তিনি বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে তিনি ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধরনের বক্তব্য’ হিসেবেই দেখতে চান।
Published : 02 Dec 2024, 09:12 PM
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে ভারত সরকারকে উদ্যোগ নিতে বললেন, তা বোধগম্য হচ্ছে না পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের।
তিনি বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে তিনি ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধরনের বক্তব্য’ হিসেবেই দেখতে চান।
সোমবার সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ের পর মমতার বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর যে ভোট ব্যাংক, সেই রাজনৈতিক বিবেচনাতেও তার এ বক্তব্য অনুকূল হবে না।
কূটনীতিক হিসাবে কাজের সুবাদে দীর্ঘদিন কলকাতায় থাকার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, “উনি এই বক্তব্য কেন দিলেন, এটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তার যে ভোট, সেটা আমি জানি; কলকাতায় দীর্ঘদিন ছিলাম, তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিতি। তার বাসাতেও আমার যাতায়াত ছিল।
“আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ না; রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। রাজনীতিবিদরা তো সবসময় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই বক্তব্য দিয়ে থাকেন।”
উপদেষ্টা বলেন, “আমি মনে করি, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তার অবস্থানের জন্য এটা হয়ত সহায়ক হবে না। এটা অবশ্য আমার মত, উনি নিশ্চিয় মনে করেন সহায়ক হবে।”
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর দেশের দায়িত্ব নেওয়া অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে বেশ সরব ভূমিকায় রয়েছে ভারতের গণমাধ্যম; যাকে ‘অতিরঞ্জিত’ এবং ‘সংঘবদ্ধ অপপ্রচার’ হিসাবে বর্ণনা করে আসছে বাংলাদেশ সরকার।
সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে দুদেশের সরকারের মধ্যে কয়েকবার বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষ, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে সংখ্যালঘুদের আট দফা দাবি আদায়ে মাঠে নামা সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনাও পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের সূত্রপাত ঘটিয়েছে।
এর মধ্যে সোমবার বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্য বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপও চেয়েছেন।
রাজ্যসভার অধিবেশনে মমতা বলেন, “আমাদের প্রস্তাব, কেন্দ্র রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে বাংলাদেশে শান্তিসেনা পাঠানোর আর্জি জানাক।”
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে যে টানাপড়েন চলছে, তাতে নতুন মাত্রা যোগ করল মমতার এই আহ্বান।
তিনি বলেন, “আমাদের পরিবার, সম্পত্তি এবং প্রিয় মানুষেরা বাংলাদেশে আছেন। ভারত সরকার এই বিষয়ে (বাংলাদেশ) যে অবস্থান নেবে, আমরা তা গ্রহণ করব। কিন্তু বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ধর্মীয় কারণে কেউ অত্যাচারিত হলে আমরা তার নিন্দা জানাই। আমরা এই বিষয়ে ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানাচ্ছি।”
কলকাতায় ইসকনের প্রধানের সঙ্গে কথা বলে সহমর্মিতা জানানোর কথা তুলে ধরে মমতা বলেন, “যদি বাংলাদেশে ভারতীয়রা আক্রান্ত হন, তবে আমরা তা সহ্য করব না। আমরা তাদের সেখান থেকে ফিরিয়ে আনতে পারি। ভারত সরকার বিষয়টা রাষ্ট্রপুঞ্জে (জাতিসংঘ) নিতে পারে, যাতে সেখানে শান্তিসেনা পাঠানো হয়।”
আনন্দবাজার লিখেছে, বিধানসভায় দেওয়া বক্তৃতায় মমতা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তার দল ও রাজ্য সরকারের অবস্থান আবারো স্পষ্ট করেছেন।
তিনি বলেছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের নেই। তাই তারা কেন্দ্র সরকারের পরামর্শ মেনে চলবেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার কলকাতা বিমানবন্দরেও মমতা সাংবাদিকদের একই কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যে অবস্থান নেবে তার প্রতি তিনি সমর্থন জানাবেন।
মমতার এই বক্তব্যকে বাংলাদেশ উপেক্ষা করবে না প্রতিবাদ করবে, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দেখেন…।”
দুদেশের মধ্যে পরিস্থিতি দিনে-দিনে খারাপ হচ্ছে, সামনের দিনগুলোকে কীভাবে দুদেশের কার্যক্রম চলবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “৫ (অগাস্ট) তারিখ একটা ঘটনা। এর আগের সম্পর্ক আর পরের সম্পর্ক পুরোপুরি এক নয়- আমরা সেটা জানি।
“এই যে সমস্যাটা আছে, সেটা স্বীকার করতে হবে। স্বীকার করি আমরা। কাজেই একটা সমস্যা হলে, সেটা সমাধানের চেষ্টা করা যায়। কারণ, চেষ্টা করাই স্বাভাবিক। আমরা ভারতের সাথে একটা স্বাভাবিক, ভালো, সুসম্পর্ক চাই; পরস্পরের স্বার্থ ঠিক রেখে।”
এক্ষেত্রে ভারতের আন্তরিকতা কতটুকু, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আন্তরিকতাতো মাপ-পরিমাপ করা কঠিন কাজ। এটা মিডিয়াকে মাপতে হবে, সময়ের আবর্তে কী কী ঘটনা ঘটে, কীভাবে ঘটে- সেটা দিয়ে আপনারা মাপবেন কতটা আন্তরিক।
“এখানে আসলে অন্তরের চেয়ে স্বার্থটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমি মনে করি। কারণ, ভারত-বাংলাদেশ উভয়ই, আমি মনে করি, সম্পর্ক এগিয়ে নেবে নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী।”
বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসালটেশনের (এফওসি) পরবর্তী পর্বে যোগ দিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের চলতি মাসের মাঝামাঝি ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
ভারতের সঙ্গে দিনকে দিনকে সম্পর্ক টানাপোড়নকে কেন্দ্র করে এফওসি হওয়া নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চতায় দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তৌহিদ হোসেন বলেন, “এফওসি হওয়ার কথা। আমি মনে করি হবে। এখন দুইপক্ষ একসাথ হতে হবে।”
ভারতের সঙ্গে টানাপড়েনের কারণে বাংলাদেশের স্বার্থ কতটা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা কীভাবে পরিমাপ করবেন। ধরুন, ভিসা বন্ধ। ভিসা বন্ধেতো আমাদের কিছু অসুবিধা হচ্ছে।”
আবার বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর সুবিধা হচ্ছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, “তারা কিন্তু এখানেও ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে। কাজেই, এটা ভারতের স্বার্থ কি-না, ভেবে দেখতে হবে। তাদের কলকাতার ব্যবসায়ীদের অবস্থা একটু খারাপ। পত্রপত্রিকায় লিখেছে এবং পরিচিতিজনরাও বলেছেন। এটা ভারতের স্বার্থ কিনা, সেটা ভারতকে দেখতে হবে।”
স্মিত হেসে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আবার বৃহত্তর স্বার্থে তারা যদি মনে করে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতি হোক, তবুও ভারতের সরকার অন্যটাতে… সেটা তারা বুঝবে। ভারতের স্বার্থও তো আমি বুঝতে পারব না।”
পুরনো খবর
বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠাতে কেন্দ্রের উদ্যোগ চান মমতা