“বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। কারণ আমার আত্মপরিচয়ে বাংলাদেশেরও উপস্থিতি রয়েছে।”
Published : 03 Mar 2025, 12:43 AM
বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, বিরাজমান অচলাবস্থা কাটাতে তার বন্ধু প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
বাংলাদেশ এসব চ্যালেঞ্জ কীভাবে কাটিয়ে উঠবে তা নিয়েও তার উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বলেন, “আমি ঢাকায় অনেক সময় কাটিয়েছি। আমার স্কুল জীবনের শুরুও সেখানে।
“ঢাকার পাশাপাশি আমি প্রায়ই মানিকগঞ্জে পৈত্রিক বাড়িতে যেতাম। মায়ের দিকের আত্মীয়তার কারণে আমি নিয়মিত বিক্রমপুরে, বিশেষ করে সোনারগাঁওয়ে গিয়েছি।”
তিনি বলেন, “আমার ওপর এসব জায়গার বিশেষ প্রভাব রয়েছে। তাই বাংলাদেশ কীভাবে বর্তমান চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে, তা নিয়ে অন্য অনেকের মত আমিও চিন্তিত।
“বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। কারণ আমার আত্মপরিচয়ে বাঙালি পরিচয়ের উপস্থিতি রয়েছে।”
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে শান্তিনিকেতনে নিজের বাড়িতে বসে অমর্ত্য সেন এই সাক্ষাৎকার দেন বলে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে।
সেখানে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জন তুলে ধরে এই নোবেলবিজয়ী বলেন, দেশটির মাথাপিছু আয় বেড়েছে: এক পর্যায়ে ভারতকেও ছাড়িয়েছে। এছাড়া জন্মহার কমেছে এবং গড় আয়ু ভারতের চেয়ে বেশি।
“এর বাইরে বর্তমানে বাংলাদেশ একটা বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক রূপান্তরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে নারী অধিকারের অগ্রগতির ক্ষেত্রে, যেখানে সরকারের পাশাপাশি ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকের মত এনজিও ভূমিকা পালন করছে।”
সরকারবিরোধী অবস্থান নেওয়ার পরও বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো তুলনামূলক ‘মুক্ত’ রয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন অমর্ত্য সেন।
বাংলাদেশে সামরিক শাসন জারির চেষ্টা না করায় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন এই অর্থনীতিবিদ।
সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না করার প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি। তার মতে, নিষিদ্ধ করা হলে সেটা আওয়ামী লীগের ভুলেরই পুনরাবৃত্তি ঘটাবে।
“আমি মনে করি, কাউকে একঘরে ঠেলে না দিয়ে বাংলাদেশের উচিৎ হবে, সবাই মিলে কাজ করার ঐতিহ্যটা সর্বোচ্চ ব্যবহার করা।
“একটা উদার দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। আশা করব, বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও বহুত্ববাদ অব্যাহত থাকবে। এছাড়া অনেকেই যেমনটা দাবি করছেন, আমি মনে করে নির্বাচনটা তারচেয়েও অবাধ হবে। বাংলাদেশে পরিবর্তনের অনেক সুযোগ রয়েছে।”
অমর্ত্য সেন বলেন, “আমি বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন, কিন্তু আমি আশা ছাড়িনি।”
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূসের মূল্যায়ন শুনতে চাইলে এ নোবেলবজয়ী বলেন, “ইউনূস আমার পুরনো বন্ধু। আমি জানি, সে যথেষ্ট যোগ্য। এছাড়া অনেক বিচারেই সে খুবই ভালো মানুষ। বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতির পক্ষে অনেক জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।
“আপনি যদি হঠাৎ কোনো দেশের প্রধান হয়ে যান, যেটা ইউনূস হয়েছে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই নানা পক্ষকে বিবেচনায় মাথায় রাখতে হবে। সেখানে ইসলামিক দলগুলো আছে; হিন্দুদের বিভিন্ন গোষ্ঠীও আছে। ইউনূসের সক্ষমতার ব্যাপারে আমার অঢেল আস্থা রয়েছে।”
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি ঠেকানোর দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি দেশটির সাধারণ মানুষেরও।