সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের ওপর অনিচ্ছায় ‘গুলি’ চালানোর ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন পুলিশ সদস্যরা।
Published : 06 Aug 2024, 06:58 PM
সরকার পতনের পর থেকে হামলার মুখে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে ‘কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে’ পুলিশের নন ক্যাডার কর্মকর্তা ও সদস্যদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন।
এছাড়া সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের ওপর অনিচ্ছায় ‘গুলি’ চালানোর ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন পুলিশ সদস্যরা।
মঙ্গলবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কোটা সংস্কারের মত পুলিশের সংস্কারের দাবি তোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের প্যাডে স্বাক্ষরবিহীন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে পাঠানো হয়।
পরে মোবাইল ফোনে কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা নিশ্চিত করেছেন এটি তাদেরই পাঠানো। পুলিশের কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদারা সদস্যরা এই সংগঠনের সদস্য।
ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পুলিশের কোনো সদস্য অন্যায় কররে অবশ্যই তার বিচার হতে হবে। দেশের এই সুসময়ে আমরা আপনাদের কাছে থানা-ফাঁড়ি ও পুলিশি স্থাপনার নিরাপত্তা চাই। পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা চাই। গত সোমবার সারা দেশে ৪৫০ এর বেশি থানা-ফাঁড়ি আক্রান্ত হয়েছে। এগুলো আপনাদের সম্পদ, দেশের সম্পদ। প্রতিটি পুলিশ সদস্যের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মবিরতি ঘোষণা করছি। আমরা বৈষম্যহীণ পুলিশ বাহিনী চাই। পুলিশের সংস্কার চাই।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “নিয়োগের শুরু থেকেই সাব ইন্সপেক্টর বা সার্জেন্টরা তাদের ঊর্ধ্বতনদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের বাহক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হন। বৈধ বা অবৈধ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যেকোন আদেশ পালন করতে বাধ্য হন তারা। তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ যে কোনো আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সরাসরি গুলি করতে না চাইলেও সেটা করতে বাধ্য করা হয় দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য। তারা দেশবাসীর কাছে পুলিশ সদস্যদের ভিলেইনে পরিণত করেছেন।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পুলিশ কোনভাবেই এখন দেশের মানুষের সাথে বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্কে জড়াতে চাই না। পুলিশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে নিরীহ ছাত্রদের ওপর যে অন্যায় করা হয়েছে সেজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।”
জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিলে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলা হয়েছে থানা, পুলিশ বক্সে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা, মোটরসাইকেল ও গাড়ি।
এর মধ্যে গত রোববার সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ জন পুলিশকে বিভৎসভাবে হত্যা করা হয়। আন্দোলনকারীরা সেদিন প্রথমে এনায়েতপুর থানায় আগুন ধরিয়ে দিলে পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে একে একে বের হতে থাকেন। তখন তাদেরকে পিটিয়ে, মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের পর এক পুলিশ সদস্যের গলায় ফাঁস দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখার ছবিও প্রকাশ করা হয়। এবং তিনজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে রাখা হয়। এছাড়া বাড়িকের মরদেহ স্তুপ করে ফেলে রাখা হয়।
একইদিনে যাত্রাবাড়ীতে থানা ঘেরাও করে আন্দোলনকারীরা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে সোমবার ঢাকার পুলিশ সদর দপ্তরে ঢুকে পড়ে কয়েকশ মানুষ। হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে বিভিন্ন কক্ষ। এছাড়াও থানাগুলোও হামলার শিকার হয়।
যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মোহাম্মদপুর, উত্তরা পূর্ব, বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন থানায় হামলা হলে ঢাকার অর্ধশতাধিক থানা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার খবর আসে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পুলিশের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে।