প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ‘বিতর্কিত ব্যক্তি’ ও তার ‘বিতর্কিত রাজনৈতিক আদর্শ’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন নূর।
Published : 15 Nov 2024, 09:47 PM
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন থেকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেটি তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তার বক্তব্যে প্রধান কৌঁসুলির মানহানির অভিযোগ ওঠার পর শুক্রবার নিজের ফেইসবুকে পেইজে নূর লেখেন, “প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে আমার বক্তব্যের তথ্য বিভ্রাটে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করছি।”
তিনি লেখেন, “চিফ প্রসিকিউটরের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ায় গণহত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।”
নিজের বক্তব্যের সঙ্গে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের প্যাডে লেখা একটি ছবিও শেয়ার করেন নূর।
সেখানে লেখা হয়েছে, “নুরুল হক নূরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি গতকাল (বৃহস্পতিবার) ট্রাইব্যুনালের সামনে প্রদত্ত বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে রাজনৈতিক দল হিসেবে সহযোগিতার পূর্ণ আশ্বাস ব্যক্ত করেছেন।”
কী বলেছিলেন নূর?
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। এদিন নূর তার সমর্থকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সামনে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন।
পরে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রাইব্যুনালে যিনি চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তিনি একজন ‘বিতর্কিত ব্যক্তি’। তার একটি বিতর্কিত রাজনৈতিক আদর্শ আছে, এটা আমরা সবাই জানি।
“তিনি আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে মিটিং করেছেন, আমরা তথ্য পেয়েছি। তিনি তার পদপদবি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘টাকা-পয়সার ধান্দাবাজিতে’ ব্যস্ত আছেন।”
নূর অভিযোগ করেন, “গণঅধিকার পরিষদ-জিওপি একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়া ও ড. রেজা কিবরিয়া দল থেকে অপসৃত হওয়ার কারণে একই নামে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য তিনি হাই কোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। অথচ নির্বাচন কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা আছে, গণঅধিকার পরিষদের কাউন্সিল বৈধ। সে কারণেই আমরা নিবন্ধন পেয়েছি। কিন্তু একই নাম বা কাছাকাছি নামে নিবন্ধন পেতে ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এখন রিজা কিবরিয়া নিজেও এই গ্রুপের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন।
“কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেলের পদমর্যাদা সম্পন্ন পদ ও দায়িত্বে থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চিফ প্রসিকিউটর ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষ নিয়ে তাদের নিবন্ধন পাইয়ে দিতে আইনজীবী হিসেবে শুনানি করছেন। তিনি এখন সরকারি পদে থেকে এবং গণহত্যা বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের আইনজীবী হয়েও বিচারকার্যকে প্রভাবিত করতে সরকারি পদ ব্যবহার করছেন।”
এসব অভিযোগ তুলে প্রধান কৌঁসুলির পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন নূর।
পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাসুদ রানার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “নূর তার একদল সহযোগী ও বহিরাগত ব্যক্তিদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ‘উসকানিমূলক’ ও ‘মানহানিকর’ স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে ট্রাইব্যুনালের মূল গেইট দিয়ে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা করেন।
“পরে ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের বাধার মুখে ঢুকতে না পেরে নূর তার দলীয় কর্মীদের নিয়ে ট্রাইব্যুনালের গেইটে সংবাদ সম্মেলন করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকের ভিত্তিহীন, বানোয়াট, অসত্য এবং উসকানিমূলক কিছু অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন।”
নূরের বক্তব্যে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার আনা এসব ‘মিথ্যা অভিযোগ’ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। নূরের ওই বক্তব্যের ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও চিফ প্রসিকিউটরের মর্যাদা ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।
“নূর ও তার দলীয় কর্মীদের এমন ‘বেআইনি কার্যকলাপ’ সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তার এই ‘হঠকারী কার্যক্রমে’ জুলাই-অগাস্ট গণহত্যার ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া প্রভাবিত ও বাধাগ্রস্ত করার শামিল।”
বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে নূরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এর পরদিন ফেইসবুকে নিজের বক্তব্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন নূর।
এ বিষয়ে জানতে নুরুল হক নূরের মোবাইল ফোনে ফোন করলে তিনি ধরেননি।
তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাসুদ রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন নূর।”