ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের উদ্যোগ আগেও ব্যর্থ হয়েছে। তিন চাকার বাহনকে নিয়মের মধ্যে আনার উদ্যোগও আলোর মুখ দেখেনি।
Published : 27 Nov 2024, 01:41 AM
হাই কোর্ট নিষেধাজ্ঞা দিলেও আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থায় আপাতত ঢাকার রাস্তায় চলার অনুমতি পেয়ে গেছে ব্যাটারির রিকশা, যদিও এই তিন চাকার বাহন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে নানা যুক্তি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি গত কয়েক বছরে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যাটারিচালিত রিকশার কথা বলে আসছে। শহরের প্রধান সড়কে ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং এর যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
তবে হাই কোর্ট যেভাবে তিন দিনের মধ্যে ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের আদেশ দিয়েছিল, তা নিয়েও তাদের আপত্তি ছিল; কারণ লাখ লাখ রিকশাচালকের সমস্যা তিন দিনে মেটানো সম্ভব নয়।
গত ১৯ নভেম্বর হাই কোর্ট নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরদিন থেকেই রাস্তায় নামেন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা। বাস-ট্রেন আটকে তারা বিক্ষোভ করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়ান; তাতে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি চরমে ওঠে।
এসব রিকশা বন্ধ না করে লাইসেন্স ও রুট পারমিট দিয়ে নীতিমালার বিষয়টি সুরাহা করার দাবি ছিল তাদের। যাত্রী কল্যাণ সমিতিও কাছাকাছি ধরনের সুপারিশ রেখেছে সরকারের সামনে।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ব্যাটারির রিকশা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে আন্দোলন বিক্ষোভের মুখে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি আগের সরকার।
সাধারণ যাত্রীদের মধ্যেও ব্যাটারির এই রিকশা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত। কেউ বলছেন, বর্তমান সময়ে এসে পা দিয়ে রিকশা চালানো ‘অমানবিক’। তাছাড়া পায়ে চালিত রিকশার গতি কম। সেই তুলনায় ব্যাটারির রিকশায় চালকের পরিশ্রম কম, গতিও বেশি, আয়ও বেশি।
তবে ব্যাটারির রিকশা নিয়ে অন্যদের যুক্তি, সাধারণ রিকশার কাঠামোতে ব্যাটারি লাগিয়ে গতি বেড়েছে ঠিক, কিন্তু এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেশি। সেইসঙ্গে গত কয়েকবছরে এই রিকশা এত বেড়েছে যে, ঢাকার অলিতে-গলিতে তাদের দাপটে চলা দায়। গতি বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ায় প্রায়শ এর ওর সঙ্গে লাগিয়ে দেন চালকরা।
ব্যাটারির রিকশাচালক ও তাদের সংগঠনের নেতারা বলছেন, নীতিমালা বাস্তবায়ন করে শহরের নির্দিষ্ট সড়কে চালাতে দেওয়া হোক তাদের।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রিকশা কোনোভাবেই শহরে চলতে দেওয়া উচিত নয়। আর অলিগলিতে চলতে দিলেও সেগুলোর নকশা, কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে হবে।
অলিগলি থেকে উড়ালসড়কে
ঢাকা শহরে ব্যাটারির রিকশার সংখ্যা ঠিক কত, সেই হিসাব পাওয়া কঠিন। তবে অনেকের অনুমান, সেই সংখ্যা ৮/১০ লাখের মত।
সরকার পতনের আগে গত ১৫ মে সড়কে ব্যাটারিচালিত বন্ধের ঘোষণা দেন সেসময়ের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। চালকদের বিক্ষোভের মুখে সেই ঘোষণা থেকে সরকার সরে আসে। এরপর ঢাকায় ব্যাটারির রিকশা বেড়েছে হুঁ হুঁ করে।
ব্যাটারির রিকশাচালক ও তাদের সংগঠনের সদস্যরা বলছেন, গত ৫ অগাস্টের পর থেকে সড়কে ব্যাটারির রিকশার সংখ্যা বেড়ে গেছে। সেইসঙ্গে পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় তারা অলিগলি থেকে থেকে চলে আসে মহাসড়কে, উঠে যায় উড়ালসড়কে।
ঢাকার মিরপুরের বাইশটেকি এলাকার ব্যাটারির রিকশাচালক মো. মজনু মিয়া বলেন, একসময় তিনি প্যাডেল রিকশা চালাতেন। তবে ব্যাটারির রিকশার কারণে তার রিকশায় যাত্রী উঠত কম। পরে তিনিও ব্যাটারির রিকশা চালানো শুরু করেন।
ব্যাটারির রিকশা নিয়ে বেশিদূর যাওয়া যায় জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গলিতে ভাঙা রাস্তা; ২০/৩০ টাকার বেশি ভাড়া পাওয়া যায় না। এইভাবে ভাড়া মাইরা পোষান যায় না।
“বৃহস্পতিবার আর শুক্কুরবার দুই দিন ভিতরের রাস্তায় চালাইছি। ৫০০/৬০০ টাকার বেশি ভাড়া মারোন যায় না। মালিকদের ৪৫০ টাকা দিলে আমাগো পেটেভাত!”
