সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেছেন, আইন অনুযায়ী রায় দিয়েছে আদালত, সরকার ইউনূসকে কোনো ‘হয়রানি করছে না’।
Published : 01 Feb 2024, 02:17 PM
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সাজার রায়কে ঘিরে বাংলাদেশের ‘মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার’ চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়ে নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী রায় দিয়েছে আদালত, সরকার ইউনূসকে কোনো ‘হয়রানি করছে না’।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে গত ১ জানুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার কর্মকর্তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় শ্রম আদালত। তবে আপিলের শর্তে জামিন পাওয়ায় এই নোবেলজয়ীকে কারাগারে যেতে হয়নি।
ইউনূসকে ‘অব্যাহতভাবে’ হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর একটি চিঠি লেখেন যুক্তরাষ্ট্র সেনেটের ১২ সদস্য।
চিঠিতে লেখা হয়, “এক দশক ধরে বাংলাদেশে দেড় শতাধিক অপ্রমাণিত মামলা মোকাবেলা করছেন অধ্যাপক ইউনূস। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার টুর্ক এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মত মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার বিরুদ্ধে মামলার বিচারকাজে অনিয়মের বিষয় তুলে ধরেছে।
“এসব স্বনামধন্য সংগঠন যুক্তি দিচ্ছে, অপরাধের বিচারকাজের গতি ও বারবার তার ব্যবহারের বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচারিক হয়রানির ইঙ্গিতবাহী। পাশাপাশি, ইউনূসের অব্যাহত ও দীর্ঘমেয়াদী হয়রানির বিষয়টি বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ যে ক্রমবর্ধমান বদ্ধ পরিবেশে আছে, তার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।”
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আইনমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের মর্যাদা, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচারের ধারাবাহিকতাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি মামলাকে কেন্দ্র করে কিছু অপপ্রচার হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “সরকার কারো অঙ্গুলিতে হেলে না। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। আইন অনুযায়ী ড. ইউনুসসহ অন্যান্যদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে আদালত।"
ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন মুহাম্মদ ইউনূস। সেদিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার দিক থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। সরকার বারবার বলতেছে, সকল পর্যায়ে থেকে বলতেছে, এই মামলা সরকার করেনি। কিন্তু আপনারা তো (সাংবাদিক) সাক্ষী। আপনারা তো কোনো কিছু বলছেন না। এটা কি সরকার করল, নাকি শ্রমিক করল? এ জবাবটা আমাকে দেন।”
পরে ইউনূস নিজেই উত্তর দেন, “এটা কলকারখানা অধিদপ্তর, সরকারের অধিদপ্তর করেছে। শ্রমিকেরা করে নাই। শ্রমিকেরা এর কিছুর মধ্যে নাই।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আনিসুল হক বলেন, ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা করার আগে শ্রম অধিদপ্তর দুইবার পরিদর্শন করে তাদের সতর্ক করে চিঠিও দিয়েছিল। পরে আইনের কিছু ধারা লঙ্ঘন হওয়ায় অধিদপ্তর ওই মামলা করে।
নানা ধরনের সমালোচনা হওয়ায় সরকারের বক্তব্য তুলে ধরতেই সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন বলে জানান আইনমন্ত্রী।
ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার রায়ের পুরো প্রক্রিয়া এবং ১২০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও যুক্তরাষ্ট্রের ১২ জন সিনেটরের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, "কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, অপরাধ করলে সকলকেই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।"
সাগর-রুনি হত্যা মামলা
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তে ‘আরো সময় দিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন আইন মন্ত্রী আনিসুল হক।
এ মামলার ধীরগতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, “যদি পুলিশ তদন্ত শেষ না করতে পারে, তাহলে পুলিশকে জোর করে তদন্ত শেষ করিয়ে ফাইনাল রিপোর্ট বা চার্জশিট দেওয়াটা কি ঠিক?
“তদন্তে যতদিন সময় লাগে সঠিকভাবে দোষী নির্ণয় করার জন্য, তাদেরকে ততটুকু সময় দিতে হবে।"
তাহলে কি বিচারের আশায় পরিবারকে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হবে– এমন প্রশ্নও করা হয় আইনমন্ত্রীকে।
জবাবে তিনি তিনি বেলেন, “এটি একটি বিশেষ মামলা। যেগুলোর অপরাধী শনাক্ত হচ্ছে, সেসব মামলা তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হচ্ছে। আর যেসব শনাক্ত করা যাচ্ছে না, বা ধরা যাচ্ছে না, সেসব ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সময় দেওয়া প্রয়োজন।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় খুন হন বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি।
সেই রাতে সেই ফ্ল্যাটে তাদের দুজনের সঙ্গে ছিল তাদের একমাত্র সন্তান পাঁচ বছর বয়সী মাহির সরওয়ার মেঘ। তাকে উদ্ধৃত করে পুলিশ তখন জানিয়েছিল, খুনি ছিল দুজন।
আলোড়ন সৃষ্টি করা ওই হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর বছরের পর বছর গড়ালেও হত্যা রহস্যের কিনারা হয়নি।
হত্যাকাণ্ডের পর রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের রোমান। বিভিন্ন সময়ে মোট আটজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দুজন জামিনও পান।
প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্তে নামে। চারদিন পর তদন্তের ভার দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে।
তারা রহস্যের কিনারা করতে না পারায় হাই কোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দায়িত্ব পেয়ে ডিএনএসহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক পরীক্ষার জন্য ঘটনাস্থল থেকে বটি, পরিধেয় কাপড়সহ বেশ কিছু বস্তু পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবেও পাঠায় র্যাব। কিন্তু এতদিনেও তার ফল প্রকাশ করা হয়নি।