রাত ১২টার পরে ধানমন্ডি-৫ নম্বরের ওই বাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
Published : 06 Feb 2025, 12:38 AM
ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের পাল্টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনার মধ্যেই হাসিনার বাসভবন সুধাসদনেও আগুন দেওয়া হয়েছে।
বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ধানমন্ডি-৫ নম্বরের ওই বাড়িটিতে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
ধানমন্ডি সোসাইটির একজন নিরাপত্তা কর্মী বলেছেন, রাত সাড়ে ১০টা পৌনে ১১টার দিকে কয়েকজন তরুণ এসে সুধাসদনে আগুন লাগিয়ে দেয়।
আগুন লাগানোর পর এর পাশের বাড়িটি থেকে আতঙ্কিত বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসেন। এক ঘণ্টা পরেও আগুন নেভাতে আসেনি ফায়ার সার্ভিস। পটপট শব্দে বাড়ির দরজা জানালা আসবাবপত্র সব জ্বলছিল।
একপর্যায়ে ওপর থেকে আগুনসমেত জানালা ভেঙে নিচে পড়ে। সেখানে আগে থেকেই রাখা আসবাবপত্রে আগুন লেগে গেলে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় আশপাশের নিরাপত্তাকর্মীরা এসে পানির পাইপ দিয়ে নিচতলার আগুন নেভায়।
শেখ হাসিনার স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ডাক নাম ছিল সুধা মিয়া। তার নামেই এ বাড়ির নামকরণ।
সুধাসদনের সামনের ভবনের একটি অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক আমলে শেখ হাসিনা এই বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন এখান থেকেই করেন তিনি। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রীয় বাসভবনে থেকেছেন।
এই বাড়িতে কিছুদিন আওয়ামী লীগের কিছু অফিস ছিল। পরে সেটি তালা মারাই থাকত। বিভিন্ন দিবসে এই বাড়িতে মাঝেমধ্যে এসেছেন শেখ হাসিনা। তার পুরো আমল জুড়ে এ বাড়ির নিরাপত্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচুর সদস্য মোতায়েন থাকতেন।
রাত ৮টার পর ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দিয়েছে ছাত্র-জনতা। বাড়িটি গুঁড়িয়ে দিতে আনা হয়েছে বুলডোজার-ক্রেন।
খুলনা নগরীর ময়লাপোঁতা এলাকায় ‘শেখ বাড়ি’ রাতের বেলায় বুলডোজার দিয়েছে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি।
এ ছাড়া সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
একই সময়ে কুষ্টিয়া শহরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়িও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এমন এক দিনে এসব ঘটনাপ্রবাহ চলছে, যেদিন গণ আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ছয় মাস পূর্ণ হল।
গণআন্দোলনে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জড়িত এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল, হাসিনার বাসভবন সুধাসদন ও তার রাজনৈতিক কার্যালয়েও আগুন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুথ্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হল বুধবার। আওয়ামী লীগ ঘোষণা দেয়, রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা, যিনি ৫ অগাস্টের পর থেকে ভারতে আছেন।
বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে, যাদের নেতৃত্বে গত বছরের জুলাই-অগাস্টের গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছিল।
সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।”
পরে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেইসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, “আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।”
এর আগেই বুধবার বিকেলে আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ইলিয়াস হোসাইন ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেইসবুকে ‘ধানমণ্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন।
একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন এই দুই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। তাতে বলা হয়, “হাজারো ছাত্রজনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র জনতার উদ্যোগে আজ (বুধবার) রাত ৯টায় এই কর্মসূচি পালিত হবে।”