“বুধবার বৈঠকে কমিশনের অনুমোদন পেলে আমরা সংশ্লিষ্টদের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়ে দেব,” বলেন আব্দুল মমিন।
Published : 23 Apr 2025, 08:18 AM
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটগ্রহণ কোন পদ্ধতি হবে তা নিয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিসহ অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
চলতি মাসের শেষ দিকে দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনে প্রায় ৪০০ অংশীজন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ চার নির্বাচন কমিশনার সংলাপে উপস্থিত থাকবেন।
তার আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকলজি-এমআইএসটির প্রতিবেদন নিয়ে বুধবার বসছে নির্বাচন কমিশন-ইসি।
প্রবাসীদের ভোট নেওয়ার লক্ষ্যে সম্ভাব্য তিন পদ্ধতি- পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ভোটিং ও প্রক্সি ভোটিং নিয়ে নির্বাচন কমিশন ৮ এপ্রিল কারিগরি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছিল।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ইতোমধ্যে বলেছেন, চূড়ান্ত পদ্ধতি নির্ধারণে প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে একটি ‘অ্যাডভাইজারি টিম’ থাকবে। তিনটি পদ্ধতির সফলতার সম্ভাবনা ও দুর্বলতার দিক পর্যালোচনা করে কী করে দুর্বলতা কাটানো যায়, সে ব্যবস্থা তারা করবেন। এরপর নির্বাচন কমিশন অংশীজনদের সঙ্গে বসবে।
ভোট পদ্ধতির সম্ভাব্যতা নিরূপণ, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১২ সদস্যের এই অ্যাডভাইজরি টিম করেছে ইসি সচিবালয়।
নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ‘অ্যাডভাইজরি টিম’ গঠন করা হয়েছে। তিন পদ্ধতির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলজি-এমআইএসটি বিশেষজ্ঞরা রোববার ও সোমবার তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
সুবিধা-অসুবিধা-সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে
সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেছেন, এমআইএসটিসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে কমিশন।
পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ভোটিং ও প্রক্সি ভোটিং–এ তিনটি পদ্ধতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে কী কী করতে হতে পারে, কী সমস্যা হতে পারে এবং কী ধরনের সীমাদ্ধতা রয়েছে সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে।
কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিকে এখনই উপযুক্ত বলে মতামত দেওয়া হয়নি বলেছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ।
বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা প্রাথমিক একটা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। শিগগির আরেকটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তিনটি প্রতিষ্ঠান (বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এমআইএসটি) আলাদা আলাদা প্রতিবেদন দেবে।”
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আবারও আলোচনা হতে পারে। কমিশনই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরাও প্রতিবেদন দিয়েছি। তিন ভোট পদ্ধতি করতে গেলে কোনটার কী অসুবিধা, কোন পদ্ধতিতে কী সুবিধা এবং পদ্ধতিগুলোর সীমাবদ্ধতা কী- তা তুলে ধরা হয়েছে আমাদের প্রতিবেদনে।”
সংলাপ হতে পারে ২৮-২৯ এপ্রিল
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী অধিশাখা ) মো. আব্দুল মমিন সরকার বলেছেন, বুধবার নির্বাচন কমিশনে প্রবাসীদের ভোটদান পদ্ধতি নিয়ে তিনটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা হতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার সময়সূচি চূড়ান্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, ২৮ ও ২৯ এপ্রিল এ সংলাপে হতে পারে, যেখানে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের প্রায় ৪০০ জন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
এই কর্মকর্তা বলেন, “বুধবার বৈঠকে কমিশনের অনুমোদন পেলে আমরা সংশ্লিষ্টদের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়ে দেব।”
আমন্ত্রিতদের মধ্যে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত অর্ধশত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, নির্বাচন ব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণ, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচন কমিশন বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠনসহ নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।
কারিগরি বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কয়দিন, কীভাবে, কখন সংলাপ হবে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এসব বিষয় চূড়ান্ত হবে বলেছেন আব্দুল মমিন।
অ্যাডভাইজরি টিমে যারা আছেন
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটদান পদ্ধতির সম্ভাব্যতা নিরূপণ, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে (লিডার) ১২ জনের অ্যাডভাইজরি টিম গঠন করা হয়েছে।
এই টিমের সমন্বয়ক হলেন- নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আইসিটি শাখার সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হক।
বাকি ১০ সদস্য হলেন- এমআইএসটির সাবেক কমান্ডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ওয়াহিদ-উজ-জামান, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালিম আহমাদ খান, নির্বাচন কমিশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ জাকারিয়া ও আইন শাখার যুগ্মসচিব মো. ফারুক আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) প্রশাসক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (কনসুলার ও ওয়েলফেয়ার), এমআইএসটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট।
৯ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ‘বদ্ধপরিকর’।
“আমরা যাই করি না কেন, যে সময়টা আমরা পাব, তার মধ্যেই কাস্টমাইজ করতে হবে। তাই সময় না পেলে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। ইসি একটা দিনও সময় নষ্ট করছে না। তবে কোন পদ্ধতিতে হবে, সেটা কারিগরি টিম কাজ করার পর চূড়ান্ত হবে।”
পুরনো খবর:
যেকোনো পরিসরে ভোটের আওতায় আসবে প্রবাসীরা: ইসি
অংশীজনরা মত দিলে স্বল্প পরিসরে 'প্রক্সি ভোট': ইসি
প্রবাসীদের প্রক্সি ভোটিং কতটা নিরাপদ?