দিনের দ্বিতীয় বলেই যে শট খেলে আউট হলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, সেটিকে বলা যায় স্রেফ আত্মহত্যা।
Published : 23 Apr 2025, 02:30 PM
দিনের প্রথম বলটি ইয়র্কার। নাজমুল হোসেন শান্ত সম্ভবত এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। একটু অস্বস্তিতে পড়লেও তা ঠেকিয়ে দিতে পারলেন তিনি। তবে পরের বলেই যে শট খেললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, সেটির ব্যাখ্যা হতে পারে “মরিবার হলো তার সাধ…।”
কবির ভাষায় তো আর ক্রিকেট চলে না। পঞ্চমীর চাঁদ ডুবে যাওয়ার মতো ব্যাপারও এখানে নেই। তাই শান্ত যা করলেন, সেটির ব্যাখ্যা পাওয়া কঠিন।
অনেক সময় দেখা যায়, ব্যাটসম্যানদেরকে কয়েকটি শর্ট বল করে ব্যাকফুটে টেলে আচমকা ইয়র্কার করে বসেন পেসাররা। অপ্রস্তুত ব্যাটসম্যানরা সেই ফাঁড়ে পড়ে যান কখনও কখনও। এবার দেখা গেল উল্টো। ইয়র্কার দিয়ে দিনের শুরুর পর দ্বিতীয়টিই শর্ট ডেলিভারি।
খুব দারুণ কোনো শর্ট বল অবশ্য সেটি নয়। ব্লেসিং মুজারাবানির বলে গতি এমনিতেই খুব বেশি নেই। ওই ডেলিভারির লাইনও খুব ভালো ছিল না। নিরীহ একটি শর্ট ডেলিভারি। সেটিই হয়ে উঠল শান্তর হন্তারক। কিংবা বলা যায়, আত্মহত্যার জন্য সেই ডেলিভারিকেই বেছে নিলেন শান্ত।
পুল শট এমনিতে খারাপ খেলেন না শান্ত। তবে এটা তো ব্যাটিংয়ের একটি মৌলিক ব্যাপার যে, হাতে কত বেশি শট আছে, এর চেয়ে বেশি জরুরি কোন শট কখন খেলতে হবে!
কিছুক্ষণ পর ওই ডেলিভারিই পেলে হয়তো চার-ছক্কা মারতে পারতেন শান্ত, কিংবা মাঝব্যাটে লাগতে পারত বা আউট হতেন না। ততক্ষণে তার শরীর চাঙা থাকত, রিফ্লেক্স আরেকটু ভালো থাকত, আলোর সঙ্গে সয়ে উঠত চোখ। আগের দিন যদিও দারুণ ব্যাট করে ৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি, নতুন দিনে তবু নতুন শুরু ও সবকিছুর সঙ্গে নতুনভাবে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার ছিল। বিশেষ করে নতুন দিনের সকালে উইকেটের গতি ও বাউন্সের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় নিজেকে তো দিতেই হয়। বিশেষ করে পুল শট খেলার জন্য তা খুবই জরুরি।
শান্ত সেটিই ভুলে গেলেন।
দিনের মাত্রই শুরু। তার শরীর তখনও কেবল আড়মোড়া ভাঙছে। চোখ দুটো তখনও মাঠের আলোতে সয়ে ওঠেনি। উইকেটের গতি ও বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নেয়নি ব্যাটসম্যানের সহজাত প্রবৃত্তি। অথচ শান্ত বেছে নিলেন ঝুঁকির পথ। কিংবা নিজেকে নিয়ে গেলেন আত্মহত্যার মঞ্চে।
শুধু দিনের শুরু বলেই নয়, শান্তকে কাঠগড়ায় তোলা যায় আরও অনেক কারণে। দলের অধিনায়ক তিনি। নড়বড়ে জায়গা থেকে দলকে নিরাপদ ঠিকানায় নিয়ে যাওয়ার ভার তার। এই ইনিংসে দলের সেরা ব্যাটারও তিনি। ৬০ রানে অপরাজিত আছেন। নতুন ব্যাটেই তাকিয়ে গোটা দল।
তিনি যা করলেন, সেটিকে বলা যায় দায়িত্ব আর পরিস্থিতিকে স্রেফ বুড়ে আঙুল দেখানো।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম শান্তর এমন ব্যাখ্যাতীত শটের স্বাক্ষী হয়েছে আগেও। ২০২৩ সালের নভেম্বরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে বেশ আগ্রাসী শুরু করার পর অফ স্পিনার গ্লেন ফিলিপসের ফুল টসে আগেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে দৃষ্টিকটূভাবে আউট হয়েছিলেন তিনি।
সেবারও তার শট নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ এক সেঞ্চুরি করে পুষিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। দলও পেয়েছিল জয়ের স্বাদ।
এবার এই শট পুষিয়ে দেওয়ার সুযোগ তার সামনে আর নেই। বরং জিম্বাবুয়েকে বড় লক্ষ্য দিতে তার ব্যাটই ছিল দলের ভরসা। অথচ তিনিই রণেভঙ্গ দিয়ে ফেরেন সাতসকালে।
প্রথম ইনিংসে একের পর এক ব্যাটসম্যান যেভাবে আউট হয়েছেন, প্রশ্ন উঠেছিল তাদের দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে। ম্যাচ সচেতনতায় ঘাটতি বা ম্যাচ পরিস্থিতি পড়তে না পারার সমস্যা তো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চিরন্তন।
এবার শান্তর এমন আউট আরও একবার যেন বুঝিয়ে দিল, এসব থেকে মুক্তি নেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের।