লম্বা ছুটি শুরুর আগেই ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে মানুষের। বাড়ি ফেরার সময় চলে আসায় কেনাকাটার পর্ব দ্রুত সেরে ফেলছেন তারা।
Published : 28 Mar 2025, 01:18 AM
ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, মানুষের পদচারণায় তত ব্যস্ত হয়ে উঠেছে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকা; পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে ঢাকা ছাড়ার আগে শেষ সময়ের কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন অনেকেই।
মঙ্গলবার বিকালে নিউ মার্কেটে দেখা যায়, আশেপাশের অন্য মার্কেটের তুলনায় সেখানে প্রচণ্ড ভিড়। প্রবেশপথে ঠেলাঠেলি করে ঢোকার পর দোকানগুলোতেও কেনাকাটা করতে হচ্ছে ভিড় সামলে। পরিবারের সঙ্গে গ্রামে ঈদ করতে দুয়েক দিনের মধ্যেই যারা ঢাকা ছাড়বেন, তাদের অনেকেই আসছেন কেনাকাটা সারতে।
ক্রেতা সমাগম বাড়ায় বিক্রেতারাও খুশি। তারা বলছেন, সাপ্তাহিক ছুটির দুদিন বিক্রি হয়েছে বেশি। মঙ্গলবার তুলনামূলক কম হলেও চাঁদ পর্যন্ত সামনের কয়েক দিনের অপেক্ষায় তারা।
নিউ মার্কেট থেকে এদিন কেনাকাটা সারছিলেন মিরপুর বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিউল বাশার। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে ঢাকা ছাড়ার সময় হয়ে আসায় শেষ মুহূর্তে পরিবারের সবার জন্য কিছু না কিছু কিনছিলেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সামিউল বলেন, “আমরা সবসময় এখান থেকেই কাপড় কিনি। বাড়ি চলে যাব। নিজের জন্য আর ছোট ভাইবোনের জন্য কাপড় কিছু কিনেছি, বাকিগুলো কিনে বাড়ি চলে যাব। নিউ মার্কেটে অন্য মার্কেটের তুলনায় কাপড়ের দাম একটু কম, তাই এখান থেকেই কিনতে আসছি।”
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসলিমা তাবাস্সুম এসেছিলেন চাঁদনী চক মার্কেটে। এই মার্কেটে একেবারে তৈরি পোশাকের বদলে সেলাই ছাড়া কাপড়-থ্রিপিসের দোকান বেশি। ফলে নিউ মার্কেটের তুলনায় ভিড়ও একটু কম থাকে।
তাসলিমা বলেন, “প্রতি বছর নিজের পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনের জন্য নিউ মার্কেট এলাকা থেকে কেনাকাটা করি। বুধবার বাড়ি চলে যাব, তাই এসেছি কেনাকাটা শেষ করতে।”
আগামী ৩১ মার্চ (সোমবার) ঈদুল ফিতর ধরে আগেই ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এর আগে-পরের ছুটি ও নির্বাহী আদেশের ছুটি মিলিয়ে এবার ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা নয় দিনের ছুটিতে থাকবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
লম্বা ছুটি শুরুর আগেই ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে মানুষের। বাড়ি ফেরার সময় চলে আসায় কেনাকাটার পর্ব দ্রুত সেরে ফেলছেন তারা।
রোজা এলে পুরো মাস জুড়েই বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে নানা ডিজাইনের পোশাক ও বিভিন্ন পণ্যে দোকান সাজান নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা। তবে তাদের বিক্রির লক্ষ্য থাকে ঈদের আগের কয়েকদিন। এই সময়ে অন্য সময়ের তুলনায় বিক্রিও হয় বেশি। আর ঢাকায় যারা ঈদ করেন, তাদের অনেকে ভিড় করেন ঈদের আগের রাত বা চাঁদ রাতে।
রাজধানীর নিউ মার্কেট, গাউছিয়া ও চাঁদনী চকের দোকানগুলোতে শাড়ি, থ্রিপিস, ছোটদের পোশাক, পাঞ্জাবি, পায়জামা, টিশার্ট, জুতা ও গয়নার পাশাপাশি সাজসজ্জার সব ধরনের পণ্য বিক্রি হয়। এ ছাড়া এখানকার ফুটপাতে বা সড়কে পাশে বসা দোকানগুলোতে ব্যাপক ক্রেতা সমাগম হয়।
ঈদের এক সপ্তাহ আগেই এ এলাকার মার্কেটগুলো বেচাকেনায় জমজমাট হয়ে উঠেছে। ব্যাপক ভিড়ের কারণে নিউ মার্কেটে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অস্থায়ী তথ্য ও সেবা কেন্দ্র বসানো হয়েছে। সেখান থেকে মাইকে বিভিন্ন বিষয়ে ক্রেতাদের সতর্ক করা হচ্ছে।
