পটপরিবর্তনের পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলাটি হয়েছে।
Published : 24 Mar 2025, 04:38 PM
‘জঙ্গি নাটক’ সাজিয়ে ঢাকার কল্যাণপুরে জাহাজবাড়িতে ৯ তরুণ হত্যা মামলায় সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আদালত।
তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এ আদেশ দেয়।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ও মিরপুর জোনের সাবেক ডিসি জসিমউদ্দিন মোল্লা।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম বলেন, “তদন্ত সংস্থার সাক্ষ্যপ্রমাণে উঠে এসেছে যে, এই তিন পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশ ও পরিকল্পনায় জাহাজবাড়ি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে আটক রাখার আবেদন করছি।
“শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করে। একইসঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৭ মে দিন ধার্য করা হয়েছে।”
তাজুল বলেন, “জঙ্গি তকমা দিয়ে জাহাজবাড়িতে ৯ তরুণকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে এখানে রেখে হত্যা করা হয়। ইসলামি ভাবধারা সম্পন্ন মানুষের ভেতর ভয়ের সংস্কৃতি চালু করতেই এভাবে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে এভাবে হত্যা করা হত, যাতে শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা যায়।”
তিনি বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড ছিল নিষ্ঠুরতম রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড। সমালোচনার মুখে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার ক্রসফায়ারের সংস্কৃতি বাদ দিয়ে এভাবে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে মানুষ হত্যা করত। এভাবেই একের পর এক বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করে।”
প্রধান কৌঁসুলি বলেন, “নিহত ৯ তরুণের স্বজনদেরকেও ভয় দেখানো হয়ছিল লাশ গ্রহণ না করার জন্য। এর মধ্য দিয়ে ঘৃণার সংস্কৃতি চালু করা হয়।
“দেশের মানুষকে দেখানো হয় যে- এরা জঙ্গি ছিল, সেজন্য স্বজনরাও তাদের লাশ গ্রহণ করেনি।”
কৌসুলি বি এম সুলতান মাহমুদ, গাজী এম এইচ তামিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গুলশান হামলার ২৫ দিন পর ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ওই বাড়ির পঞ্চম তলায় অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়িটির নাম তাজ মঞ্জিল হলেও ভবনের আকৃতির কারণে স্থানীয়রা একে জাহাজবাড়ি বলেন, আর সেই নামটি গণমাধ্যমেও উঠে আসে।
অভিযান শেষে সন্দেহভাজন নয় ‘জঙ্গির’ নিহত হওয়ার খবর আসে। হাসান নামে একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হন। পালিয়ে যান একজন। তারা সবাই নব্য জেএমবির সদস্য বলেই দাবি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পরদিন ২৭ জুলাই রাতে মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক মো. শাহজাহান আলম বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬ (২), ৮, ৯, ১০, ১২ ও ১৩ ধারায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ওই ঘটনার ভিন্ন ভাষ্য আসতে থাকে। এর মধ্যে গত ৬ মার্চ ‘জঙ্গি নাটক’ সাজিয়ে ৯ তরুণ হত্যা মামলার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়।
রামপুরার মামলার তদন্ত ‘শেষ পর্যায়ে’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার রামপুরায় একটি ভবনের ছাদের কার্নিসে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থীকে গুলির মামলায় তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালকে জানান কৌঁসুলি গাজী এম এইচ তামিম।
তিনি বলেন, “আট আসামির মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা কাঠগড়ায়। বাকিরা পলাতক।”
কৌঁসুলি তামিম পরে সাংবাদিকদের বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদনের খসড়া পর্যালোচনা করা হচ্ছে। প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এক মাস সময় চাইলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে।
“একইসঙ্গে ২৮ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করে দেয়া হয়।”
ট্রাইব্যুনালের ‘জনবল বাড়ছে’
ট্রাইব্যুনালের এক জিজ্ঞাসার জবাবে প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম বলেন, “এ পর্যন্ত ২৩টি মামলা হয়েছে। ১৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হযেছে।
“তদন্ত সংস্থা দ্রুতগতিতে তদন্ত করছে। একটা তদন্ত সংস্থা, একটা প্রসিকিউশন ও একটা ট্রাইব্যুনাল কাজটি করছে।”
ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন রাখে, এত কম জনবল দিয়ে কি সম্ভব হচ্ছে?
উত্তরে তাজুল বলেন, “সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সরকার এটাকে বিস্তৃত করবে।”
তখন ট্রাইব্যুনাল বলে, “শুধু জনবল বাড়ালেই হবে না; দক্ষ ও সৎ জনবল দরকার।”