‘স্বাচ্ছন্দ্যে’ বাড়ির যাওয়ার আশায় লঞ্চকেই বেছে নিয়েছেন অনেক যাত্রী।
Published : 29 Mar 2025, 10:52 PM
ঈদযাত্রায় টানা কয়েকদিনের যাত্রী খরার পর লঞ্চের ছাদেও যাত্রী দেখা গেছে, তবু ‘অতৃপ্তির’ কথা বলেছেন লঞ্চ কর্মীরা।
শনিবার ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামলাতে ‘বিশেষ’ সেবাও চালু করেছেন লঞ্চ মালিকরা।
যে কারণে সদরঘাটে লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় থাকলেও ‘স্বাচ্ছন্দ্যে’ বাড়ির যাওয়ার আশায় লঞ্চকেই বেছে নিয়েছেন অনেক যাত্রী।
মূলত শুক্রবার থেকে টানা নয় দিনের ছুটি শুরু হওয়ার দিন থেকে সদরঘাটে যাত্রীর ভিড় বেড়েছে।
শনিবার দিনের শুরুতেই গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেক বেশি যাত্রী দেখা গেছে।
এদিন সকালে চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী লঞ্চের পন্টুনে বেশ ভিড় দেখা যায়। দুপুর গড়ানোর সাথে সাথে বাড়তে থাকে যাত্রীদের ভিড়। বিকালে যাত্রীর ভিড় বেড়ে পল্টুনে দাঁড়ানোর ঠাঁই ছিল না।
টার্মিনালের পশ্চিম অংশে পটুয়াখালী রুটের লঞ্চ রাখা হয়। সেখান থেকে পূর্ব দিকে এগুতে থাকলে বরিশাল রুটের লঞ্চ, তার পরেই ঝালকাঠি, ভোলাসহ অন্যান্য জেলার লঞ্চ। পূর্ব প্রান্তের পন্টুন থেকে চাঁদপুর ও ঢাকার আশেপাশের জেলার লঞ্চ ছেড়ে যায়।
দুপুরে স্বস্তিতে পল্টুনের এক পাশ থেকে আরেক পাশে হেঁটে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও বিকাল গড়ানোর সাথে সাথে যাত্রীর ভিড়ে এক পল্টুন থেকে অন্য পল্টুনে যাওয়াই কঠিন হয়ে যায়। বিশেষ করে মালামাল ও ব্যাগসহ কোনোভাবেই যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।
এদিনে কুলিদেরও ছোটাছুটি ছিল। রবি নামে একজন বলছিলেন, “আজকা আমরা সবাই কাজ পাইতাছি। অন্য দিন বইসা থাকি।”
টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, চাঁদপুর, পটুয়াখালী ও ভোলা রুটের লঞ্চগুলোতে যাত্রী ছিল চোখে পড়ার মত। বিকালে বরিশাল, ভাণ্ডারিয়া ও ঝালকাঠিগামী লঞ্চগুলোতেও যথেষ্ট ভিড় ছিল।
পটুয়াখালীগামী যাত্রী বেশি থাকায় বরিশাল রুটের এমভি সুন্দরবন-১৫ লঞ্চটি পটুয়াখালীর পন্টুনে যাত্রী তুলতে দেখা যায়।
জানতে চাইলে এমভি সুন্দরবন-১৫ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. দুলাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে পটুয়াখালী রুটে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় প্রশাসনের অনুরোধে আমরা এই লঞ্চটি ছাড়ছি। ঘাটের লাইনের লঞ্চ যাত্রী সামলাতে পারছে না, তাই বরিশালগামী এই লঞ্চ আজ পটুয়াখালী যাবে, এটি বিশেষ লঞ্চ হিসেবে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, ডেক ৪০০, সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৩০০, ডিলাক্স ২ হাজার ৫০০ ও ডবল কেবিনের ভাড়া ২ হাজার ৮০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
কোনো যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না দাবি করে দুলাল হোসেন বলেন, “আমাদের ভাড়া বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রশাসন সব তদারকি করছে। এতদিন যাত্রীর চাপ একেবারেই কম ছিল।
“শুক্রবার ও শনিবার যাত্রীর চাপ একটু বেশি। তবে কোনোভাবেই তিন বছর আগের মত যাত্রীর চাপ নেই। তবে ঈদে এই চাপ বেশি না, ঈদের যাত্রী অন্য সময়ের স্বাভাবিক যাত্রীর মত হয়ে গেছে।”
