মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনায় ‘মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা’র মতো ‘বিশেষণ’ ব্যবহার না করার দাবি তুলেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘নারীপক্ষ’।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সদস্য কামরুন নাহার বলেন, “আমাদের দাবির যত প্রতিপক্ষই থাকুক, আওয়াজ তোলা অব্যাহত রাখতে হবে; লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”
'নারীর অধিকার ও মুক্তি: প্রত্যাশা এবং করণীয়' শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে আরও কিছু দাবি তুলে ধরেন কামরুন নাহার।
তিনি বলেন, “এত লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে; এই রকম অবমাননাকর বাক্য পরিহার করার দাবি তুলছি।”
নারীপক্ষের আরেক সদস্য রওশন আরা বলেন, “কৃষিজমিতে অনেক নারী কাজ করেন। কিন্তু সেখানে তাদের কোনো অধিকার থাকে না।
“অধিকারের বিষয়টিও আমরা তুলে ধরতে চাই। সম-কাজে সম-মজুরির ব্যাপারটা অনুপস্থিত। এই ব্যাপারটাও সংস্কার করা দরকার।”
রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে আলাদা রাখার দাবি জানিয়ে সংস্থার আরেক সদস্য সাদাফ সাজ সিদ্দিকী বলেন, “আমরা মনে করি, ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যপার এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্ম থাকতে পারে না।“
সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর প্রতি বৈষম্যের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের সংগঠন জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের নারী সমন্বয়কদের সঙ্গে বসেছিল; সেখানে ‘নারী যেন সিদ্ধান্তের সঙ্গে থাকে’ সেই দাবি ছিল তাদের।
“তারা ফিল করছিল তারা সাইলেন্ট হয়ে গেছে। তারাও লড়াই করেছিল, তাদের ইচ্ছা ছিল নারীরা যেন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকে।”
নারীপক্ষের দাবিদাওয়ার বিষয়ে আরেক সদস্য মাহীন সুলতান বলেন, “এগুলো সবার পছন্দ হবে না, সমালোচনা হবে। তাও আমাদের ক্ষমতাটা হচ্ছে আইডিয়া দেওয়া, যুক্তি দেওয়া এবং প্রভাবিত করা।”
নারী পক্ষের দাবিগুলো-
- প্রতি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী তালিকায় এক তৃতীয়াংশ নারী এবং ৬৪টি জেলায় সংরক্ষিত নারী আসন রাখা। নারী স্বার্থ প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার জন্য স্থায়ী জাতীয় নারী কমিশন প্রতিষ্ঠা করা।
- রাজনৈতিক দলের মধ্যে নারীর অংশগ্রহণের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে কমিটিতে অন্তত এক তৃতীয়াংশ নারী সদস্য রাখা। নীতি নির্ধারণী ক্ষেত্রে অন্তত ৪০ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্ত করা।
- পারিবারিক ও জনজীবনে সমঅধিকার নিশ্চিত করতে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন সংস্কার। বাল্যবিবাহ আইন ২০১৭ এর বয়সের বিভেদ দূর করতে বিশেষ বিধান বাতিল।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনাকে আইনে পরিণত করা। নারীর প্রতি মর্যাদাহানিকর ভাষা ব্যবহার বন্ধ করা।
- যৌনকর্মীদের সন্তান এবং হিজরাদের সন্তান দত্তকে একক অভিভাবকত্ব হিসেবে জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করা। পেশা হিসেবে যৌনকর্মকে অপরাধমুক্ত করে স্বীকৃতি দেওয়া। প্রান্তিক নারীদের জাতীয় পরিচয়পত্র নিশ্চিত করা।
- কর্মসংস্থান বাড়ানো, শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২ বাস্তবায়ন করা, বাল্যবিবাহের কারণে ঝরে পরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা চালিতে নিতে সমন্বিতভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা।
- জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ পর্যালোচনা করে হালনাগাদ এবং জাতীয় ঔষুধ নীতি ২০১৬ বাস্তবায়ন করা।
- নারী অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগ ও প্রেরণ সংক্রান্ত আইন হালনাগাদ করাসহ অভিবাসী শ্রমিকদের আইনী অধিকার সহজ ও মানসম্মত করা।
- ধর্ম-বর্ণ গোষ্ঠী নির্বিশেষে উত্তরাধিকার, সম্পত্তি ও জমিতে সন্তানদের সমঅধিকার নিশ্চিত করা।
- কর্মক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধ পানকেন্দ্র, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, নিরাপদ যানবাহন ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো ও তৃণমূল পর্যায়ে কর্মজীবী নারীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা।
- নির্বাচনী ইশতেহারে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত ক্ষতির শিকার নারীদের দাবি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে বাধ্য করা।
- সংবিধানে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার সঙ্গে বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদা নিশ্চিত করা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টি পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা।