বিদেশে চলে গেছেন বলে গুঞ্জনের মধ্যেই আইনজীবীর মাধ্যমে বুধবার সময় চেয়ে আবেদন করেন বেনজীর।
Published : 06 Jun 2024, 08:44 PM
সময় চেয়ে আবেদনের পর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হতে নতুন দিন ঠিক করা হয়েছে।
বেনজীর আহমেদকে আগামী ২৩ জুন দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে দুদক প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন।
তিনি বলেন, “সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে দুদক তলব করলেও শুনানিতে অনুপস্থিত থাকায় আগামী ২৩ জুন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।”
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন সকাল ১০টায় সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে নোটিস পাঠিয়েছিল দুদক। তিনি বিদেশে চলে গেছেন বলে গুঞ্জনের মধ্যেই আইনজীবীর মাধ্যমে বুধবার সময় চেয়ে আবেদন করেন।
বেনজীরের স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকেও দুদকে তলব করা হয়েছে। তাদের ৯ জুন জিজ্ঞাসবাদে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
বেনজীর দেশে আছেন কি না, তা নিয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এ বিষয়ে কোনো তথ্য তার কাছে নেই। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বেনজীর আহমেদ বিদেশে ‘যেতেই পারেন’।
দুদকের তলবে বেনজীর জিজ্ঞাসাবাদে হাজির না হলে কী হবে, সে প্রশ্ন মঙ্গলবার দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হকের কাছে রেখেছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, “দুদক কাউকে নোটিস করলে তিনি আসতে বাধ্য কি না, সেটা আইনে সুস্পষ্ট বলা নেই। না এলে ধরে নিতে হবে তার কোনো বক্তব্য নেই।
“তবে তার সুযোগ আছে সময় চাওয়ার। সময় চাইলে দুদক ১৫ দিন সময় দিতে পারবে। এই এখতিয়ার কমিশনের রয়েছে।”
গত ৩১ মার্চ 'বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ' ও ৩ এপ্রিল 'বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট' শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠ। সেখানে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি ইকো রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন বেনজীর পরিবার। এছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে।
তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়ার কথাও বলা হয় প্রতিবেদনে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল।
বনের জমি দখল করে গাজীপুরে রিসোর্ট বানানোর অভিযোগও আনা হয়েছে দৈনিকটির আরেক প্রতিবেদনে। ওই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশের মালিকানা বেনজীর পরিবারের বলে পত্রিকাটি দাবি করেছে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এপ্রিলের শেষে বেনজীর এবং তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করেন।
এরপর ২২ এপ্রিল দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, বেনজীর আহমেদের ‘অবৈধ সম্পদ’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন তারা।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হতে সময় চান বেনজীর
সেজন্য তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী এবং জয়নাল আবেদীন।
একই দিন হাই কোর্ট এক আদেশে দুই মাসের মধ্যে বেনজীরের বিষয়ে উঠা অভিযোগের তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়ে নির্দেশ দেয় হাই কোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদাত হোসেনের বেঞ্চ।
নির্দেশনার পর সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সম্পদের খোঁজে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আটটি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক।
দুদকের আবেদনে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও তিন মেয়ের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেয়। সেই সঙ্গে তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব এবং বিভিন্ন কোম্পানিতে তাদের নামে থাকা শেয়ারও অবরুদ্ধ করার আদেশ হয়।