“বিরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে নিজের সঞ্চয় ভেঙ্গে ১৬ বছর আগে স্কুটি কিনে ফেলি। মহিলা সিট ছাড়তে চাইত না পুরুষরা, ব্যাড টাচ করত। আমি চাই না মেয়েরা বাসে উঠে হয়রানির শিকার হোক। তাদের বাইক কিনে স্বাধীনভাবে চলতে বলি।”
Published : 08 Mar 2024, 07:38 AM
সংসারের চাকা ঘোরাতে বেছে নিয়েছিলেন দুই চাকার বাহন, কণ্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে ছুটেছেন সমালোচনার দেয়াল ভেঙে, সেই পথেই এখন অনেকে চলছেন দুর্বার গতিতে।
যে সমাজে মেয়েদের একলা চলা ‘নিরাপদ নয়’, পথ-ঘাটে নানান ভয়, সেই ভয়-ডর তুচ্ছ করেই জয় করছেন সব প্রতিকূলতা; দুই চাকার বাহন নিয়ে তারা ছুটছেন, কেউ কেউ আয় করছেন, সংসারে ভূমিকা রাখছেন।
একটা সময় ছিল, যখন কোনো নারী বাইক চালিয়ে গেলে রাস্তার মানুষ হা করে তাকিয়ে থাকত। দুই যুগ আগে তেমনই এক সময়ে বাইক চালিয়ে কর্মস্থলে আসা-যাওয়া শুরু করেন রোজেন মাহমুদ।
একসময় স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। জীবিকা আর সন্তানদের পড়ালেখার প্রয়োজনে এখনও বাইকই তার ভরসা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই নারী বলেন, “২০১২ সালের দিকে সমস্যা শুরু হয়, সংসারের হাল একাই ধরতে হয়। পরিবার নিয়ে তখন চলে যাই বড় বোনের বাসায়।
“কিন্তু ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ মেনটেইন করার জন্য চাকরিটা ছাড়িনি। সব দেখভাল একাই করতে হয়। মেয়েকে বাইকে করে কোচিংয়ে নিয়ে যেতাম। এখনো প্রয়োজনীয় সব যাতায়াত বাইকেই করি।”
রোজেন মাহমুদের ছোটবেলা কাটে নোয়াখালীতে। সেখানে তিনি বিভাগীয় পর্যায় পর্যন্ত সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পরিবারসহ চলে আসেন ঢাকায়।
তিনি জানান, মিরপুর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াতে গণপরিবহনে নানা হয়রানিতে পড়তে হত। সেসময় বাইক কেনার চেষ্টা করলেও পরিবার রাজি ছিল না। তবে বন্ধুদের বাইক নিয়ে চালাতেন মাঝেমধ্যে।
১৯৯৯ সালে ব্র্যাকে চাকরি নেন। বাইক নিয়ে কাজ করেন ময়মনসিংহের ভালুকা ও গাজীপুরে। পরের বছর চলে আসেন ঢাকায় ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে।
“বাসে ওঠা ঝামেলা, তাই অনেককে বাইক চালানো শিখিয়েছি। বাসস্ট্যান্ডে বাসে ওঠার চেষ্টা করছে, এমন অনেক মেয়েকে লিফটও দিয়েছি,” বলেন রোজেন মাহমুদ।
তার মত দেশের অনেক নারীই এখন শহরের পথে বাইক বা মোটর সাইকেল নিয়ে ছোটেন। কেউ প্রয়োজনে, কেউবা শখে।
শহরের গণপরিবহনে ভিড় ঠেলে চলাফেরার চেয়ে একা বাইক নিয়ে চলাটাকে তারা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক মনে করেন। তবে এখনও অনেকে মেয়েদের বাইক চালানো সহজভাবে নেয় না। ফলে শিকার হতে হয় হয়রানির।
১৯৯১ সালে রংপুরে ব্র্যাকের মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছিলেন শামিনা সুলতানা। প্রথম ছয় মাস বাইসাইকেল চালিয়ে গেলেও পরে প্রায় দুই বছর বাইক চালিয়ে কর্মস্থলে যান। পরে চলে যান প্রশিক্ষণ বিভাগে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাইক নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সহজে মুভ করতে পারতাম। পরে প্রশিক্ষণ দিতে বিভিন্ন জেলায় যেতে হত, তাই বাইক চালাতাম না তখন।”
