস্কৃতিক পর্বে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আজহারুল ইসলাম রনি ও ডা. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
সংগীত পরিবেশন করেন দেবিকা রানী পাল, জাহিন খান নেজাম, আনিলা আমীর লামী, সুমন চন্দ্র দাস, মো. টিপু চৌধুরী, মিতালী সরকার ও ডালিয়া সুলতানা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন স্বপন কুমার দাস (তবলা), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কি-বোর্ড), মো. শহিদুল ইসলাম (বাঁশি) এবং সুমন কুমার সাহা (অক্টোপ্যাড)।
সোমবার যা থাকছে
সোমবার বইমেলার ১৭তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টায় পর্যন্ত। বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জীবন ও কর্ম : আল মাহমুদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মজিদ মাহমুদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মুসা আল হাফিজ ও কাজী নাসির মামুন। সভাপতিত্ব করবেন মাহবুব সাদিক।