চার ভিতে প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ রূপরেখা

শেখ হাসিনার ভাষায়, তিনি পরিকল্পনা দিয়ে গেলেন, বাকিটা নির্ভর করছে যুব সমাজের ওপর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2022, 07:39 AM
Updated : 12 Dec 2022, 07:39 AM

বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে দেওয়ার যে লক্ষ্য ধরে সরকার কাজ করছে, সেই বাংলাদেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হয়ে উঠবে বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশা।

আর সেজন্য চারটি ভিত্তি ধরে সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা আগামী ৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আর সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা চলে যাব।”

সোমবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২’ উদযাপন, ‘অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতা ২০২২’-এর বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এই আশাবাদের কথা শোনান শেখ হাসিনা।

কী হবে তার সেই স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি? প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রত্যেকটা সিটিজেন, তারা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে, স্মার্ট সিটিজেন। উইথ স্মার্ট ইকোনমি; অর্থাৎ, ইকোনমির সমস্ত কার্যক্রম আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে করব। স্মার্ট গভার্নমেন্ট; ইতোমধ্যে আমরা অনেকটা করে ফেলেছি। সেটাও করে ফেলব। আর আমাদের সমস্ত সমাজটাই হবে স্মার্ট সোসাইটি।”

দেশ গড়ার স্বপ্নের কথা বলতে বলতেই প্রধানমন্ত্রীর কথায় আসে তার বয়স আর রাজনৈতিক বাধাবিপত্তির প্রসঙ্গ।

“এখন আমার ৭৬ বছর বয়স। কাজেই বেশিদিন তো আর… যে কোনো দিন অক্কা পেতে পারি। তাই না? যে কোনো দিন চলে যেতে পারি। তার উপর গুলি, বোমা, গ্রেনেড হামলা, তারেক জিয়া, খালেদা জিয়া তো আর আমাকে ছেড়ে দেয়নি। বারবার আমার ওপর হামলা করেছে।”

শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বারবার প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো ধরনের হামলা ভয়ভীতির পরোয়া তিনি করেন না; জীবনে যাই ঘটুক, দেশের উন্নয়নে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তিনি দিয়ে যাচ্ছেন।

“তাই ২০২১ থেকে ৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করে দিয়ে গেলাম। অর্থাৎ ২১ থেকে ৪১ কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নটা হবে. তার একটা কাঠামো পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করে সেটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমি রেখে যাচ্ছি।”

২০৪১ সালেই শেষ নয়, ২১০০ সালেও এই বঙ্গীয় বদ্বীপ যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয়, দেশের মানুষ যাতে ‘সুন্দরভাবে, স্মার্টলি’ বাঁচতে পারে, সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান করে দেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী বলেন।

তবে তা বাস্তবায়নের ভার যে নতুন প্রজন্মকেই নিতে হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “এখন সব নির্ভর করছে আমাদের ইয়াং জেনারেশনের ওপর, যুব সমাজের উপর। তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের উন্নতি। এটাই ছিল আমাদের ২০১৮ এর নির্বাচনী ইশতেহার। আমরা সেই কাজটাই করে যাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি যখন উদযাপন করা হয়, তখনই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

“অর্থাৎ ২০০৮ এর যে সিদ্ধান্ত, সেটা আমরা করেছি। পাশাপাশি আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকে সারা বাংলাদেশেই আমাদের কানেটিভিটি ব্রডব্যন্ড আমরা দিতে পেরেছি। স্যাটেলাইন বঙ্গবন্ধু-১ আমরা উৎক্ষেপণ করেছি।

“আমরা যা যা করেছি, সবই কিন্তু আমি বলব… আমার ছেলে জয় যদি আমাকে পরামর্শ না দিত, তাহলে হয়ত আমার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার গত ১৪ বছরে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইসিটি অবকাঠামো, কানেকটিভিটি, ই-গভর্নমেন্ট এবং ইন্ডাষ্ট্রি প্রমোশনের ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ গ্রহন করে তার বাস্তবায়ন করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলায় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে কানেকটিভিটি থাকায় করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও কোনো কাজ ‘থেমে থাকেনি’।

মহামারীর রেশ না কাটতেই রাশিয়া ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার কারণে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে, উন্নত দেশগুলোও তাতে হিমশিম খাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আল্লাহর রহমতে এখনো আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি।”

উন্নত দেশগুলোকেও এ সঙ্কট কতটা ভোগাচ্ছে, সেই বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “শীতের দেশ, যেখানে তারা হিটার না জ্বালিয়ে এক মুহূর্ত থাকতে পারে না, আজকে তারা বিদ্যুৎও পায় না। ইউরোপ বা ইংল্যান্ড বা আমেরিকার কোনো কোনো জায়গায় এমন অবস্থা যে গোটা পরিবার একটা রুমে হিটার জ্বালিয়ে সেখানে গিয়ে সারাদিন থাকে। এজন্য যে সেখানে বিদ্যুতের অভাব।

“আমরা তো তারপরও… কিছুদিন আমাদের একটু অসুবিধা হয়েছে। তারপর তো আমরা দিয়ে যাচ্ছি। একেবারে বঞ্চিত কাউকে করিনি। অর্থাৎ, আমরা এই ব্যবস্থাটা করতে পেরেছি। সক্ষমতাটা এসেছে।”

দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

অন্যদের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এনএম জিয়াউল আলম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, জয় সিলিকন টাওয়ার, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল জাদুঘর ও একটি সিনেপ্লেক্স এবং বরিশাল জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার উদ্বোধন করেন।

শেখ কামাল ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ক দুটি বইয়ের ডিজিটাল ও প্রিন্ট সংস্করণের মোড়কও উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২-এর থিম সং, ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে একটি অডিও ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টারি অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।