ব্যাটারির রিকশাচালকরাই বলছেন, তাদের মধ্যে কারও কারও আগে রিকশা চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল না। আগে অন্য পেশায় ছিলেন। ব্যাটারির রিকশায় পরিশ্রম কম আর আয় বেশি দেখে তারা এই রিকশা চালানো শুরু করেন।
পুরনো খবর-
ব্যাটারিচালিত রিকশা: বিক্ষোভ পঞ্চম দিনে
ব্যাটারির রিকশাচালকদের বিক্ষোভে রাজধানীজুড়ে ভোগান্তি
চালকদের কেউ বলছেন, অন্য পেশা থেকে আসাদের মধ্যে অনেকে সড়কের নিয়মকানুন জানে না, মানেও না। এসব চালক বেপরোয়া রিকশা চালান। ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
ঢাকার নাখালপাড়া এলাকার ব্যাটারির রিকশাচালক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “কিছু ড্রাইভার আছে বয়স কম, গাঞ্জা-গুঞ্জা খায়্যা এমন জোরে গাড়ি ছাড়ে…। মনে করেন যে মাইক্রো একটা আইতাছে, মাইক্রোর আগে অয় যাইব।
“নদীর মাইধ্যে মাছ থাকলে ভালা মাছ খারাপ মাছ মিলাইয়া থাহে; রাস্তায় ড্রাইভারও কিছু খারাপ আছে,” বলেন তিনি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটারি রিকশা নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরে।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “অবাধে আমদানি, স্থানীয় গ্যারেজে সহজলভ্যভাবে তৈরি করে সহজে রাস্তায় নামানোর অবাধ সুযোগ থাকায় এবং দেশে অন্যান্য খাতে সহজে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায়, স্বল্পপুঁজিতে লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ ব্যাটারির রিকশা কিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে।
“এতে কৃষিখাতে শ্রমিক সংকটসহ কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে। প্রশিক্ষণবিহীন লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষের হাতে এসব অটোর স্টিয়ারিং এর কারণে সড়ক নিরাপত্তায় ভয়ানক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।”
দেশের হাসপাতালগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তির চিত্র তুলে ধরে মোজাম্মেল বলেন, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, থ্রি- হুইলার, ইজিবাইক ‘নিয়ন্ত্রণহীনভাবে’ বাড়ার কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ‘ভয়াবহভাবে’ বাড়ছে।
গত ২০২৩ সালে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানসহ (পঙ্গু হাসপাতাল) বিভাগীয় শহরগুলোর হাসপাতালে ৫৩ হাজার ২০৭ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি হয়েছেন। দেশের ৬৪টি জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৭ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
মোজাম্মেল বলেন, “সারাদেশের এমন ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র মোটরসাইকেলের বাণিজ্যিক ব্যবহার, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বেপরোয়া হারে বৃদ্ধির কারণে।”
পক্ষে-বিপক্ষে মত
ব্যাটারির রিকশা বন্ধের পক্ষে যেমন অনেক মানুষ, তেমনি কেউ কেউ এর বিপক্ষেও কথা বলছেন।
