পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারিতে মারা যাওয়া শিক্ষার্থীর বন্ধুরা এবং চিকিৎসকরা এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
Published : 31 Aug 2024, 11:56 PM
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারধর, ব্যাপক উত্তেজনা ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার সকালে মারা যাওয়া ওই শিক্ষার্থীর বন্ধুদের অভিযোগ, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তাদের বন্ধুকে হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসায় গাফিলতি করায় তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) এ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এদিন বিকাল ও সন্ধ্যায় হাসপাতালে অভিযোগ ও চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনা নিয়ে পাল্টাপাল্টিতে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে আসার পর মারা যাওয়া ওই শিক্ষার্থীর বন্ধুরা ‘গাফিলতির’ জন্য দায়ী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দাবি করেছেন। অন্যদিকে মারধরে শিকার হওয়া চিকিৎসকদের দাবি, মারধরকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। উভয় পক্ষই ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এ ঘটনায় কয়েক চিকিৎসকের ‘গায়ে হাত তুলেছে’ শিক্ষার্থীরা। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুর্ঘটনায় আহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আহসানুল ইসলাম দীপ্ত (২৫)। এক বন্ধুকে নামিয়ে দিয়ে মোটরসাইকেলে করে বিমানবন্দর থেকে মিরপুরের বাসায় ফেরার পথে তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন।
আহত দীপ্তকে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়।
দীপ্তর বন্ধু হাসিন আরমান আবিদ আরিফ বলেন, শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেলে দীপ্ত মার যায়। এ ঘটনায় চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ করছেন তিনি।
তার অভিযোগ, “চিকিৎসকের অবহেলার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে চলে এসেছি, যেন এই সময়ের মধ্যে তাদেরকে (চিকিৎসকদের) প্রত্যাহার করা হয়।”
দীপ্ত গাইবান্ধা সদর উপজেলার পশ্চিমপাড়ার শহিদুল ইসলামের ছেলে; মিরপুর ১ নম্বর সেকশনে একটি মেসে থাকতেন।
ক্যান্টনমেন্ট থানার এসআই আগষ্টিন মিল্টন কস্তা বলেন, প্রথমে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে পরিচয় পেয়ে খবর দেওয়া হলে পরিবারের লোকজন এসে ময়নতদন্ত ছাড়াই মরদেহ নিয়ে যায়।
এদিকে দীপ্তর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে বিকালে ঢাকা মেডিকেলের এক চিকিৎসককে ধরে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে নিয়ে যান তার বন্ধুরা। এ নিয়ে হাসপাতাল জুড়ে বেশ হট্টগোল শুরু হয়।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন বিইউবিটির উপাচার্য এবং শিক্ষার্থীদের কয়েকজন সমন্বয়ক। এ ঘটনায় চিকিৎসকদের মধ্যেও উত্তেজনা তৈরি হয়।
পরে হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে হাসপাতাল পরিচালক, উপাচার্য ও সমন্বকদের সঙ্গে চিকিৎসকদের বৈঠক হয়। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত উত্তেজনার পরিস্থিতিতে বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
দীপ্তর বন্ধু আরিফ বলেন, “আমরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে চলে এসেছি। পরে আমরা জেনেছি, আল্টিমেটামের পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসকেরা ‘কর্মবিরতির’ ডাক দিয়েছে।”
এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “আমাদের চিকিৎসকদের বেশ কয়েকজনের গায়ে হাত দিয়েছে তারা। এ পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসকরা ক্ষুব্ধ। তারা ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়েছে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
“এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবহিত করেছি। তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করবেন বলে জানিয়েছেন।”