রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আত্মজীবনী আসছে বইমেলায়

খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশ হবে ‘হাওরের মানুষ’ আবদুল হামিদের জীবনকথা।

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2023, 02:32 PM
Updated : 26 Jan 2023, 02:32 PM

দুর্গম হাওরের নিভৃত এক পল্লী থেকে উঠে এসে রাজনীতিতে সদর্প বিচরণ ঘটিয়ে রাষ্ট্রের প্রধানের দায়িত্বে আসীন মো. আবদুল হামিদের জীবনকথা আসছে বইয়ের মোড়কে।

এবারের একুশে বইমেলায় আবদুল হামিদের এই আত্মজীবনী আসছে। এটি প্রকাশ করছে বাংলা একাডেমি।

করোনাভাইরাস মহামারীর খাঁড়া কাটিয়ে তিন বছর পর এবার বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে। মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আত্মজীবনীর মোড়ক উন্মোচন করবেন বলে বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে।

রাষ্ট্রপতির আত্মজীবনী প্রকাশের খবর নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু এখনই বলতে চাননি বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগের পরিচালক মো. মোবারক হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতির আত্মজীবনী প্রকাশ করছে বাংলা একাডেমি। এখন বইটির কাজ চলছে। সব কিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর অফিসিয়ালি সব কিছু জানানো হবে।”

তবে একাডেমির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বইটি ছাপার কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। মেলার প্রথম দিনই প্রধানমন্ত্রী বইটির মোড়ক উন্মোচন করার পর বাংলা একাডেমির স্টল থেকে পাঠক বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন।”

তিনি জানান বইটির নাম হচ্ছে ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’। প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী সব্যসাচী হাজরা।

৭৯ বছর পেরিয়ে আসা আবদুল হামিদের ব্যক্তিজীবন, রাজনৈতিক অধ্যায় এবং রাষ্ট্রপতি হওয়ার নানা বিষয় উঠে আসবে বইটিতে। কয়েক খণ্ডে বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলা একাডেমি।

বইটি কয়টি খণ্ডে প্রকাশ হবে- জানতে চাইলে মোবারক হোসেন বলেন, “এবার প্রথম খণ্ড প্রকাশ হচ্ছে। পরে আরও প্রকাশ হবে। তবে কয় খণ্ড হবে, সেটি এখনই বলা যাবে না।”

Also Read: মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদের আগামীর প্রত্যাশা

আবদুল হামিদের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে। হাওরের জল-কাদা গায়ে মেখে বড় হয়ে উঠতে উঠতেই নেন রাজনীতির পাঠ। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তার শুরু। এরপর সক্রিয় হন আওয়ামী লীগে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর আবার সংসদ সদস্য হন। আইনব্যবসা দিয়ে পেশাজীবন শুরু করলেও রাজনীতিতে তা হারিয়ে যায়।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল আবদুল হামিদকে। নানা প্রলোভনেও তখন আদর্শচ্যুত না হয়ে আওয়ামী লীগেই থেকে যান, প্রতিদানে এলাকার মানুষ ভোট দিয়ে তাকে সংসদে পাঠায় বারবার।

দুই দফা স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বঙ্গভবনের বাসিন্দা হন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ওই বছরই ভূষিত হন স্বাধীনতা পদকে।

রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে দায়িত্বে ধরাবাঁধা নিয়মের ছকে থেকেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্বভাবসুলভ হাস্যরসের মধ্যে দিয়ে আবদুল হামিদ পৌঁছে যান মানুষের খুব কাছে।

রাষ্ট্রপতি পদে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর আবদুল হামিদ বিভিন্ন সময়ে ঠাট্টাচ্ছলে বঙ্গভবনকে তুলনা করেন জেলখানার সঙ্গে।

তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক আবদুল হামিদের ভাষায়, “খাঁচার পাখিরে যত ভালো খাবারই দেওয়া হোক না কেন, সে তো আর বনের পাখি না। আমি একটা দায়িত্ব হিসেবে এখানে এসেছি। সংসদে মনের খোরাক পেতাম, বঙ্গভবনে পাই না। ইচ্ছা করলেই অনেক কিছুই করতে পারি না।”

সংবিধান অনুযায়ী, দুই বারের বেশি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করা যায় না।

আবদুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। বঙ্গভবন থেকে বিদায়ের ঠিক আগে প্রকাশ হতে যাচ্ছে তার আত্মজীবনী।

Also Read: রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ১৯ ফেব্রুয়ারি