“মার্কেট নির্মাণ করলে গাড়ি পার্কিং নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো নেই বলে সবাই মিলে রাস্তায় রাখে,” বলেন মন্ত্রী।
Published : 10 Feb 2024, 07:53 PM
ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রো রেলের একটি রুট চালু হয়ে যাওয়ায় ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের পক্ষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি একই পরিবারে একাধিক গাড়ির নিবন্ধন বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ঢাকার যানজট: মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ের প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, “কোনো ভবনে ২০টা পরিবার থাকলে সেখানে নিজস্ব গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে। পরিবার প্রতি একটি গাড়ি ব্যবস্থা করতে হবে, দ্বিতীয় গাড়ি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করতে হবে।
“মার্কেট নির্মাণ করলে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো নেই বলে সবাই মিলে রাস্তায় রাখে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।”
ঢাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে যখন কোনো পরিকল্পনাই কাজ করছিল না, সে সময় দুটি প্রকল্প দেখায় ‘ভেলকি’। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর পর এই পথের যানজট কমেছে অনেকটাই। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ এই পথের যন্ত্রণাও কমিয়েছে।
২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার ছয়টি রুটে মেট্রো চালু করার পরিকল্পনা আছে সরকারের। এখন একই সঙ্গে দুটি রুটে কাজ চলছে। আরো একটি রুট অনুমোদন পর্যায়ে আছে।
উত্তরা মতিঝিল রুটে মেট্রো চালুর পর বাকি রুটেও এই ট্রেন যানজট কমিয়ে দেবে বলে আশাবাদী হয়ে উঠছে শহরবাসী।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, “মেট্রোরেল সারাবিশ্বের একটি পরীক্ষিত যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা। আমরা বাংলাদেশের মানুষ বেশি ভাগ্যবান না। অনেক দেরিতে হলে দেশে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিরল সুযোগ আমরা পেয়েছি। এই সুফলটাকে আরো বেশি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু সুবিধা যোগ করতে হবে।”
দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যত বেশি উন্নত হবে, যানজটও তত বাড়বে দাবি করে তিনি বলেন, “মাথাপিছু আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুভমেন্ট বেড়েছে। মানুষ এখন কাপড় কিনতে পারে, তরকারি কিনতে পারে। দূরদূরান্তে বিরল জিনিস পাওয়ার সুযোগ পায়।
“আগে টাকা কম ছিল তাই পায়ে হাঁটত বা সাইকেলে চলাফেরা করতে অথবা ছোট্ট যানবাহনে যেতেন। এখন যেহেতু টাকা আছে, তাই আপনি গাড়ি কিনছেন। গাড়ি যখন কিনবেন তখন রাস্তা তো লাগবে। রাস্তাটা কোথায়?”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “ঢাকায় মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ের প্রভাব ইতিবাচক। তবে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হলে আরো বেশি মানুষ সুবিধা পেত। আমরা দেখছি এক্সপ্রেসওয়ের উপর দিয়ে দ্রুত গাড়ি চলে যাচ্ছে আর নিচে যানজট লেগে আছে। নিচের সড়কে শৃঙ্খলায় নজর দিতে হবে।
“আমরা দেখছি বিমানবন্দর ১০ মিনিটে চলে যাওয়া যাচ্ছে। আবার বিমানবন্দর থেকে অল্প সময়ে ফার্মগেট চলে আসা যাচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে নামার পথগুলোতে যানজট লেগে আছে। যদিও এটি শুরুর তুলনায় কমেছে।”
নগর পরিকল্পনাবিদ আয়েশা সাঈদ বলেন, “মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ফ্লাইওভারের কারণে ঢাকার একাংশে যানজট অনেকটাই কমেছে। আজ আমরা এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেটে পৌঁছাতে পারছি মাত্র ৭-৮ মিনিটে। আরও মেট্রোরেল আসবে। সবগুলো চালু হলে আমাদের জীবনযাত্রা পুরোটাই বদলে যাবে।”
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, “ঢাকার যানজট নিরসনে গণপরিবহনকেও গুরুত্ব দিতে হবে। শহরের রাস্তার যে কোনো একটা লেইন বাসের জন্য নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে।
“সেটা হতে পারে রাস্তার বাম পাশের লেন, যাতে যাত্রী উঠানামায় সুবিধা হয়। অন্য লেনগুলো অন্য গাড়ির জন্য উন্মুক্ত থাকলে। প্রাইভেট বা অন্যান্য গাড়ি ব্যবহারকারীরা যখন দেখবেন মানসম্মত পাবলিক বাসকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, তখন তারা সেদিকেও ঝুঁকবে।”
সেবা খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এই সেমিনারে বক্তব্য রাখেন রাউজেকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম, বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ ও নগর পরিকল্পনাবিদ আয়েশা সাঈদ।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ওবায়দুর মাসুমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এর সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা।