জোটের যুগ্ম সদস্য সচিব মো. হাবিবুল্লাহ রাজু বলেন, “আমলাদের ঈদ পুরো, আর শিক্ষকদের ঈদ কি সিকিভাগ?”
Published : 19 Feb 2025, 08:51 PM
আসছে ঈদুল ফিতরেই শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা, যারা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, শতভাগ উৎসব ভাতা, সরকারি কর্মচারীদের মত একই হারে বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।
‘এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’ নামে কয়েকটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে তারা গত আট দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
শতভাগ উৎসব ভাতা ও অন্যান্য ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে দাবি নিয়ে তারা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষক সমাবেশ ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
জোটের সদস্য সচিব দেলাওয়ার হোসেন আজীজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারি কোষাগার থেকে বেতনভাতা পেলেও বঞ্চনার শিকার। আমরা শিক্ষকরা মূল বেতনের মাত্র ২৫ শতাংশ ও কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা পেয়ে থাকি। সরকার কোনো বাড়িভাড়া দেয় না, চিকিৎসা ভাতা বাবদ দেওয়া হয় মাত্র ৫০০ টাকা । আমরা এ বঞ্চনার অবসান চাই।
“আমরা গত আটদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। মঙ্গলবার সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা করলে পুলিশ যেতে দেয়নি। মঙ্গলবার ও বুধবার আমরা কর্মবিরতি পালন করি। বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করলেও আমাদের আটকে দিয়েছে। এর প্রতিবাদে আমরা বৃহস্পতিবার সকালে প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষক সমাবেশ করব। এদিন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কর্মবিরতি পালন করা হবে।”
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়ার দাবি জানিয়ে এ শিক্ষক নেতা আরও বলেন, “আমরা আসছে ঈদেই শতভাগ উৎসব ভাতা চাই। আর সরকারি কর্মচারীদের মত একই হারে বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা চাই। সরকারের পক্ষ থেকে আসছে ঈদের আগে শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়া ও অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা দিলে আমরা ক্লাসে ফিরে যাবে।”
সরকার শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করলেও ফলপ্রসূ কোনো আশ্বাস পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, “গত সোমবার আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন বাজেটে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। কিন্তু কোনো কার্যকর ব্যবস্থা বা লিখিত প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারি করা হয়নি। তাই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ভাতা বৃদ্ধির লিখিত আদেশ বা প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
বর্তমানে দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩১ হাজার ৮২৬টি। এরমধ্যে ১৭ হাজার ৬৩৪টি স্কুল, ২ হাজার ৮৬৮টি কলেজ, ৯ হাজার ১০২টি মাদ্রাসা ও ২ হাজার ২২২টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত।
জোটের যুগ্ম সদস্য সচিব ও মোর্চাভুক্ত সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের (বাশিফ) মো. হাবিবুল্লাহ রাজু বলেন, “আমলাদের ঈদ পুরো, আর শিক্ষকদের ঈদ কি সিকিভাগ? আমরা শতভাগ উৎসব ভাতা চাই। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে ফেরত নিয়ে সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা দিলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হবে না।”
শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা ও অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে বুধবার শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
তবে গত রোববার জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, “শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত হল বেসরকারি খাতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তাদের জন্য যতদূর করার, আমি চেষ্টা করব। তাদের অনলাইন বদলির ব্যবস্থা করছি। তারা যে ভাতা পান তা অপ্রতুল। আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে ভাতা বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।
“আগামী বছরের জন্য এখন একটা বাজেট তৈরি হচ্ছে। শিক্ষকদের অবসরকালীন যে সুবিধা, তা তাদের টাকা। এগুলো তাদের ন্যায্য দাবি। আমি উপদেষ্টা পরিষদে বলেছিলাম সরকারকে এই অর্থ অবহেলিত শিক্ষকদের অবসর ভাতা না দেওয়া অত্যন্ত অনৈতিক। কিন্তু তাদের ভাতা এক বছরের বাজেটের ওপর চাপিয়ে সমাধান করা যাবে না। আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করছি। যেমন বন্ডের মাধ্যমে একটা ফান্ড তৈরির চেষ্টা করছি। আগামী বছর থেকে সেটা শুরু হতে পারে।”