শামিনা সুলতানা ২০০৮ সালে চলে আসেন ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে। তখন যাতায়াতের সময় কমিয়ে আনতে কেনেন স্কুটি। বর্তমানে তিনি ব্র্যাকের লজিস্টিক বিভাগে আছেন।
লালমাটিয়ার এই বাসিন্দা বলেন, “মেয়েকে স্কুটির পেছনে নিয়ে ভার্সিটিতে যেতাম। আমার স্বামীও ব্র্যাকে ছিলেন। উনাকেও পেছনে দুয়েকবার নিয়েছি। লজ্জা পায়, উঠতেই চায় না।
“স্কুটি নিয়ে এখনো বাজার করতে কারওয়ান বাজার যাই, অফিসে, বিভিন্ন প্রোগামে যাই।”
আশির দশকের শেষে এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুতে মাঠপর্যায়ের নারী কর্মীদের যাতায়াতের জন্য বাইসাইকেলের পাশাপাশি বাইক দেওয়া শুরু করে ব্র্যাক। কর্মীদের ব্র্যাক থেকে ঋণ নিয়ে বাইক কেনার সুযোগ ছিল তখন। সেই টাকা মাসে মাসে বেতন থেকে সমন্বয় করা হত। সেসময় প্রশিকা ও গ্রামীণ ব্যাংকও এমন সুযোগ চালু করে।
এর প্রভাব অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সমাজেও পড়েছে বলে জানান ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সামগ্রিকভাবে নারীদের উন্নয়নে ‘বিশাল ভূমিকা’ রেখেছে। এটাকে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে নিয়েছিলেন আবেদ ভাই (ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ)।”
বর্তমানে নারীরা নিজেদের পথ নিজেরাই তৈরি করে নিচ্ছে বলে মনে করেন রোজেন মাহমুদ ও শামিনা সুলতানা।
রোজেন মাহমুদের ভাষ্য, “বাইক চালিয়ে অফিসে চলে গেল, কারোর সঙ্গে কোনো ঝামেলা হল না। বাসার বাজার করতে পারছে, বাচ্চাদের স্কুল-কলেজে নিয়ে যেতে পারছে।”
বাসের হয়রানি এড়াতে প্রায় এক বছর ধরে স্কুটি চালিয়ে রামপুরা থেকে কাকরাইলে অফিস করছেন সাগরিকা সুলাইমান। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গাদাগাদি করে বাসে ওঠা লাগে, বিভিন্ন মানুষের মানসিকতা বিভিন্ন রকম। নিজের স্বাধীন মত যাওয়া আসা যায় বাইকে। সময়টাও বাঁচে অনেক।”
দুই সন্তান, মা আর ভাইকে নিয়ে সাগরিকার পরিবার। স্বামী নতুন সংসার করেছেন, খোঁজও নেন না।
সাগরিকা বলেন, “বাবার মৃত্যুর পর মা প্যারালাইজড হয়ে গেলেন। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সরকারি চাকরি করতেন। তার ভাতা, পেনশন আর আমার স্যালারি এসব দিয়ে চলে যায়।”
যাত্রীও টানেন শাহনাজ-স্বপ্নারা
চাকরি চলে যাবার পর ২০১৬ সালে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘পাঠাও’ সম্পর্কে জানতে পারেন রাজিয়া স্বপ্না। চলে যান ‘পাঠাও’ অফিসে। সেখানে নিবন্ধন করে বাইকে যাত্রী নিয়ে ছোটা শুরু করেন।
এর আগে এক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করা স্বপ্না বলেন, পরিবারে মা আর ভাই থাকলেও তারা আলাদা থাকেন। ফলে আয় নিয়ে ভাবতে হয়েছে একটু বেশিই।
“চিন্তা করলাম কীভাবে কী করা যায়। চাকরি পাওয়াটাও কঠিন। (বাইক চালিয়ে) খরচ চালানোর টাকাটা উঠে যেত। ১৫ দিন পর সেরা নারী বাইকারের ব্যাজ পাই। সাথে স্কুটি ট্রেইনিংও দিতাম।”
তবে বছর খানেক পরেই পথচারীদের কটাক্ষের মুখে পাঠাও ছেড়ে দেন স্বপ্না। এখন ব্যক্তিগতভাবে এলাকার নারীদের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিচ্ছেন খিলগাঁওয়ের এই বাসিন্দা।
স্বপ্নার ভাষ্য, “অ্যাপে রাইড নিলে অনেক ছেলেরাও ওঠে। এটা ভালোভাবে নিত না তারা।”