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগা এলাকায় যাবেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. আরিফ খান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার সাথে আরও কয়েকজন আছে। আমরা কেবিনে যাব। বাসে গেলে রিলাক্স পাওয়া যায় না। এখানে একটু আরামে যাওয়া যায়। তাছাড়া বাসেও কিন্তু আমাদের এলাকায় গেলে সময় একেবারে কম লাগে না। কেবিনে কয়েকজন মিলে একসাথে গেলে কিন্তু ভাড়া বেশি লাগে না। তাই এটাই আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।”
পটুয়াখালীগামী এমভি তরঙ্গ-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার হাবিউল্লাহ মেজবাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিলেন, “গতকাল ও আজকে অন্য দিনের তুলনায় ভিড় বেশি, আমাদের ডেকের যাত্রী হয়ে গেছে। কেবিন কিছু খালি আছে, কেবিনে যাত্রী হয়ে গেলে আমরা ছেড়ে দেব।”
তিনি দাবি করেন, “যাত্রী আশা অনুযায়ী হয়নি, ছুটি দীর্ঘদিন ধরে হওয়ার কারণে মানুষতো একসাথে যাচ্ছে না, তাই যাত্রী তুলনামূলকভাবে কম।”
কাঁচপুরের একটি পোশাক কারখানার কর্মী সালমা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “হাতের অবস্থা ভালো না, হের কারণে আমরা একলগে লঞ্চে যাই। ৪০০ টাকা করে নিছে, ডেকের টিকেট।”
বরিশালগামী এমভি প্রিন্স আওলাদ লঞ্চের কেরানী মো. সুমন বলেন, “আমাদের ভাড়া নির্ধারিত, ডাবল কেভিন ৩২৩২ টাকা আর সিঙ্গেল কেভিন ১৬১৬ টাকা, এর বেশি নেবার কোন সুযোগ নাই।
যাত্রীর ভিড় থাকলেও সন্তুষ্ট নন বরিশালগামী এমভি প্রিন্স আওলাদ লঞ্চের কেরানী মো. সুমন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেমন আশা করেছিলাম যাত্রী তেমন বাড়েনি। এত ভিড় থাকলে কী আর এখনও কেবিন খালি থাকে?
“লঞ্চ তো কম না, পন্টুনের দিকে তাকালে মনে হয় হাজার হাজার যাত্রী, আর লঞ্চে উঠে তো যাত্রীরা কেবিনে বসে থাকে না, সবাই উপরে উঠে, তাই সেখানেও যাত্রী বেশি দেখা যায়।”
পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চের যাত্রী কমলেও বাসে ভাড়া বৃদ্ধি ও স্বস্তির যাত্রার জন্য অনেকে সড়ক ছেড়ে নৌপথ বেছে নেওয়ায় কথা বলেছেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফরিন আনোয়ার কয়েকজন বান্ধবীরে সঙ্গে বরিশাল যাচ্ছেন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইচ্ছে করলে অনেক আগেই যেতে পারতাম, ঢাকায় কিছু কাজ ছিল, তাই আজকে যাচ্ছি। আর আমি সবসময়ই লঞ্চে যাওয়া-আসা করি। লঞ্চের মত শান্তির যাত্রা আর কোথাও নাই।
“আমরা চার বান্ধবী মিলে দুটি কেবিন নিয়েছি, এখানে শুয়ে বসে, মন চাইলে খোলা আকাশের নিচে আকাশ দেখতে দেখতে বাড়ি চলে যাব।”
তিনি বলেন, “বাসে গেলে অনকে সমস্যা, মেয়েদের জন্য তো সমস্যা আরও বেশি। তো এত ঝামেলায় যাওয়ার দরকার কী? আমরা লঞ্চেই রিলাক্স মনে করি।”
পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চে যাত্রী খরা হলও চাঁদপুরগামী লঞ্চে বিপরীত চিত্র।
এই রুটের এমভি সম্রাট ৭ এর সুপারভাইজার মো. সালাহউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লঞ্চের যাত্রী আজকে একটু বেশি। মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টায় চাঁদপুরে যাওয়ার কারণে আমাদের যাত্রী সারাদিন ধরেই থাকে।”
নিরাপত্তা পরিস্থিতি তুলে ধরে সদরঘাট নৌ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহাগ রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর আছে, কারণ আজকে অন্য দিনের তুলনায় ভিড় একটু বেড়েছে। এখানে আনসার, নৌ-পুলিশ, ফাঁড়ির পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনীসহ ছয় থেকে সাতটি বাহিনী সদরঘাটের ঈদযাত্রা নিরাপদ রাখার জন্য কর্মরত রয়েছে। নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই।”