বাংলাদেশ ভারসাম্যের নীতি চালু রাখুক: হাসিনা-জেলেনস্কি বৈঠক প্রসঙ্গে রুশ দূত

“পশ্চিমা দেশগুলো জেলেনস্কি ফর্মুলার প্রচার করছে এবং অনেক দেশকে এটা সমর্থনের জন্য চাপ দিচ্ছে,“ বলেন রাশিয়ার দূত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2024, 02:08 PM
Updated : 15 Feb 2024, 02:08 PM

ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-রাশিয়ার সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেই আশা করেছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার মনতিৎস্কি। 

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ডিক্যাব টকে এক প্রশ্নে এ বিষয়ে মন্তব্য করেন তিনি। 

রাষ্ট্রদূত বলেন, “আপনাদের দেশ, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের ভারসাম্যপূর্ণ নীতিকে আমরা বেশ সাধুবাদ জানাই। আমার আশা, ভবিষ্যতেও এটা অব্যাহত থাকবে।” 

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর বৈশ্বিক মেরুকরণের মধ্যে যুদ্ধবিরোধী অবস্থান জানালেও এর সূচনাকারী রাশিয়ার সরাসরি কোনো নিন্দা বা সমালোচনা বাংলাদেশ করেনি। 

ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ওঠা বিভিন্ন প্রস্তাবের ক্ষেত্রেও ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান বজায় রাখার কথা বলেছিল সরকার। 

যুদ্ধের প্রায় আড়াই বছরের মাথায় শুক্রবার থেকে শুরু হতে চলা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের যোগ দিতে জার্মানি গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

ওই সম্মেলনের ফাঁকে যে কয়জন সরকারপ্রধানের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে, তার মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও। 

কিইভের আগ্রহে এই বৈঠক হওয়ার কথা বুধবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ; এই বৈঠক রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলার কথাও আসে তার বক্তব্যে। 

জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের কারণে রাশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হবে কিনা এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, “ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের প্রেক্ষিতে রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে প্রভাব পড়ার প্রশ্নই আসে না। 

প্রধানমন্ত্রী যখন মিউনিখের পথে, তখন ঢাকায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রুশ রাষ্ট্রদূতও আশা প্রকাশ করেন, ওই বৈঠক কোনো প্রভাব ফেলবে না। 

যুদ্ধের বিষয়ে নিজের ‘ফর্মুলা’ তুলে ধরার জন্য জেলেনস্কি বিভিন্ন জনের সঙ্গে বৈঠক করছেন মন্তব্য করে মনতিৎস্কি বলেন, “তিনি যেহেতু প্রায়শ এটা করছেন, প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে বৈঠকেও অবশ্যই এটা তুলবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ওই ফর্মুলার বিষয়ে সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করবেন।” 

জেলেনস্কি ওই ‘ফর্মুলার মৌলিক দুর্বলতার’ কারণে রাশিয়া শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে মন্তব্য করে আলেকজান্দার মনতিৎস্কি বলেন, “এই ফর্মুলা সমর্থন করা মানে ইউক্রেইন কর্তৃক রাশিয়ায় এবং রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে ইচ্ছুক ইউক্রেইনীয়দের জাতিগত নিধনের সুযোগ করে দেওয়া। 

“পশ্চিমা দেশগুলো জেলেনস্কি ফর্মুলার প্রচার করছে এবং অনেক দেশকে এটা সমর্থনের জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা ফর্মুলায় কি আছে, সেটায় না গিয়ে সংখ্যা দেখছে। তারা দেখাতে চাচ্ছে, সব দেশ আমাদের সাথে আছে, সুতরাং রাশিয়ার আত্মসমর্পণ করা উচিত।” 

আরেক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সমর্থন করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা আশা করি, এটা কোনো প্রভাব ফেলবে না, যেভাবে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন। এটাই বিষয়। এটা বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্কের জন্য ভালো অগ্রগতিও বয়ে আনতে পারে।” 

‘বাংলাদেশকে ভারতের চোখে দেখি না’ 

রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারতের চোখে দেখে কি-না, এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ নিজস্ব পররাষ্ট্র নীতি নিয়েই চলে। বাংলাদেশ নীতিতে ভারতের সঙ্গে ‘পার্থক্যও’ দেখা যায়। 

তিনি বলেন, “আমরা ভারতের পথে নই, আমরা নিজস্ব নীতিতে কাজ করি। এটা আমাদের পররাষ্ট্র নীতির ডকট্রিনে লেখা আছে যে, সমমনা সব দেশের সঙ্গে আমরা সহযোগিতা চালিয়ে যাব। রাশিয়া ও ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য আপনারা দেখতে পাবেন। 

“আমরা আমাদের নিজস্ব নীতিতে কাজ করছি। আমরা বাংলাদেশেকে ভারতের চোখে কিংবা অন্য কোনো দেশের চোখে দেখি না, সেটা যুক্তরাজ্য হোক, কিংবা আমেরিকা বা অন্য কেউ।” 

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা এখানে আমেরিকানদের সঙ্গে লড়ছি না। আপনাদের দেশের সঙ্গে তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে, আমাদেরও নিজস্ব অর্থনৈতিক সহযোগিতা রয়েছে এবং আমরা এটা অব্যাহত রাখতে চাই।” 

তবে, পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থানের সঙ্গে রাশিয়র তফাৎ থাকার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আপনারা অন্য দেশের সম্পর্ক কীভাবে রাখবেন এবং কার সাথে রাখবেন– এটা পশ্চিমা দেশগুলো আপনাদের শেখাক, আমরা সেটা চাই না। এটাই হচ্ছে বিষয়। এটা এই দেশের বিষয়। আমরা আপনাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না।” 

রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনার অগ্রগতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, উভয়দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। 

“কেবল রুবল, পাউন্ড বা ডলার নয়, অন্যান্য মুদ্রায় বিনিময়ের ব্যাপারেও আলোচনা চলছে। যখন সময় হবে, তখন দুদেশের কর্তৃপক্ষই এটার ঘোষণা দেবে।” 

রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ৩০% শতাংশ রুবল ও ইউয়ানে হওয়ার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, “সুতরাং এটা হতে পারে। ভারতের সঙ্গে আমাদের রুপিতে এবং ডলারে হচ্ছে, তাহলে আপনাদের ক্ষেত্রে কেন হতে পারবে না? আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।”