দশ বছরে ৫০ জন নারীকে স্কুটি চালানো শিখিয়েছেন তিনি। বাইক চালানোর আগে বাসে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে এই নারী বলেন, “বিরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে নিজের সঞ্চয় ভেঙে ১৬ বছর আগে স্কুটি কিনে ফেলি। মহিলা সিট ছাড়তে চাইত না পুরুষরা, ব্যাড টাচ করত। আমি চাই না মেয়েরা বাসে উঠে হয়রানির শিকার হোক। তাদের বাইক কিনে স্বাধীনভাবে চলতে বলি।”
মিরপুরের বাসিন্দা শাহনাজ আক্তার পুতুল বিভিন্ন স্টেশন আর রাস্তার মোড় থেকে যাত্রী নিয়ে পৌঁছে দেন গন্তব্যে। পাশাপাশি ডেলিভারি দেন খাবারও।
স্বামীর কোনো আয় না থাকায় বাচ্চা আর সংসারের খরচ চালাতে খালাত ভাইয়ের পরামর্শে ছয় বছর আগে অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। মাঝে এক যাত্রীর মাধ্যমে চুরি হয় তার স্কুটি। তবে একদিনেই তা উদ্ধার হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অ্যাপে তেমন ভাড়া আসে না, পোষায় না, তাই ছেড়ে দিয়েছি। এখন সেও কাজকর্ম করে, আমিও পাশাপাশি করছি।
“পাঠাওয়ে আসার আগে সংসার চালাতে চায়ের দোকান থেকে থ্রিপিস বিক্রি সবই করেছি।”
স্বামী-সন্তান আর মা-বোন নিয়ে শাহনাজের পরিবার। তার মায়ের দুই পায়েই সমস্যা। সংসারের সবকিছু এখন তাকেই দেখতে হয়।
প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন তারা
ছয় বছর ধরে স্কুটি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা আফরোজা খান। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যার মধ্যে পুরুষও রয়েছেন ৪০ জন।
আফরোজা ২০১৮ সালে স্কুটি কিনেছিলেন শখের বশে। তখন ইয়ামাহা মোটরসাইকেল কোম্পানি প্রশিক্ষণের জন্য একটা সেশন চালু করে। সেখানে প্রশিক্ষক হিসেবে ডাক পান। তারপর ইয়ামাহার প্রশিক্ষক হিসেবে পরিচিতিও পান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এক আপু তার পরিচিতজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেন। তিন-চার জনকে শেখানোর পর দেখলাম আমি পারতেছি, তারপর আর থামিনি।”
প্রশিক্ষণার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে তাদের এলাকায় গিয়ে প্রশিক্ষণ দেন তিনি।
ছেলেদের বাইক প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “তারা শুরুতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত না, তবে তাদের টেকনিক বুঝিয়ে দেওয়ার পর অস্বস্তি দূর হয়।”
গণপরিবহনে নানাভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার কারণে নারীদের বাইক চালানোর প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করেন আফরোজা।
শখের বশে চার বছর আগে স্কুটি চালানো শুরু করেন রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা নুসরাত জাহান লাকি। পরের বছর থেকে আজিমপুর কলোনিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। এ পর্যন্ত ৩০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যার মধ্যে পুরুষও রয়েছেন ২৫ জন।
লাকি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথমে ভাগনিকে দিয়ে শুরু করি। সেটা দেখে একজনের পর আরেকজন আসতে শুরু করে। এখানে সবচেয়ে বড় সাপোর্ট ছিল আমার স্বামীর। তার সাপোর্ট না পেলে এখানে আসতে পারতাম না।”
প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতি মাসে তিনি আয় করেন প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তার ভাষায়, “একজনের আয়ে সংসার চালানোটা খুবই কঠিন। দুজনকেই আগায় আসতে হয়।”
