বাংলা একাডেমি আচরণে ক্ষুব্ধ লিটলম্যাগকর্মীরা।
Published : 02 Feb 2023, 08:23 PM
অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিনেও আলো জ্বলেনি লিটলম্যাগ চত্বরে। আর তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ছোটকাগজগুলোর কর্মীরা।
তারা মনে করছেন, মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি সচেতনভাবেই লিটলম্যাগ চর্চাকে বইমেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর লিটলম্যাগ চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, অগোছালোভাবে রয়েছে লিটলম্যাগের স্টলগুলো। দু-একটি স্টল ছাড়া বেশিরভাগ স্টলেই এখন কোনো ব্যানার লাগানো হয়নি। চালু হয়নি কোনো স্টল। মেলা মাঠের ল্যাম্পপোস্টের আলোতেই বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন লিটলম্যাগ কর্মীরা।
প্রচ্ছদশিল্পী চারুপিন্টু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিলেন, “বইমেলা ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক খোলসে আটকে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক স্টলগুলো নিয়েই মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি ব্যস্ত।
“বিগত এক দশক ধরেই আমরা দেখছি, প্রতিবারই লিটলম্যাগ চত্বরকে নানাভাবে অবহেলা করা হয়। এবারও অবহেলা যে করছে তার প্রমাণ তো চোখের সামনেই। মেলার দ্বিতীয় দিনেও স্টলগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি।”
লিটলম্যাগ চত্বর কোথায় হবে তা নিয়ে প্রতি বছরই টানাহেঁচড়া হয় অভিযোগ করে থিয়েটার পত্রিকা ক্ষ্যাপার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাহবুব বললেন, “বাংলা একাডেমি থেকে মেলা যখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আনা হলো, তখনও লিটলম্যাগকে রাখা হলো বাংলা একাডেমি অংশে। তারপর লিটলম্যাগ কর্মীরা দাবি জানানোর পর লিটলম্যাগ চত্বরকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে আনা হলো।
“প্রথমবার দেওয়া হলো মুক্তমঞ্চের পাশে। পরের বছর হুট করেই কোনো কারণ ছাড়া মেলার পূর্ব দিকে নেওয়া হল। তারপর আন্দোলন করে লিটলম্যাগ কর্মীরা আবার মুক্তমঞ্চের পাশে নিয়ে আসল। তার পরের বছর মেলার মাঝামাঝি অংশে লিটলম্যাগ চত্বরকে দেওয়া হলো। সেই জায়গাটি অনেকেই পছন্দ করল। কিন্তু এবার কোনো কারণ ছাড়াই লিটলম্যাগ চত্বর করা হল মেলার উত্তর পাশে গ্রন্থ উন্মোচন মঞ্চের পাশে।”
এ ছোটকাগজকর্মীর প্রশ্ন, “মেলার মাঝের অংশটা বরাদ্দ দেওয়া হলো বাণিজ্যিক স্টলকে। লিটলম্যাগ চত্বরকে কি মেলার মাঝের অংশে রাখা যেত না? মুখে সবাই বলেন লিটলম্যাগ হল মেলার প্রাণ, এখানে ভিন্ন মননশীল চিন্তার প্রকাশ হয়। কিন্তু এই চত্বরটি নিয়ে এত টানাহেঁচড়া আর অবহেলা কেন?"
এবার ১৫৩টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে লিটলম্যাগ চত্বরে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি গেইট দিয়ে ঢুকলে মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে পাওয়া যাবে এই চত্বর।
ছোটকাগজকর্মী অরবিন্দ চক্রবর্তী মনে করছেন, বাংলা একাডেমি প্রতি বছর লিটলম্যাগ চত্বর নিয়ে ‘সচেতনভাবেই’ অবহেলা দেখিয়ে যাচ্ছে, যা শুরু হয়েছে এক দশক ধরে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলা একাডেমি হয়ত চায়, লিটলম্যাগ চত্বর মেলা থেকে উঠে যাক। মেলায় এখন খাবারের দোকান ভরে যাচ্ছে। ঠিকমতো বসার জায়গার ব্যবস্থা করা হবে না। যেন সবাই গিয়ে মেলার রেস্টুরেন্টে বসে।
“লিটলম্যাগ চত্বর মননশীল ও সৃজনশীল লেখক-পাঠকের আড্ডার জায়গা। লিটলম্যাগের সাথে বাংলা একাডেমির বিমাতাসুলভ আচরণ আমাদের ক্ষুব্ধ করে।”
মেলার দ্বিতীয় দিনেও লিটলম্যাগ চত্বরে কেন আলো জ্বলেনি, এ প্রশ্নের উত্তরে ওই চত্বরের দায়িত্বে থাকা বাংলা একাডেমির উপপরিচালক এ কে এম কুতুবউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লিটলম্যাগ চত্বরের জায়গা নিয়ে একটু দোদুল্যমানতা ছিল। আমরা যে জায়গাটি সিলেক্ট করেছি, সেটা লিটলম্যাগ কর্মীদের কেউ কেউ মানছিলেন না। পরে তারা মেনে নিয়েছেন।
“এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে এটা হয়নি। আমরা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে বলে দিয়েছি। আজকেই হয়ত লাইট দেওয়া হবে। আরও যে সমস্যা আছে, সেটাও দু-একদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”