গত ৫ অগাস্ট সরকারের পতনের দিন থেকে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অনেক গা ঢাকা দিয়েছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
Published : 17 Aug 2024, 12:43 AM
বিশেষ পরিস্থিতি স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অপসারণে অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে একটি খসড়া অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
এতে এসব পদে প্রশাসক নিয়োগে সরকারের ক্ষমতাও যুক্ত করা হয়েছে।
গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থক চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলররা অনুপস্থিত থাকায় নাগরিক সেবা ব্যাহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব দেওয়ার এক আট দিনের মাথায় এ উদ্যোগ নিল।
শুক্রবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশগুলোর খসড়া অনুমোদন হয় বলে জানিয়েছে তথ্য অধিদপ্তর।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশগুলোর সংযোজনগুলো হচ্ছে-
সিটি করপোরেশন
১৩ক। বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়র এবং কাউন্সিলরগণের অপসারণের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা
(১) এই আইনের অন্যান্য বিধানে কিংবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার, অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং কাউন্সিলদেরকে অপসারণ করতে পারবে।
(২) বিধি দ্বারা নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ, সরকারি গেজেটে আদেশ দ্বারা, উপধারা (১) এর মাধ্যমে বর্ণিত মেয়র এবং কাউন্সিলর-এর অপসারণ কার্যকর করিতে পারিবে।
২৫ক। বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা
(১) এই আইনের অন্যান্য বিধানে কিংবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনে নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ করে অথবা পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত এর কার্যাবলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দিতে পারবে।
(২) সরকার, প্রয়োজনবোধে, যথাযথ বলিয়া বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা প্রদানের জন্য নিয়োগ করতে পারবে।
(৩) উপধারা (১) অনুযায়ী নিযুক্ত প্রশাসক এবং উপধারা (২) অনুযায়ী নিযুক্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ যদি থাকে, যথাক্রমে মেয়র ও কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
পৌরসভা
ধারা-৩২ক। বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভার মেয়র বা কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে।
ধারা-৪২ক। বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভায় একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে পারবে।
জেলা পরিষদ
ধারা-১০ক। বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে অপসারণ করতে পারবে।
ধারা-৮২ক। বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে।
উপজেলা পরিষদ
১৩ঘ। বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বা অন্য সদস্যগণকে অপসারণের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা এবং
১৩ঙ। বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি ও তার সঙ্গে থাকা দলগুলোর বর্জনের কারণে স্থানীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে প্রায় সব জনপ্রতিনিধিই আওয়ামী লীগের বা দল সমর্থিত।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন থেকে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অনেক গা ঢাকা দিয়েছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর হয়েছে, কোথাও কোথাও অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে, হামলাও হয়েছে অনেক জনপ্রতিনিধির ওপর।
এ কার্যক্রম সচল রাখতে ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা দিয়ে অফিস আদেশও জারি করা হয়েছে।
দেশে বর্তমানে ১২টি সিটি করপোরেশন, ৬৪ জেলা পরিষদ, তিন শতাধিক পৌরসভা ও পাঁচ শতাধিক উপজেলা পরিষদে মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছে কয়েক হাজার।
আরও পড়ুন: