বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে ‘স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক’ বলেছে সিআইডি।
Published : 05 Sep 2024, 07:20 PM
দেশের সবচেয়ে বড় আবাসন কোম্পানি বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে দেড় লাখ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল এবং অর্থপাচারের অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে এর কর্ণধার আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি।
বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান হয়।
এতে বসুন্ধরা গ্রুপের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জাল জালিয়াতি, শুল্ক ও ভ্যাট ফাঁকি, আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ পাওয়ার কথা জানানো হয়।
বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের প্রস্তাবিত জমির কিছু অংশ রাজউকের অনুমোদন থাকলেও বেশিরভাগই রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই করা হয় বলেও লিখেছে সিআইডি।
“ক্ষমতা ও অর্থের বলে জনসাধারণের ও সরকারি খাল, বিল, নদী, খাসজমি, পতিত ভূমি, কবরস্থান, বধ্যভূমি ভরাট করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।”
জমি নিজেদের দখলে নিতে বসুন্ধরা গ্রুপ নানা ধরনের প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয় জানিয়ে সিআইডি লিখেছে, “বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সরকারের খাস, নালা, নদীসহ ৮০০ একর (২ হাজার ৪০০ বিঘা) এবং ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ২১৬ একরসহ মোট ১ হাজার ১৬ একর জমি বেআইনিভাবে দখল করার অভিযোগ রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে।”
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন ব্লকে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিজ লিমিটেডের বিপুল পরিমাণ জমি দখলের অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে সিআইডি লিখেছে, “এসব সম্পত্তির মূল্য আনুমানিক মূল্য দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি।”
রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই "বসুন্ধরা রিভারভিউ’ প্রকল্পের জন্য অবৈধভাবে জায়গা দখল ও ভরাটের কাজ করে বিভিন্ন পেশাজীবীর কাছে প্লট বিক্রির মাধ্যমে অগ্রিম এককালীন ও কিস্তির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ থাকার কথাও লেখা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
অর্থপাচারের অভিযোগ
বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে সিআইডি বলছে, বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের বিভিন্ন তফশিলি ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত জামানত না রেখে ‘প্রতারণা ও জালিয়াতির’ আশ্রয় নিয়ে বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকায় কেনা জমি কাঠাপ্রতি ৩ কোটি টাকা দাম দেখিয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছে।
এসব অর্থের বেশিরভাগ দুবাই, সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, লন্ডন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে বলেও সিআইডি লিখেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের সিঙ্গাপুর অফিস দেখাশোনা করছেন শাহ আলমের বড় ছেলে সাদাত সোবহান তানভীর। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে একের পর এক প্রকল্প দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলেও সেসব ঋণ পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বসুন্ধরা ওয়েল অ্যান্ড গ্যাস (কেরানীগঞ্জ, ঢাকা) নামে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘ট্রেড বেসড’ মানিলন্ডারিংয়ের আশ্রয় নিয়ে বিদেশ থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বিটুমিন আমদানির কথা জানিয়ে সিআইডি বলছে, “আমদানিকৃত বিটুমিন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ইচ্ছামত দাম নিয়ন্ত্রণ করে একচেটিয়া ব্যবসার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে।”
‘স্বর্ণ সিন্ডিকেট’
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান তানভীরকে ‘স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক’ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে দেশে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রায়ই স্বর্ণের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলার তথ্য পাওয়া যায়।”