রিট আবেদনে বলা হয়েছে, কে, কিসের ভিত্তিতে ক্ষমা পাচ্ছে তার কোনো নীতিমালা নেই; যা সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
Published : 20 Jan 2025, 03:31 PM
নীতিমালা ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেছেন এক আইনজীবী।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন।
তিনি বলেন, “বছরের পরে বছর রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের ক্ষমা করা হয়েছে।
“এর ফলে, জনমনে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা হয়। ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়। এই ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে নীতিমালা প্রণয়ন করা আবশ্যক।”
রিট আবেদনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পার্লামেন্ট সচিব ও রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে কোনো নীতিমালা ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা কেন অসাংবিধানিক হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগে নীতিমালা করার আবেদন জানানো হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, “সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমা করার ক্ষমতা অবাধ, যার কোনো নীতিমালা নেই। কে, কিসের ভিত্তিতে ক্ষমা পাচ্ছে তার কোনো নীতিমালা নেই; যা সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইতোমধ্যেই এই ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি ক্ষমা পেয়েছে।”
ক্ষমাপ্রাপ্তদের মধ্যে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ভাই শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ, আসলাম ফকিরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ২০১৮ সালের মে মাসে কারাগার থেকে মুক্তি পান জোসেফ।
ফ্রিডম পার্টির নেতা মোস্তফা হত্যা মামলায় ২০০৪ সালে জোসেফকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ঢাকার জজ আদালত। হাই কোর্ট ওই রায় বহাল রাখলেও ২০১৫ সালে আপিল বিভাগ তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
আর ২০১৭ সালের ২৫ গাস্ট মুক্তি পান আসলাম ফকির।
২০০৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সহযোগীদের নিয়ে ওই ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহেদ আলীকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসলাম ফকিরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। হাই কোর্টও এ রায় বহাল রাখে।
২০১৩ সালের ১৯ মে হত্যাকাণ্ডে দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেন আসলাম। ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর ওই আবেদন নাকচ হয়ে গেলে কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ১৩ নভেম্বর তার ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আগের দিন আসলাম ‘অস্বাভাবিক আচরণ’ করলে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত করা হয়, ওই দিনই রাষ্ট্রপতির কাছে দ্বিতীয় দফা প্রাণভিক্ষার আবেদন হয় আসলামের।
পরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পান আসলাম, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তার দণ্ড হ্রাস করে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।