ইউনূসকে ‘হয়রানি বন্ধের’ আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১২ সেনেটরের চিঠি প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন জবাব।
Published : 23 Jan 2024, 08:56 PM
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে আদালত যে সাজা দিয়েছে, সেখানে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
ইউনূসকে ‘হয়রানি বন্ধের’ আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১২ সেনেটরের চিঠি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ওই প্রশ্নে হাছান বলেন, “আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নয়, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলব, দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলব, আদালতকেতো সরকার ডিক্টেট করতে পারে না। এটাতো আদালত শাস্তি দিয়েছে।
“এখানে ড. ইউনূসের প্রতি যথাযথ সম্মান জানিয়ে বলতে চাই, এখানে সরকার কোনো মামলায় পক্ষ নয়। ব্যক্তিবিশেষ, সংক্ষুব্ধ মানুষ, যারা শ্রমিক তারা মামলা করেছে, এবং সেই মামলায় তার শাস্তি হয়েছে।”
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে গত ১ জানুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার কর্মকর্তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় শ্রম আদালত। তবে আপিলের শর্তে জামিন পাওয়ায় এই নোবেলজয়ীকে কারাগারে যেতে হয়নি।
ইউনূসকে ‘অব্যাহতভাবে’ হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর একটি চিঠি লেখেন যুক্তরাষ্ট্র সেনেটের ১২ সদস্য। ওই চিঠির একটি কপি মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স-এ পোস্ট করেন তাদের একজন ডিক ডারবিন।
ডারবিনের সঙ্গে চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে টড ইয়াং, টিম কেইন, ড্যান সালিভান, জেফ্রি এ মার্কলি, এডওয়ার্ড জে মার্কি, জেন শাহিন, পিটার ওয়েলশ, শেরড ব্রাউন, শেল্ডন হোয়াইটহাউজ, রন ওয়াইডেন, করি এ বুকার রয়েছেন।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, “এক দশক ধরে বাংলাদেশে দেড় শতাধিক অপ্রমাণিত মামলা মোকাবেলা করছেন অধ্যাপক ইউনূস। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার টুর্ক এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মত মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার বিরুদ্ধে মামলার বিচারকাজে অনিয়মের বিষয় তুলে ধরেছে।
“এসব স্বনামধন্য সংগঠন যুক্তি দিচ্ছে, অপরাধের বিচারকাজের গতি ও বারবার তার ব্যবহারের বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচারিক হয়রানির ইঙ্গিতবাহী। পাশাপাশি, ইউনূসের অব্যাহত ও দীর্ঘমেয়াদী হয়রানির বিষয়টি বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ যে ক্রমবর্ধমান বদ্ধ পরিবেশে আছে, তার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।”
তাদের ওই চিঠির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হাছান মাহমুদ বলেন, “কংগ্রেসম্যানরা যদি সে রকম চিঠি দিয়ে থাকেন, তাহলে সরকারকে তারা বলছেন আদালতের উপর হস্তক্ষেপ করার জন্য। সরকার কি আদালতের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে? এটি করা কি সমীচীন? আমাদের দেশে এটা করা হয় না এবং এটি কোথাও করা সমীচীন নয়।”
উগান্ডার কাম্পালায় অনুষ্ঠিত ন্যাম সম্মেলন এবং তৃতীয় সাউথ সামিটে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার ব্রিফিংয়ে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দুই শীর্ষ সম্মেলনে কান্ট্রি স্টেটমেন্ট দেওয়ার পাশাপাশি সাইডলাইনে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘ মহাসচিব, কমনওয়েলথ মহাসচিবের সাথে বৈঠকসহ দু'দিনে ১৭টি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে তার।
সফরে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানানোর কথা তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, “প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি শুরু করতে বলেছি এবং তিনি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।”
বাণিজ্য বাড়ানোর আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আসার পর থেকে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য অনেকটাই কমেছে। আমরা আবার দেশটির সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেছি।
“মিয়ানমার থেকে নানাভাবে মাদক আসে এবং সেখানে বিভিন্ন গ্রুপ নিজেরা বিবদমান থাকলেও একত্রে মাদক ব্যবসায় জড়িত সেটি তারা স্বীকার করেছেন এবং এর প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে সম্মত হয়েছেন।”