এসব রিকশা বন্ধের বিপক্ষে যারা বলছেন, তারা মনে করেন, একেবারে এসব রিকশা উঠিয়ে দিলে চালকদের বড় একটি সংখ্যা পরিবার নিয়ে বিপদে পড়বেন। তারা চান, এর চেয়ে মূল সড়কে না দিয়ে নিয়ম-কানুন মেনে অলিগলিতেই রিকশাগুলো চলাচল করুক। সেইসঙ্গে এসব রিকশা সংস্কার করে গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা অর্ণব উৎপলও মনে করেন ব্যাটারির রিকশা বন্ধ করে না দিয়ে এগুলোর গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা যায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের এলাকায় যে ব্যাটারির রিকশাগুলো চলে, সেগুলোর ডিজাইন একটু আলাদা। চাকা মোটা এবং ‘সেন্টার অব গ্র্যাভিটি’ নিচুতে। এগুলো মূল রাস্তায় চলতে আমি কোনো সমস্যা দেখি না। এগুলোতে একটা ইলেকট্রনিক স্পিড লিমিটার সেট করা কঠিন কিছু না।
“তবে আমি পায়ে টানা রিকশায় ব্যাটারি লাগিয়ে চালানোর বিপক্ষে। ওইগুলোর ব্যাসেন্স থাকে না।”
ঢাকার জুরাইনের বাসিন্দা ‘সমাজকর্মী’ মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকার অটোরিকশা যতদিন একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় না আসছে, ততদিন সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত অটোরিকশা চালক, মালিকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে অথবা তাদের আর্থিক দায় নিতে হবে।”
মোহাম্মদ সফিউর রহমান রনি নামে আরেকজন বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশা কখনোই বৈধ ছিল না। তারপরও অনেকে এসব রিকশা ঢাকার রাস্তায় নিয়ে এসেছেন।
“কিছু মানুষ নিজেদের ক্ষমতাবলে এগুলোর সংখ্যা দিন দিন বাড়িয়েছে। আর যারা চালক বা মালিক তারা অবৈধ জেনেও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। এখন সব দায় সরকারকে কেন নিতে হবে? এটা কোনো যৌক্তিক দাবি হতে পারে না।”
জানতে চাইলে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর বিষয়ে কখনও কোনো কথা হয়নি। ইজিবাইকের কাঠামোগত কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করেছিল বুয়েট। বিআরটিএর কাছে প্রস্তাবও জমা দিয়েছে বুয়েট। এরপর বিষয়টি আর সামনে এগোয়নি।”
ঢাকায় যেভাবে ব্যাটারির রিকশা বেড়েছে, তা নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে বলে তার ভাষ্য।
পুরনো খবর-
দয়াগঞ্জে সড়ক আটকে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
ব্যাটারিচালিত রিকশা: বিক্ষোভ পঞ্চম দিনে
“রাস্তায় নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অবৈধভাবে তৈরি হওয়া, চার্জ দেওয়া নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। ঢাকায় এখন যেসব ব্যাটারির রিকশা চলছে, তার সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করে তার মধ্যে একটা নির্ধারিত সংখ্যক রিকশাকে চলাচলের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।”
সাইফুন নেওয়াজ বলেন, “তারা একটা গলির রাস্তায় চলাচলের অনুমতি পাবে। কিন্তু সেটাও একটা নির্দিষ্ট সংখ্যায়, সেটা এক লাখ হতে পারে বা কমবেশি হতে পারে। কিন্তু এখন ইচ্ছেমত যতগুলো চলছে তত না।”
বিকল্প কী?
রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ বলছে, তাদের এ বাহনকে লাইসেন্স ও রুট পারমিট দিয়ে নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসা হোক।
সংগঠনের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় আছে। এ ছাড়া সরকারেরও একটা সিদ্ধান্ত ছিল প্রধান সড়ক ছাড়া বাকি এলাকায় ব্যাটারি রিকশা, ইজি বাইক চলতে পারবে।
“আমরা প্রধান সড়কে চলতে চাই না। অলিগলিতেই চলব। এ ছাড়া মহাসড়কগুলোর পাশে সার্ভিস রোড করে দেওয়ার দাবি আমাদের। সেখান দিয়ে ব্যাটারিচালিত, ইজিবাইক চলাচল করবে।”
ব্যাটারির রিকশা অলিগলি ছেড়ে মহাসড়কে ওঠার নিয়ে এক প্রশ্নে খালেকুজ্জামান বলেন, “সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়মিত বলা হয়েছে। কিন্তু ৫ অগাস্টের পর থেকে তারা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে।
“৫ অগাস্টের পর ঢাকার সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল না, কোনো ডিসিপ্লিন ছিল না। এই সুযোগে তারা প্রধান সড়কে উঠে এসেছে। এখন সরকার একটা ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা নাই।”
তিনি বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন ‘থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা’ বাস্তবায়ন। গত জুলাই মাসে তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জানানো হয়েছিল নীতিমালাটি চূড়ান্ত হচ্ছে। কিন্তু এরপর আর অগ্রগতি নেই।
“ওই নীতিমালা হলেই কোন গাড়ি চলতে পারবে, কোন গাড়ি পারবে না তা নির্ধারিত হবে। গাড়ির ডিজাইনের আধুনিকায়নও নীতিমালার আলোকে বাস্তবায়ন হতে পারে।”
যাত্রী কল্যাণ সমিতিও এসব রিকশা পুরোপুরি বন্ধের পক্ষে নয়। তারা প্রধান সড়কে এসব তিন চাকার বাহন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। তবে নিয়মের মধ্যে আনলে ব্যাটারির রিকশা যে বড় অংকের রাজস্বের উৎস হতে পারে, সে কথাও সংগঠনটি বলছে।
সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দেশের সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ৪০ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন ও চালকের হাতে নামমাত্র ফিতে লাইসেন্স প্রদান করা গেলে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতে পারে।
পুরনো খবর-
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের দাবিতে পায়ে চালিত রিকশাচালকদের
মহাসড়কে বিপদ মাথায় উল্টোপথে ব্যাটারিচালিত রিকশা
ব্যাটারি রিকশাকে নিয়মের মধ্যে আনতে কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে সমিতির পক্ষ থেকে। সেখানে বলা হয়েছে–
নীতিমালা কতদূর?
ব্যাটারির রিকশাসহ অননুমোদিত তিন চাকার যান নিয়ন্ত্রণে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর ‘থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালার খসড়া তৈরি করা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। তবে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ওই নীতিমালা এখনও অনুমোদন পায়নি।
ওই নীতিমালার খসড়ায় অটোরিকশা, অটো টেম্পো, ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার, স্থানীয়ভাবে তৈরি নছিমন, করিমন, ভটভটি ও আলমসাধুকে থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান বলা হয়েছে।
নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, শুধু উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের স্থানীয় রুটে অনুমোদন নিয়ে ইজিবাইক চলতে পারবে। তবে রুটের কোনো অংশ মহাসড়ক বা আঞ্চলিক মহাসড়কের অংশ হতে পারবে না। রুট নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপজেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটির মতামতের ভিত্তিতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি রুট পারমিট দেবে। বিআরটিসির নির্ধারিত সিলিং অনুযায়ী বিআরটিএ ইজিবাইকের নিবন্ধন দেবে।
পুরনো খবর-
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের আদেশ: ভুগেছে যাত্রীরা, কেউ কেউ খুশি
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের প্রধান সড়কে ইজিবাইক চলতে পারবে না। তবে নীতিমালা জারির পর দুই বছর ছোট রাস্তা বা গলিতে চলতে পারবে। দুই বছর পর ওইসব সড়ক থেকে ইজিবাইক প্রত্যাহার করতে হবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ইজিবাইক নিবন্ধন ও সিলিং নির্ধারণের আগে এ ধরনের বাহনের যাত্রী সুরক্ষা সম্বলিত অনুমোদিত ডিজাইন করতে হবে। এই ডিজাইন যে কোনো সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারিশ সাপেক্ষে বিআরটিএ কর্তৃক টাইপ অনুমোদিত হতে হবে।
সেই নীতিমালা বাস্তবায়ন কতদূর জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আইন অনুবিভাগ) মো. সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নীতিমালাটি চূড়ান্ত হতে গিয়েও সেটি আটকে যায়। এবার তা চূড়ান্ত করতে ফের কাজ শুরু করেছে মন্ত্রণালয়।
“২০২১ সালে কার্যক্রম শুরু হয়ে ২০২৪ সালের নীতিমালা হিসেবে জারি হওয়ার পর্যায়ে মোটামুটি চূড়ান্ত হয়েছিল। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কয়েক দফা মিটিং করে একটা পর্যায়ে এসেছিল। ফাইনালি নীতিমালাটা অনুমোদন হয়নি। এখন আবার নতুন করে চিন্তা চলছে।
“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হবে। আর হয়ত এক-দুইটা মিটিং করে এটা চূড়ান্ত করা হবে।”
পুরনো খবর-