কেউ দোকানদারি করছেন, কেউবা শাকসবজি চাষ, আবার কেউ ঋণ নিয়ে শুরু করেছেন ব্যবসা।
Published : 11 Jun 2024, 12:59 AM
নিজের বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়ে পারিবারিক সংকটকে পেছনে ফেলে সায়মা বেগম এখন স্বপ্ন দেখছেন পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করার।
দীর্ঘদিন নানার বাড়িতে মানুষ হওয়া সায়মাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিজেদের থাকার মত এতটুকু জায়গা।
তার মত কক্সবাজারের উখিয়া ও ঈদগাঁও উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া অনেকে এখন নতুন দিনের স্বপ্ন দেখার সুযোগ পেয়েছেন।
এ আশ্রয়ণের কল্যাণে নিজেদের মাথা গোজার ঠাঁই হওয়ায় তাদের থাকার অভাব ঘুচেছে। যে করণে বাসিন্দাদের অনেকে নিজেদের স্বাবলম্বী করে দিন বদলের সুযোগ পাচ্ছেন। কেউ দোকানদারি করছেন, কেউবা করছেন শাকসবজি চাষ, আবার কেউ ঋণ নিয়ে শুরু করেছেন ব্যবসা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারে থাকা আশ্রয়ণ প্রকল্পের এলাকা দুটি ঘুরে দুই বছর আগে পাওয়া দুই কক্ষের বাড়ির বাসিন্দাদের মুখে মুখে শোনা গেছে দিন বদলের এমন সব গল্প।
স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়া ৪৮ বছর বয়সী রাবেয়া বেগমের মেঝ মেয়ে সায়মা আক্তার কক্সবাজার সরকারি কলেজে স্নাতকের শিক্ষার্থী।
নিজেদের জন্য উখিয়ার আশ্রয়ণে একটি বাড়ি পাওয়ার পর এ শিক্ষার্থী পারিবারিক সংকটকে পেছনে ফেলে এখন ঘুরে দাঁড়াতে আত্মবিশ্বাসী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মাকে নিয়ে নানা বাড়িতে ছিলাম, ছোট ঘরে থাকতে আমাদের অনেক সমস্যা হত। এখন মা একটি ঘর পেয়েছেন। নিজেদের ঘরেই এখন আমরা থাকি। পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটি চাকরি করতে চাই।”
২৫ বছর ধরে সেলাই মেশিন চালিয়ে মেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছেন সায়মার মা রাবেয়া বেগম।
তিনি বলেন, “আগে অনেক খারাপ অবস্থা ছিল, এখন বাচ্চাদের নিয়ে ঘরে থাকতে পারি। নিজের একটু জায়গা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে। মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় করি। তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে অনার্স পাস করেছে। মেজ মেয়ে সায়মা অনার্সে পড়ে।”
রাজমিস্ত্রী মোহাম্মদ ইউনুস তার চার সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন উখিয়ার টিএনটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি বাড়িতে।
তার স্ত্রী জাহেদা আক্তার বলেন, “আগে আমরা ভাড়া বাসায় থাকতাম, এখন স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছি। নিজেদের বাড়িতে বসবাস করছি। মেয়েরা পড়াশোনা করছে, বড় মেয়ে ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়ছে। মেঝটা এইচএসসি প্রথম বর্ষ, ছোটটা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।”
আশ্রয়ণের বাড়ি পেয়েছেন ৫২ বছর বয়সি রত্নাধর। স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়েছে ২৭ বছর আগে। এখন তিন ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে উখিয়ার এ আশ্রয়ণে থাকেন তিনি।
মুখে স্মিত হাসি নিয়ে সংগ্রামী জীবনের বর্ণনা দিয়ে রত্মাধর বলেন, “নিজের একটা ঠিকানা হয়েছে। পাল্টে গেছে আমাদের কষ্টের জীবন।
“পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ছাগল পালন শুরু করেছিলাম। এখন ছোট-বড় মিলে দশটি ছাগল আছে। এগুলো বিক্রি করলে এখন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আসবে। শাকসবজিও চাষ করি, ছোট ছেলে দোকানদার।”
৭২ বছর বয়সী সোনাকান্তি দাস এক ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে থাকেন আশ্রয়ণের বাড়িতে।
তিনি বলেন, “বড় ছেলে এনজিওতে চাকরি করে, ছোট ছেলে বেকারিতে। উখিয়া শহরে বাসা ভাড়া করে থাকতাম। ২০২২ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছি। এক ছেলে এখনও উখিয়ায় বাসা ভাড়া করে থাকে, অন্য ছেলের সঙ্গে নিজের ঘরে আমি আছি।”
নিজের বাড়ি পাওয়ার পর বদলে গেছে সুখা বড়ুয়া দিনও। তিনি বলেন, “দুই বাচ্চা নিয়ে অসহায় অবস্থায় বাবার কাছে ছিলাম। নিজের বাড়ি পাওয়ার পর পাশের একটি জায়গায় কলমি শাক চাষ করি, তা থেকে নিয়মিত আয় হয়। ২০ কেজি হলুদ লাগিয়েছিলাম, পেয়েছি চার মণ; সেগুলো বিক্রি করেছি।”
ঈদগাঁও উপজেলার দর্গাপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের একজন আসমা আক্তার। ২৩ বছরের এ নারীর সঙ্গে স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়েছে বছর কয়েক হল। একটি মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে ঠাঁই হয়েছিল তার। আগে কাজ করতেন চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায়।
আশ্রয়ণের বাড়ি আসমার জীবনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হওয়ায় বাবা-ভাইদের কিছুটা সহযোগিতা আর নিজের পরিশ্রমে এখন দিব্যি সংসার চালিয়ে নিতে পারছেন তিনি। পোশাক কারখানায় কাজ করার সুবাদে সেলাই মেশিন চালাতে শিখেছেন। এখন নিজেই একটি সেলাই মেশিন কিনে আয় করার কথা ভাবছেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের যে জায়গায় বাড়ি পেয়েছেন, সেখানে সরকারি খাস জমিতে আগে থেকেই বসবাস করত আসমারা।
তিনি বলেন, “অল্প বয়সেই স্বামী ছেড়ে গেছে আমাকে, একটি মেয়ে নিয়ে আমার ছোট একটি সংসার। মেয়েকে মানুষ করতে চাই, সে জন্য উপার্জন দরকার। সেলাই মেশিন চালিয়ে আয়-রোজগার করে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারব বলে স্বপ্ন দেখছি।