নিউ মার্কেটের নিচতলায় মেয়েদের থ্রি-পিস ও ওড়নার দোকান যাহিদ ফেব্রিক্সের বিক্রয়কর্মী মো. জাফর ইসলাম বলেন, “বেচা-বিক্রি আছে, আমাদের এখানে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকার থ্রি-পিস আছে। তবে কমদামগুলোর বিক্রি অনেক ভালো।”
এ মার্কেটের দোতলায় জান্নাত ফ্যাশনের বিক্রি হয় ছেলেদের প্যান্ট ও শার্ট, যা পাওয়া যায় ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকায়।
বিক্রি কেমন হচ্ছে, এ প্রশ্নে জান্নাত ফ্যাশনের মালিক আল আমিন বলেন, “বেচাবিক্রি ভালোই হচ্ছে। শুক্র-শনিবার ভালো ভিড় ছিল। আজকে একটু কম, তবে কাল থেকে চানরাত পর্যন্ত ভিড় বাড়বে। বেচাবিক্রিও ভালো হবে।”
গাউছিয়া মার্কেটের নূর ম্যানশন শাখার বি প্লাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোবারক হোসেন বলছেন, মার্কেটটিতে শাড়িতে হাতের কাজ ও মেশিনের কারুকার্যের পাশাপাশি স্ক্রিন বা ব্লক প্রিন্ট ও হাতে আঁকা ফুল-পাতা আর বিভিন্ন নকশার জামার চাহিদা বেশি।
তিনি বলেন, “আমাদের এখানে দেশীয় ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই শাড়িগুলো বানানো হয়। ক্রেতাদের অনেকেই আমাদের দোকানের সাথে পরিচিত, বেচাবিক্রি ভালো।”
তবে গাউছিয়া মার্কেটের তৃতীয় তলায় বোরকার দোকান এআর বোরকা হাউজে বিক্রি নিয়ে হতাশার কথা বললেন বিক্রয়কর্মী মো. সাগর মিয়া। তার কথায়, “এখন বোরকার বেচাকেনার সময় না, ঈদের আগে বোরকা চলে কম। তারপরেও কিছু চলত, এখন একেবারেই ব্যবসা নাই।”
চাঁদনীচক মার্কেটের দ্বিতীয় তলার আলমস ফেব্রিক্সের দোকানি মাহফুজ আলম তানভীরও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “দোকান খোলার পর থেকে লোকজন আসতেছে, কাপড় দেখে দাম শুনে চলে যায়। এখন কেন জানি সবাই ১০ দোকান দেখে কমে কেনার জন্য অন্যখানে চলে যায়। অন্তত ৩০-৪০ জনকে কাপড় দেখাইছি, বিক্রি করতে পেরেছি মাত্র এক পিছ।”
তিনি বলেন, “মার্কেটে ঘুরলে মনে হবে ভিড় প্রচুর বেচাবিক্রি ভালো, কিন্তু ক্রেতারা দাম কমে নেওয়ার জন্য ঘুরতে থাকে। অন্য বছরের তুলনার বেচাকেনা একেবারেই কম। গতকাল (সোমবার) ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। শুক্রবারে প্রায় একলাখের উপরে বিক্রি হয়েছে। দেখা যাক আরও কয়েকদিন সামনে আছে, কী হয়।”
ঈদ ঘিরে ভিড় বাড়ে গাউছিয়া, চাঁদনী চকে গয়না ও সাজসজ্জার দোকানগুলোতে। পছন্দের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না কেনেন ক্রেতারা। যদিও এবার ঈদে ক্রেতা বেশি না পাওয়ার কথা বলছেন সেখানকার বিক্রেতাদের কেউ কেউ।
গাউছিয়া, চাঁদনী চকে ধাতু ও কাঠের তৈরি আংটি ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায় গলার মালা ও কানের দুলের সেট।
রূপার ওপর মিনাকারির কাজ, কৃত্রিম মুক্তা, পাথর দিয়ে সাজানো গলার মালা, কানের দুল, চুড়ি, আয়না, কাপড় ও সুতার তৈরি গয়না পাওয়া যায় কম দামে। সেইসঙ্গে বড় পাথরের কানের দুল, তিন থেকে চার পাথরের কানের দুল শাড়ি বা বা অন্য কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়।
গাউছিয়া মার্কেটের তৃতীয় তলার গয়না বাজার দোকানের মালিক রানা রায় বলেন, “আমাদের এই জুয়েলারি মার্কেটটি মূলত বিভিন্ন অনুষ্ঠান নির্ভর। এখন তো অনুষ্ঠান নেই। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে বেচাকেনা হলেও এবার সেটা ‘একেবারেই নাই’। আপনি পুরো মার্কেট ঘুরে দেখেন কয়জন ক্রেতা আছে। এমনিতেই ‘ডাল মার্কেট’, আবার মানুষের কাছে টাকা পয়সা নাই, ক্রেতাও নাই।”
পার্ল গ্যালারির দোকানি সাগর সাহা বলেন, “রমজান মানে আমাদের বেচাকেনা সাধারণত থাকে না। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার সেই ক্রেতাও নেই।”
চাঁদনি চক ও গাউছিয়ার দোকানগুলোতে ১২ পিসের এক সেট মখমল কাপড় লাগানো কাচের চুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে রেশমি কাচের চুড়ি।
“কাপড় কিনতে এসে মিল করে অনেকে শখের চুড়ি নিয়ে যায়, বেচাকেনাও মোটামুটি ভালো,” বলেন এক বিক্রেতা।