পড়াশোনায় ‘উজ্জ্বল’ ছেলেটিকে ভর্তি করা হয় নটরডেম কলেজে। হঠাৎ করেই তার মধ্যে পরিবর্তন দেখেন বাবা। কুলাউড়ায় ‘জঙ্গি আস্তানায়’ ছিল সেও। তবে অভিযান শুরুর আগে আগে বেরিয়ে যায়।
Published : 13 Aug 2023, 07:21 PM
ছেলেটি কেবল পড়ালেখায় নয়, পাঠ্যবহির্ভূত নানা প্রতিযোগিতাতেও পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করত। আজ তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবার। তারা জানতে পেরেছেন, ‘জঙ্গিবাদে’ জড়িয়েছে সে।
সম্ভাবনাময় কিশোরটির বিকাশের সুযোগ করে দিতে পরিবার তাকে ভর্তি করেছিল ঢাকার নটরডেম কলেজে। প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় ভালো ফলাফলও করেছিল। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছিল অনিশ্চিত। এর মাঝে কোথায় কী ঘটে গেল, বুঝতে পারছেন না বাবা।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার সন্দেহভাজন যে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালানো হয়েছে, সেখানে ১৭ বছর বয়সী এ কিশোরের উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে তার পরিবার আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ওই অভিযানে বেশ কয়েকজন আটক হয়েছেন জেনে যশোর থেকে ঢাকায় ছুটে এসে তার আইনজীবী বাবা আইয়ুব খান বাবুল সাংবাদিকদের মাধ্যমে ছেলের উদ্দেশে রেখেছেন আবেগঘন বক্তব্য। জানিয়েছেন ভুল পথ থেকে সরে আসার উদাত্ত আহ্বান।
শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত চলা এই অভিযানের বিষয়ে রোববার ঢাকায় টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-সিটিটিসি যে সংবাদ সম্মেলন করে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন সেই কিশোরের বাবাও।
তিনি জানান, গত ২৮ জুলাই সকালে কাউকে কিছু না বলে একাই বাসা থেকে বের হয়ে যায় তার ছেলে। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিরাজগঞ্জ থেকে সস্ত্রীক নিখোঁজ চিকিৎসক সোহেল তানজিম রানার সঙ্গে নটরডেম কলেজের ওই ছাত্র কুলাউড়ার ওই আস্তানা থেকে বের হয়ে যান সিটিটিসির অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ আগে।
সেই অভিযানে যে ছয় নারী ও চার জন পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন চিকিৎসক রানার স্ত্রী মাইশা ইসলাম হাফসা।
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদেরকে সেই কিশোরের ছবি দেখিয়ে তার অবস্থান নিশ্চিত করা গেছে বলে সিটিটিসি জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়ে ছেলের বিষয়ে বিস্তারিত জানান বাবা আইয়ুব খান বাবুল।
ছেলেকে স্বাভাবিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, “বাবা তুমি যদি অসৎ ব্যক্তি বা সংগঠনের মাধ্যমে ভুল পথে যেয়ে থাক, তুমি ফিরে এসো। তোমার সুন্দর ভবিষ্যত রয়েছে।
“পড়াশোনা নিয়ে পরিবার থেকে আর চাপ দেওয়া হবে না। পরিবারের সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে,” বলেন তিনি।
আইয়ুব খান জানান, তার ছেলে স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দক্ষতার প্রমাণ রাখত।
যশোর জেলা স্কুল থেকে জিপিএ ফাইভ নিয়ে গত বছর নটরডেম কলেজে ভর্তি হয় সে। থাকত কলেজ হোস্টেলেই। প্রথম বর্ষের ফলাফলও ভালো হয়েছিল।
বাবার ভাষ্য, অসুস্থতার কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় মানসিকভবে একটু বিষণ্ন ছিল ছেলেটি।
“পিছিয়ে যাওয়ার বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে কথা ওঠায় সে নিজেকে একটু আড়াল করে রাখত,” বলেন তিনি।
চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় এই কিশোর গাইনোকমাসিয়া নামে এক রোগে আক্রান্ত। তার একটি নাকও সর্বক্ষণ বন্ধ থাকত।
হঠাৎ ছেলের মধ্যে পরিবর্তন দেখার কথা জানিয়ে এই বাবা বলেন, ঈদুল আজহার ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার পর তার মুখে দাঁড়ি দেখেন তারা। তবে সে সময় নিয়মিত নামাজ পড়ত না। এর আগে রোজায় বাসায় গিয়ে হাফ প্যান্ট পরে ঘুরে বেরিয়েছে সে।
“বাড়ি ছাড়ার (২৮ জুলাই) আগে কলেজের বন্ধুদের নিয়ে এলাকায় ঘুরে যাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে একাই চলে যায়। তবে যাওয়ার সময় কোনো টাকা পয়সা নিয়ে যায়নি,” বলেন তার বাবা।