সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে উত্তর সিটির ৪৮টি এবং দক্ষিণের ৪৪টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ‘শতভাগ’ অপসারণ করার কথা বলছেন কর্মকর্তারা।
Published : 17 Jun 2024, 09:24 PM
পশু কোরবানি শেষে রাজধানীকে পরিষ্কার করার কাজে নেমে পাঁচ ঘণ্টায় অধিকাংশ ওয়ার্ড থেকে বর্জ্য অপসারণের দাবি করেছেন দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলছেন, সোমবার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে এ সিটির মোট বর্জ্যের ‘৯০ শতাংশই’ তারা অপসারণ করতে পেরেছেন।
“উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৮টি ওয়ার্ডের শতভাগ বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন হয়েছে। ১০, ১১, ১২, ২১, ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে বর্জ্য অপসারণের কাজ চলমান।”
বেলা ২টায় বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করে ছয় ঘণ্টায়, অর্থাৎ রাত ৮টার মধ্যে এ সিটির শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি নিজে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিদর্শন করছেন।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, এ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৪৪টি ওয়ার্ডের শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ সিটির সব ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণ কাজ শেষ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মেয়র ফজলে নূর তাপস।
বর্জ্য অপসারণে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, কর্মী নিয়োজিত করার পাশাপাশি ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে দুই করপোরেশনই।
কোনো এলাকায় বর্জ্য যথাসময়ে অপসারণ না হলে উত্তর সিটির হট লাইনের নম্বর ১৬১০৬ এবং দক্ষিণ সিটির নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ এবং ০২২২৩৩৮৬০১৪ নম্বরে ফোন করে তথ্য ও অভিযোগ জানতে পারবেন নাগরিকরা।
সোমবার সকালে রাজধানীতে ঈদের নামাজ শেষে পশু কোরবানির তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। বেশিরভাগ জায়গায় বাড়ির সামনে ফাঁকা রাস্তা বা ফুটপাতকেই বেছে নেওয়া হয় কোরবানির জন্য। মাংস কাটাকাটি চলে বাড়ির বেইজমেন্টে।
ঢাকায় কোরবানি করা পশু এবং কোরবানির হাট মিলিয়ে অন্তত ৩৯ হাজার টন বর্জ্য হবে বলে ধরে নিয়েছে দুই সিটি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ১১৫টি ডাম্প ট্রাক, ১৪০টি পিক-আপ, ১২৯টি কমপেক্টরসহ ৫২০টি বিশেষায়িত যান মাঠে আছে।
২৮টি ওয়ার্ডে ডিএনসিসির নিজস্ব ২ হাজার ৩৯৪ জন, ২৬টি ওয়ার্ডে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২ হাজার ৩২৩ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী, ৪ হাজার ২০০ জন ভ্যান সার্ভিস কর্মী এবং ৪২০ জন মিলিয়ে ৯ হাজার ৩৩৭ জন কর্মী এই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
বর্জ্য অপসারণে ৪ হাজার ৯৯৭ জন নিজস্ব ও সাড়ে চার হাজার বেসরকারি কর্মী কাজ করছে বলে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। প্রতিটি ওয়ার্ডে রয়েছেন ৬০ জন করে।
বর্জ্য অপসারণে ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ১৫০টি মিনি ট্রাক, ৪৬টি কম্পেক্টর এবং ৪৭টি পে লোডারসহ ৫৬০টি যান নিয়োজিত করেছে দক্ষিণ সিটি।
ডিএসসিসি এলাকার ১১টি হাটের প্রতিটিতে ৭০ জন করে পরিচ্ছন্ন কর্মী কাজ করছেন। এছাড়া হাটের বর্জ্য অপসারণে ৫৭টি ডাম্প ট্রাক, ১২টি পে লোডার এবং ১১টি টায়ার লোডার কাজ করছে।
দুপুরের পর পর রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, শান্তিনগর, মৌচাক এলাকা ঘুরে বিভিন্ন সড়কে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের রক্ত ধুতে দেখা গেছে।
বড় সড়ক ছাড়াও অলিগলি থেকে পশুর গোবর, জবাই কাজে ব্যবহৃত পাটি, হাটের খড়কুটো, হাড়, ঘাসপাতা ও অন্যান্য বর্জ্য ছোট ছোট ভ্যানে করে সরিয়ে বড় কোনো জায়গায় রাখতে দেখা যায় কর্মীদের। সেখান থেকে সেসব বর্জ্য সিটি করপোরেশনের ট্রাকে তোলা হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আভাস ছিল ঈদের দিন ঢাকার যে কোনো সময়ে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললেও বৃষ্টি হয়নি।
মালিবাগে সড়কে কাজ করা পরিচ্ছন্নতা কর্মী রোকেয়া বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম বৃষ্টি হবে, কিন্তু কপাল মন্দ। এখন কষ্টটা একটু বেশি করতে হচ্ছে। অলিগলি থেকে ছোট ভ্যানে করে আমরা ময়লা নিয়ে আসছি মোড়ে।”
আরেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী কবির বলেন, “আমিসহ ১০ জন গুলবাগ, শান্তিবাগের থেকে ভ্যানে করে এসব ময়লা এনে মালিবাগ মোড়ে নিয়ে আসছি। সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের গাড়িতে ময়লা তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”