হাসপাতালটির বড় আইসিইউ'র এসি মেরামতে দেরি ও জীবাণুমক্ত করার কাজের জন্য ১২ দিন ধরে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগে অস্ত্রোপচার বন্ধ।
Published : 29 Apr 2023, 07:29 PM
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগে ১২ দিন ধরে অস্ত্রোপচার বন্ধ; নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কারিগরি ত্রুটি সারিয়ে এবং জীবানুমুক্ত করার কাজ শেষে তা চালু হতে সময় লাগবে আরও।
ঈদের ছুটির কারণে এসি মেরামতে দেরি হওয়ায় হাসপাতালের সবচেয়ে বড় আইসিইউটি চালুর কাজ এখনও শেষ হয়নি।
শনিবার দেশের অন্যতম প্রধান হৃদরোগ চিকিৎসার এ হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম মনজুরুল আলম জানিয়েছেন, আগামী মঙ্গলবার নাগাদ তারা অস্ত্রোপচার শুরুর জন্য দিনক্ষণ ঠিক করেছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঈদের আগে গত ১৮ এপ্রিল ওই বিভাগের কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিটে সবশেষ অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর ঈদের ছুটি শুরু হয়। সেই থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র মেরামতের কাজেও যন্ত্রাংশ না পাওয়ার কারণে এগোয়নি। ফলে ৪০ শয্যার আইসিইউটি চালু করা যায়নি। এজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গণপূর্তের গরিমসির কথাই বেশি বলছে।
একই সময়ে আইসিইউ জীবাণুমুক্ত করার কাজের সূচিও রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যে কারণে ঈদের ছুটির পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এ বিভাগে অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনজুরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ১৯ এপ্রিল থেকে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় এসির যন্ত্রাংশ কিনতে পারেনি গণপুর্তের লোকজন। ঈদের জন্য দোকানপাটও বন্ধ ছিল। দোকানপাট খোলার পর গত বৃহস্পতিবার থেকে তারা কাজ শুরু করেছে রোববার তা শেষ হওয়ার কথা।
তিনি বলেন, জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের অস্ত্রোপচার শেষে আইসিইউ ২ এ রাখা হয়েছে। আইসিইউ ১ চালু হবে রোববার।
“রোববার আইসিইউতে কাজ করবে, পরের দিন সরকারি বন্ধ। পরেরদিন ২ তারিখ থেকে ওটি শুরু হবে। আমি এইমাত্র ওটি কল দিয়ে অফিস থেকে বের হলাম।”
অধ্যাপক মনজুরুল জানান, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের আইসিইউ দুটি। আইসিইউ ১ এ শয্যা সংখ্যা ৪০টি, আইসিইউ ২ এ শয্যা ১০টি। অস্ত্রোপচার কক্ষে প্রতিদিন গড়ে ছয়টি অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তাদের রাখা হয় আইসিইউতে।
তিনি বলেন, লম্বা ছুটি ছাড়া হাসপাতালের আইসিইউ জীবানুমুক্ত করা যায় না। এছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মেরামতের জন্য ঈদের আগে রোগীদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারি ছুটির দিনে এ বিভাগে অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকে। আগামী ২ মে থেকে আবার অস্ত্রোপচার শুরুর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ঈদের আগে থেকেই ওই আইসিইউর এসি ঠিকভাবে কাজ করছিল না। যে কারণে ঈদের ছুটির আগেই তা বন্ধ রাখা হয়।
শনিবার হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে আসা নজরুল ইসলামের সঙ্গে। ঈদের আগেই তার হৃদযন্ত্রে কৃত্রিম ভাল্ব বসানোর কথা ছিল। পরে ৩০ এপ্রিল অস্ত্রোপচারের নতুন সময় দেওয়া হয় তাকে। তবে শনিবার অস্ত্রোপচারের তারিখ আরও এক সপ্তাহ পেছানোর কথা জানানো হয়েছে তাকে।
নজরুল বলেন, “ঈদের আগেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বলল ঈদের সময় ডাক্তার পাবেন না। এছাড়া আইসিইউ নষ্ট। কোনো রিস্ক তো নেওয়া যায় না। বলল ওটি খুললে ডাকবে।”
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মেরামতের বিষয়টি ঈদের আগেই গণপূর্ত অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়নি বলে তারা সেটি মেরামত করতে পারেনি।
আরেক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ঈদের ছুটির পরও পাঁচদিন পেরিয়ে গেল। কিন্তু এসি ঠিক করা গেল না। পার্টস নেই, এটা নেই, সেটা নেই- পিডব্লিউডি এসব অজুহাত দেখাচ্ছে। একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি তাদের থাকবে না তা হতে পারে না।”
ঢাকা গণপূর্ত উপবিভাগ ৭ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদ বিন ফরহাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতি গরমে এসি মেরামত করা হয়। এবারও তাই হয়েছে। কিন্তু ঈদের সময় খুচরা যন্ত্রাংশ না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে।
“সার্ভিসিং করতে গেলে কিছু খুচরা যন্ত্রাংশ পাল্টাতে হয়। ক্যাপাসিটর সমস্যা, কোনো একটা সার্কিটের সমস্যা হতে পারে। তবে আমরা গতকাল (শুক্রবার) থেকে আমাদের সব লোক কাজে লাগিয়েছি। আগামীকাল (রোববার) ঠিক হয়ে যাবে।”