২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজার জনকে মোটরসাইকেল, স্কুটি ও প্রাইভেটকার চালানো শিখিয়েছেন শেওড়াপাড়ার শামিমা আক্তার।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন তিনি, পাশাপাশি চাকরি করতেন প্রাণ আরএফএলের নরসিংদী অফিসে। কিন্তু রাস্তার দূরত্বের কারণে ছাড়তে হয় চাকরি।
শামিমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তখন মাথায় আসে ড্রাইভিংটা শেখা থাকলে হয়ত জবটা ছাড়া লাগত না। পরে আগারগাঁও বাণিজ্য মেলার মাঠে প্র্যাকটিস করতাম। এটা আমার আয়ের একটা উৎস ছিল, আর নারীদের পাশে থাকার জন্য শেখাতাম। পাঁচটা নারী আসলে পুরুষ তিনটা আসেই শিখতে।”
বাইক চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় হয় তার। শামিমা বলেন, “নিজের পড়ালেখা, থাকা-খাওয়ার খরচ চালিয়েছি। মা, ভাই-বোন আছে, এরা বাড়িতে থাকে; সেখানে খরচ পাঠাই।”
গায়ে মাখেন না কটাক্ষ
রোজেন মাহমুদ বলেন, ২০০০ সালের দিকেও মেয়েদের বাইক চালানোকে মানুষ ভালোভাবে নিত না। পরিবার ও সমাজ থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি পথে বের হলেও নানা বাজে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হত।
“ভালুকার মানুষ তো রীতিমত আপত্তি তুলত। এমনকি ঢাকার রাস্তায়ও নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তবে ইতিবাচকভাবে সবাইকে বুঝিয়ে আমি এগিয়ে গেছি।
“সেখানকার নারীরাও শিখতে চাইবে, পর্দা ছেড়ে দিবে…এসব বলত। কিন্তু আমরা পর্দা করেই গাড়ি চালাতাম। ঢাকায়ও বাস থেকে থুথু, রাস্তা থেকে ইট মারত। আমার স্বামীও বিষয়টা সহজভাবে দেখেনি। বাসে যাওয়ার সময় মানুষের ধাক্কা খেতে হয়, এটা আরো বেশি দৃষ্টিকটু- এসব বোঝানোর পর সে বুঝেছে।”
শামিনা সুলতানা বলেন, গ্রামের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে পোশাক পরার পরও মানুষ হয়রানি করত। বাস ও ট্রাকের চালকরা রাস্তায় জায়গা দিত না।
“মনে করত আজব জন্তু যাচ্ছে, টিজ করত। তারপরও চালিয়ে গেছি। তখন কোনো বাধাই মানতে ইচ্ছে করত না।”
আরেক নারী সাগরিকা সুলাইমান জানান, সরাসরি না বললেও অফিসেই অনেকে এ নিয়ে সমালোচনা করেন। রাস্তায় চাপ দিয়ে চলে যায়, তবে অনেকে ইতিবাচকভাবেও দেখেন।
“বেশি বাহাদুরি দেখায় রাস্তাঘাটে- এসব বলে। কিন্তু এসবে পাত্তা দেই না, পজিটিভটুকু নিই।”
আফরোজা খান তার এক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, “মহাখালীতে এক আঙ্কেল আমাকে দেখে থুথু মারছে। পরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এমন করল কেন। তখন সে উল্টা আরো দুইটা গালি দিয়ে চলে গেছে। সিএনজিওয়ালারাও অনেক সময় অনেক কথা বলত। একদিন এক সিএনজিওয়ালাকে ধরে সার্জেন্ট ডেকে, মাফ চাইয়ে ছেড়েছি। যাতে অন্য মেয়েদের সাথে এমনটা না করতে পারে।”
পথে পুলিশি জেরার মুখেও পড়তে হয়েছে বলে জানান শেওড়াপাড়ার শামিমা আক্তার। তিনি বলেন, “প্রশিক্ষণের সময়ও পুলিশ টাকা চাইত, রাস্তা ঘাটে লাইসেন্স থাকার পরও আটকে রাখত। একটা মেয়ে গাড়ি চালাচ্ছে, এটা ভালো চোখে দেখত না।
“এখনো অনেক ছেলে পেছন থেকে অনবরত হর্ন দেয়। তাদের ধারণা, নারীরা যথাযথভাবে গাড়ি চালাতে পারে না। তাকে জায়গা দিতে হবে, সে আগে যাবে। কিন্তু আমি এ সুযোগটা দিতে চাই না।”
অপরদিকে শাহনাজ আক্তার বলেন, “পরিবারে কোনো সমস্যা ছিল না। সমস্যাটা শুধু বাইরের মানুষের, কিন্তু কেয়ার করিনি।”